• শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ১০:১২ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি
প্রিয় পাঠক আমাদের সাইটে আপনাকে স্বাগতম এই সাইটি নতুন ভাবে করা হয়েছে। তাই ১৫ই অক্টোবর ২০২০ সাল এর আগের নিউজ গুলো দেখতে ভিজিট করুন : old.bdnewseu24.com

ছোট ছোট সকল দেলকে এক হতে হবে, তাহলে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। –      ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

গোলাম মোস্তফা রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

 
জননেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম এর ৪র্থ মৃত্যু বার্ষিকীতে আলোচনা সভা
গণতন্ত্র ও গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা কোন পথে?
বর্তমান এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ছোট ছোট সকল দেলকে এক হতে হবে, তাহলে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে।
–      ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছেনা। বরং নির্বাচনী ব্যবস্থার একটি স্থায়ী রূপান্তর দরকার। এই কর্মসূচি তৈরি করতে পারলেই মানুষের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ তৈরি হবে, মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে
–      জোনায়েদ সাকি
 
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আজীবন মুক্তিসংগ্রামী,বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সংবিধান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের অন্যতম রূপকার গণসংহতি আন্দোলনের প্রথম নির্বাহী সমন্বয়কারী জননেতা অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম এর ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকী ছিলো গত ২৬ মে ২০২১, বুধবার। এ আজ ২৯ মে ২০২১ তরিখ, শনিবার সকাল ১১টায় ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেজর হায়দার মিলনায়তনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। গণতন্ত্র ও গণমানুষের সরকার প্রতিষ্ঠা কোন পথে শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করবেন দলের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। এ আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখবেন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ও বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওর্য়াকার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রণাঙ্গনের বীরমুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা মোস্তাক আহমেদ এবং গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান রুবেল। আব্দুস সালামের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ ও সভা পরিচালনা করেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জুলহানাইন বাবু। সভায় আবদুস সালামের ওপর নির্মিত একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শীত হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বর্তমান এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে ছোট ছোট সকল দেলকে মিলে এক হতে হবে। তাহলে মানুষের আস্থা ফিরে আসবে। প্রয়োজনে নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখেই এককত্রিত হতে পারেন। তিনি আরো বলেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম রাজনীতির জন্য বা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে জীবন দিয়েছেন। এরকম জীবন দেয়ার জন্য ১০০ কর্মী এগিয়ে আসলে আজকের অবস্থার পরিবর্তন হবে। এই নেতা কর্মীদের দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে একসাথে একটি তহবিল গঠন করতে হবে যেখান থেকে হামলা মামলা, চিকিৎসা ও পরিবারের দায়িত্ব নেয়া যায়। মন্ত্রীর মায়ের মৃত্যুতে মন্ত্রণালয়ের তহবিল ব্যবহার করে সকল জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেয়া একটি দূর্নীতি। এই দূর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা দরকার।
জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতন্ত্র কেবল একটি পদ্ধতিগত ব্যপার নয়। এরমধ্যে জবাবদিহিতার গ্যারান্টি থাকতে হয়। তানাহলে এটা সংখ্যা গড়িষ্ঠের শাসনে রূপন্তরিত হয় যা কখনো ফ্যাসিবদী শাসনও হয়ে উঠতে পারে। সালাম ভাইসহ অরো অনেকে গণতন্ত্রের জবাবদিহিতা নিয়ে কাজ করেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে গণতন্ত্রের লেবাসে ফ্যাসিবাদী শাসন জারি আছে। এখানে যারা ক্ষমতায় যায় তারা সবকিছু নিয়ে নেয়, আর বিরোধী পক্ষের অবস্থা এতো খারাপ হয় যে জীবন নিয়ে টিকে থাকাই কঠিন। এই গণতন্ত্রের লেবাসে ফ্যাসিবাদী শাসন শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসে না সারা দুনিয়াতে এরকম নজির খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গত ১০ বছরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে ক্রস ফায়ারে হত্যা করা হয়েছে, এক হাজারের অধিক মানুষকে আইন শৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে অত্যাচার করা হয়েছে এবং প্রায় ৬০০ মানুষকে গুম করা হয়েছে। এর কোন জবাবদিহিতা নাই। এই জবাবদিহিতাহীন ক্ষমতার উৎস লুকিয়ে আছে আমাদের শাসনতন্ত্রেই। জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করলে ব্যক্তির গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হবেব না। আমাদের সংবিধানের গণতান্ত্রিক রূপান্তর একারনেই এসময়ের প্রধান রাজনৈতিক কর্মসূচি। অ্যাডভোকেট সালামের চিন্তার গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছিলো এই কর্মসূচি। আমরা যখন ২০১০ সালে একিভূত হই, তখনও এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে সামনে নিয়েই আমরা একসাথে কাজ শুরু করেছিলাম।
