আমেরিকার প্রেসিডেন্সি ও ভূ-রাজনীতি : মাহফুজুল আলম, (লেখক/বৈমানিক),ফ্লোরিডা-যুক্তরাষ্ট্র হতে।
__________________________
সত্যটা স্বীকার করা চাই । ভূ-রাজনীতিতে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কোন ভূমিকা থাকবে না, তা হয় না। দেশের অর্থনীতিতে অস্ত্রের রফতানি, বিশ্ব তেল আহরণ সহ মোড়লগিরি করা একটি বড় বিষয় । এখানে চালমান অবস্থান সমুন্নত রাখতে বিশ্বনেতা হওয়া অবসম্ভাবি । মিস্টার বাইডেনকে এটাই চালিয়ে যেতে হবে। তা না করলে অস্ত্র বানিজ্য কি হুমকির মুখে পড়বে না?
কার্যত কোন কালেই বিশ্বনেতা ছিলেন না ডোনাল ট্রাম্প। তবুও আমেরিকার মত বিশ্ব মোড়লদের রাটনীতি সব সময়ই ঠিক থাকে। “বরগী এলো দেশে” কবিতাটি আমরা ভুলিনি। সারা বিশ্বের মোট সোনা, হিরা, তেল ও গ্যাসের শতকরা মুজুদের ৪০ ভাগেরও বেশি রয়েছে মালদ্বীপে । আর এজন্য আমেরিকা এবছরই মালদ্বীপে স্বায়ী সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের চুক্তি সাক্ষর সম্পন্ন করে ফেলেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে মালদ্বীপ সেটাই করেছে যেভাবে খাল কেটে কুমির আনা হয়। আর ভারত তাতে পূর্ণ সমর্থন দিয়ে খুশিতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছে। ভারতের কান্ড দেখে মনে হয় আমেরিকা যেন ওর তালতো ভাই। আসুন তবে কেন বললাম তা একটু ঘেঁটে আসি।
নরেন্দ্র মোদি কি ভেবে দেখেছেন যে মালদ্বীপ কারো দ্বারা ভবিষ্যত অধিগ্রহণের যাতাকলে পড়লে তার নিজের কি কি হতে পারে? তখন হয়তো বলবে, “বৃটিশদের পা চাটার অভ্যাস করে ফেলেছি ২০০ বছরে। নতুবা কিভাবে বৃটিশ আমলের শেষ সময়ে শিক্ষা ও মোসাহেবগিরিতে আমরা হিন্দুরাই এগিয়ে ছিলাম? পাকিস্তানের সাথে দেশে ভাগের মধ্য দিয়ে হিন্দু রাষ্ট্র গঠনে সফল হয়েছি। ভারত মহাসাগরে আমেরিকান রণতোরী আমাদের সিকিউরিটি জন্য। মালদ্বীপে স্থায়ী সামরিক ঘাটিও আমাদের সিকিউরিটির জন্য। আমি তো স্বর্ণকার!ভবিষ্যতে মালদ্বীপ হতে বরগীদের উত্তলিত সোনা-হীরা পলিশ করে টুপয়সা কামিয়ে নেবো। কারণ ডোনাল ট্রাম্পের পা চাটতে কিংবা পূজো দিতে আমাদের চেয়ে আর কে ভালো জানে?”
হায়রে গর্ধভ! বৃটিশ শাসনের ২০০ বছর এখনি ভুলে গেছিস ? ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কি করতে এসেছিল? ব্যবসা? পরের ২০০ বছরে আমরা কি কি হারিয়েছি, মনে পড়ে না?