’৭১ সালে এদেশের মানুষ স্বপ্ন দেখেছিলেন, ’৯০ সালেও স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু ’৯০ সালে ক্ষমতার পরিবর্তন পরিবর্তন হলেও শাসনতন্ত্রের মধ্যে কোন পরিবর্তন আসেনি; বর্তমানে আমরা সামরিক শাসনের চাইতেও খারপ অবস্থায় আছি। ফলে শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য মানুষ উদ্বুদ্ধ হচ্ছেনা। বরং নির্বাচনী ব্যবস্থার একটি স্থায়ী রূপান্তর দরকার। এই কর্মসূচি তৈরি করতে পারলেই মানুষের মধ্যে নতুন করে উৎসাহ তৈরি হবে, মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দিয়ে তাদের অংশে পরিণত করেছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা সুবিধা এবং ভাহ বাটোয়ারা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে তারা নিজেরাই চেষ্টা করছেন এই শাসন টিকিয়ে রাখতে। এভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো দলীকৃত, দূর্নীতিগ্রস্থকরে ফেললে আর অভ্যন্তরীণ শৃংখলা বলে কিছু থাকেনা। তারা নিজেরাই নিজেদের আইন ভাঙতে থাকে। সম্পৃতি পুলিশ বাহিনী এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যকার টেনশন এখন আর গোপন খবর নয়।
মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ছিল, “সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার”। এ অঙ্গীকার থেকে বর্তমান সরকার সরে গেছে। কিন্তু এ অঙ্গিকার রক্ষার জন্য একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান দরকার। বিদ্যামান ক্ষমতাকাঠমোর আমূল সংস্কার দরকার। এটা করতে পারলেই জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হবে। রাজনীতির প্রধান বিষয় হিসেবে সামনে আনতে পারলে মানুষের মধ্যে নতুন স্বপ্ন তৈরি হবে এবং তার ভিত্তিতেই মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন অ্যাডভোকেট আবদুস সালামের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, সালাম ভাই যে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন তার জন্য মানুষের সামনে বিকল্প হাজির করতে হবে। আমরা কি লড়াই করছি মার্কা পরিবর্তনের জন্য? এই সরকার গেলে কারা আসবে? এই প্রসঙ্গ থেকে বের হয়ে এসে নতুন বিকল্প, নতুন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর বিকল্প হাজির করতে হবে। মানুষ কি চায় এরকম দু একটি দাবি আসুন সবাই মিলে ঠিক করি; সেটা নিয়েই আমরা সবাই মিলে একসাথে মাঠে নামি।
তিনি আরো বলেন, এই সরকার চলে গেলে অন্তবর্তী সময়ের জন্য একটি ব্যবস্থা লাগবে। এই ধরণের একটি ব্যবস্থা আমাদের সংবিধানে ছিলো। কিন্তু সেটি তুলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সরকারের অধীনে কোন স্বচ্ছ, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ফলে এই অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থার জন্য একসাথে বা যুগপৎ বা অন্য যেকোন উপায়ে একসাথে লড়াই করতে হবে।
সাইফুল হক বলেন, যাঁরা জীবনের প্রতিটি ক্ষণ রাজনীতি নিয়ে চিন্তা করেন, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম এমনই একজন মানুষ ছিলেন। তিনি বলেন, গত ৫০ বছরে আমরা সবচেয়ে বন্ধ্যা সময় অতিক্রম করছি। বিরোধী দলগুলো এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে। দুর্বল করে রাখার পেছনে সরকারের ভূমিকা আছে। এই দুর্বলতা অতিক্রম করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া আমাদের আর কোন বিকল্প নাই।
তিনি আরো বলেন, একটি গণতান্ত্রিক নির্বানী ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষেই আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারকে আন্দোলনে পরাজিত না করতে পারলে ক্ষমতা অর্জন তো দূরের কথা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়াও সম্ভব নয়। এই সময়ে যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারি আগামী নির্বাচনে বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার আরো বেশি গণবিরোধী রূপ ধরণ করে দুঃশাসন কায়েম করবে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর বলেন, স্বাধীনতার সালাম ভাইয়ের মতো অসংখ্য তরুণ রাজনৈতিক কর্মী বিপ্লব করার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। এই কর্মীদেরকে দমন করা হয়েছে, হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে, কেউ জীবন রক্ষার জন্য বিদেশে পালিয়ে গেছেন আর দেশে ফিরতে পারেননি। অ্যাডভোকেট আবদুস সালামকে স্মরণ করার মাধ্যমে তিনি এই অসংখ্য ত্যাগী রাজনৈতিক কর্মীদেরও স্মরণ করেন।
অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সাংবিধানিক ক্ষমতাকাঠামোকে ব্যবহার করেই বর্তমান সরকার দূর্নীতি দুঃশাসন জারি রেখেছে, লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে। ’৯০ মতো সকল দল একত্রিত হয়ে মাঠে নামলেই গণঅভ্যূত্থান গড়ে উঠবে না। শুধুমাত্র মার্কার পরিবর্তনের জন্য মানুষ কখনো জীবন দেয় না। জীবনের চাইতে স্বপ্নকে বড় হয়ে উঠতে হয়ে। একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের স্বপ্ন মানুষের মধ্য মূর্ত উঠলেই কেবল জীবন দেয়ার অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
 বার্তা প্রেরক
 বাচ্চু ভূঁইয়া
সদস্য, সম্পাদকমন্ডলী
গণসংহতি আন্দোলন

বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/৩০মে/জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