যাইহোক, মূল কথায় ফিরে আসি। ভূ-রাজনীতি নিয়ে আরেকদিন বলবো।
মিস্টার বাইডেনকে বিশ্বনেতা হতে হলে পক্ষপাতিত্ব করতেই হবে – অন্তত সারা বিশ্বের নেতা হতে চাইলে। নতুবা এই বিশ্বনেতা শুধুমাত্র সামান্য একজন নেতা হয়েই থাকবেন। তখনি বোঝা যাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যিনিই হউন না কেন তাতে “কত ধানে কত চাল হয়”। নাকি ট্রাম্পের মত যুদ্ধ হতে সরে থাকবেন মিস্টের বাইডেন?
আমার সেটাই ভয় করছে। কারণ যুদ্ধ বাধাও যুদ্ধ বাধাও নীতিমালায় এই সুক্ষ্ম বিষয়টি মাথা চাড়া দেবে না তো? ডেমোক্রেট ক্ষমতায় এলে সেটার যে একেবারেই ভয় নেই তা কিন্তু নয়। পেছনের ইতিহাস কিন্তু সেটাই বলে।
ভয়টা কিন্তু যথোপযুক্ত। বাইডেন এগিয়ে আছেন বলে বরিশালে গরু জবাই করে ভুরি-ভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। আবার ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য ইন্ডিয়ায় পূজো হয়। আরো কত কিছুইনা দেখার (বাকি) আছে। কোন্ লম্ফঝম্ফ কার কাজে আসবে সেটা সময়ই বলে দেবে।
হয়তো বলবেন ট্রাম্প গত চার বছর যুদ্ধে জড়ায়নি। অতএব প্রিয় বাইডেনও যুদ্ধে জড়াবেন না। বিশ্ব জলবায়ুর পেছনে খরচ কেটে দেশের জন্য বরাদ্দ করার সিদ্ধান্তে ট্রাম্পকে শিক্ষা দিতে মিঃ বাইডেন সেটাই আবার বলবদ করবেন। আর তাতে বাংলাদেশ হয়তো পরোক্ষভাবে কিছুটা দানখয়রাত পাবে, যদিবা কখনও আবহাওয়ার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
অন্যদিকে, হতেই পারে বাইডেনের খাতিরে ইমিগ্রেন্টদের দরজা সীমিতকরণে আর সীমানা থাকবে না। ফিরে আসবে আগের জায়গায়।
মেক্সীকোর সীমানা দেয়াল নিয়ে হয়তো আর ঘাটাঘাটি হবে না। কিউবান জনগোষ্ঠীর মত শতভাগ রিপাবলিকানদের একহাত দেখে নেবেন না হয়তো। বরং সবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কাজ করে যাবেন জো। কিন্তু আমেরিকা তো আমেরিকাই। বিশ্ব রাজনীতি বা ভূ-রাজনীতির কি আমূল পরিবর্তন হবে? মোটেও না।
ডোনাল ট্রাম ভালো নাকি খারাপ সেটা কথা নয়। খারাপের পাশাপাশি একজন প্রেসিডেন্ট হিসেবে সে কি একটুও দেশকে ভালোবাসেননি? নতুবা গত চার চারটি বছর দেশের বাজারে তেলের দাম অর্ধেকে নামিয়ে রেখেছিলেন কেন? হ্যাঁ, শুধুমাত্র জনগণের স্বস্তির জন্য। যতবার ডেমোক্রেট সরকার গঠন করেছে এই দিকটাতে তারা কিন্তু নজর দিতে পারেনি। বিষয়টি অবশ্যই মেনে নিতে হবে।
এদিকে কিছু কিছু স্পেনিশ লোকের কাছে জানতে পেরেছি যে “হ্যারিস পামেলা ” অনেক ব্যপারেই সংবেদনশীল। বেশি স্ট্রেট ফর্ওয়ার্ড। বেশি ভালো বলেই অনেকে তাকে পছন্দ করছেন না। কারণ তিনি একসময় বিচারপতি ছিলেন। কিন্তু বাইডেন প্রশাসনে তার একটি নিবিড় অবস্থান জানান দেবার সুযোগ এসেছে। সেই অর্থে এটা অবশ্যই ভালো খবর। শক্ত সমর্থ ব্যক্তি পছন্দের তালিকায় ডোনান্ড ট্রাম এগিয়ে। আর জো বাইডান জেন্টলম্যান এবং বিশ্বনেতা হিসেবে এগিয়ে।
অন্যদিকে ওবামা শাসনের আগে আমেরিকায় ২০ মিলিয়নের বেশি মানুষ হেল্থ ইন্সুরেন্স হতে বঞ্চিত ছিল। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা “ওবামা কেয়ার” নামক স্বাস্থ্যসেবা ইন্সুরেন্স চালু করে সেটা পূরণ করেন। ট্রাম্প এটা ক্যানসেল করবে করবে করেও কিছুই করতে পারিনি। কারণ এই স্বাস্থ্যসেবা শুধুমাত্র ডেমোক্রেট বা রিপাবলিকানদের জন্যই ছিল না বরং আমেরিকার সকল সাধারণ জনগণের জন্য একটি আশির্বাদ হয়ে ধরা দেয়। অতএব পরেরবার ভোটে জিততে হলে মিস্টার ট্রাম্পকে “ওবামা কেয়ার” বাতিল করা হতে বিরত রেখেছিল। যা সাধারণ জনগণের জন্য বিরাট হতাশা হতে মুক্তি দিয়েছে।
আমি বিশ্বাস করি মিস্টার বাইডানকে বিশ্ব নেতা হতে হলে কারো না কারো পক্ষ নিতেই হচ্ছে। তখন ভূ-রাজনীতির কারণে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়া অলৌকিক কিছু নয়। সেজন্য তাকে সতর্ক হতে হবে যদি তাকে সত্যিই আমেরিকার অর্থনীতি চাঙ্গা হবার দিকে বিশেষ নজর দিতে হয়।
বীর বাঙ্গালীর চোখে যত খারাপই লাগুক কিন্তু আটচল্লিশ ভাগ আমেরিকানদের ও মিডিয়ার বিশ্লেষনী চোখে মিথ্যেবাদী কিন্তু হাছা মুক্তিযুদ্ধা লাল্লু মিয়াও ভালো ছিল। কেন? এরই কয়েকটি ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছে। তাই বলি, ভেতো বাঙালী হয়ে চায়ের দোকানে আমাদের টেবিল চাপড়িয়ে কথা বলার আগে দুই যোগ দুই চারবার ভেবে নেবেন।
জো বাইডেন অবশ্যই রেসিস্ট (জাতিভেদী) নন। ডেমোক্রেটের মূলমন্ত্র ওখানেই নিহিত। সেজন্যই ইতিহাসে বার বার উদাহরণ রেখে এবারও একটি নতুন মুখ এলো। যার মা ইন্ডিয়েন এবং বাবা জামাইকান বংশদ্ভুদ। ইনি আমেরিকার ইতিহাসে প্রথম মহিলা ভাইসপ্রেসিডেন্ট। সে কারণেই বলা যায় মুসলিম ব্যান সহ আর কোন জাতিভেদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে না। বিশ্ব নেতার মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। ধর্মবিশ্বাস ও নিরপেক্ষতা ফিরে আসবে। ওবামা কেয়ার আরও শক্তিশালী হবে। বারাক ওবামার পররাষ্ট্রনীতি পুণঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। নতুন প্রভাব পড়বে বিশ্বে। দিক খুঁজে পাবে আমেরিকার পররাষ্ট্র নীতি । বিশ্বে গ্রহণ যোগ্যতায় ডেমোক্রেট সব সময়ই উদারনীতি অনুসরণ করে। কট্টর নয় বলেই প্রসারে ব্যপকতা বেড়ে যায়। আর আমরাও শান্তির জন্য এই বিশ্বকে সুন্দর একটি অধিরাজ্য গ্রহণে বিশেষ আগ্রহী ।
বিডিনিউজ ইউরোপ/৯ নভেম্বর/ বার্তা সম্পাদক