• শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

তিনশ নির্বাচনী আসনে তিনশ সিনেফ্লেক্সের দাবী- পরিচালক “রাত্রির যাত্রী”

বিডিনিউজ ইউরোপ বিনোদন ডেক্স
আপডেট : রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

যে কারণে তিনশ নির্বাচনী আসনে তিনশ সিনেফ্লেক্সের দাবী- পরিচালক “রাত্রির যাত্রী”

সিনেমার সবচাইতে বড় দুঃসময় চলছে,সিনেমা বা চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত সবাই এটা স্বীকার করবেন। তাহলে কি চলচ্চিত্র শিল্প ইতিহাস হয়ে থাকবে অদূর ভবিষ্যতে? এই প্রশ্নটাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। করোনা মহামারী এসে এই প্রশ্নটাকে আরো বাস্তব করে তুলছে। মানব সভ্যতার ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় কোন মহামারী দুর্যোগ মানব সভ্যতাকে থামিয়ে দিতে পারেনি,করোনা দুর্যোগকেও জয় করবে, এটাই সত্য চিরন্তন। করোনা থিতু হলে সিনেমা কি রমরমিয়ে চলবে? কীভাবে চলবে, যেখানে নব্বই দশকের শুরুতে বাংলাদেশে সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল এক হাজার চারশ পয়ত্রিশটি। দুই দশকে কমতে কমতে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে একশো’র কাছাকাছি (মাঝেমধ্যে নানান উৎসব উপলক্ষ্যে হাটে বাজারে, কালে ভদ্রে ৪০-৫০টি ভাঙ্গাচুরা অস্বাস্থ্যসম্মত সিনেমা হল যুক্ত হয়ে থাকে)। গত দুই দশকে বাংলাদেশের কোথাও নতুন সিনেমা হল নির্মাণ হয়নি। সিনেমা হলেই যদি না থাকে তাহলে দর্শকরা সিনেমা দেখবে কোথায়? হাটে মাঠে ময়দানে নিশ্চয় সিনেমা দেখানো হবে না? সিনেমা বা চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে বাণিজ্যিক দৃষ্টিতে সিনেমা হলের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তা নিয়েই আমার আলোচনা।
১৮৯৫ সালে লুমিয়ের ব্রাদার্স সর্বপ্রথম সিনেমা ধারণাটিকে দর্শকদের সামনে নিয়ে আসেন। সিনেমার সূচনার সেই তারিখটি ছিল ২৮ ডিসেম্বর। এই ঘটনার পর পরেই মাত্র এক দশকের মধ্যেই সিনেমা তার অভিনবত্ত্ব কাটিয়ে উঠে এক বিশাল সার্বজনীন বিনোদন শিল্পে পরিণত হয়। নির্বাক থেকে সবাক, সাদা কালো থেকে রঙিন সিনেমা পাড়ি দিয়েছে অনেকটা পথ। সিনেমার এই পথ চলায় অবিভক্ত ইংরেজ শাসিত ভারতও খুব একটা পিছিয়ে থাকেনি। সিনেমার যাত্রা শুরুর পরের বছর ভারতের দর্শকরা সিনেমার সাথে পরিচিতি লাভ করে। ১৮৯৬ সালে তৎকালীন বোম্বে শহরের ওয়াটসন হোটেলের বিরাট হল ঘরে লুমিয়ের ভাইদের সিনেমা ‘দ্য অ্যারাইভাল অব এ ট্রেন আ্যট দ্যা স্টেশন’ প্রদর্শিত হয়। অবশ্য দর্শকদের অধিকাংশ ছিলেন শাসক ইংরেজ কর্তারা আর মুস্টিমেয় অভিজাত ভারতীয়। ১৮৯৮ সালে কলকাতা পা রাখে সিনেমা দর্শনে। জে স্টিভেনসন এক ইংরেজ স্টার থিয়েটার এ প্রদর্শিত করেন নির্বাক সিনেমা। সারা বিশ্বের এগিয়ে থাকা দেশগুলো নেমে পরেছে সিনেমা নির্মাণে। অবশ্য এর পেছনে প্রেরণা হিসেবে ছিল বাণিজ্যিক মুনাফা অর্জন। বিশাল দর্শকদের মুগ্ধ হয়ে এই অভিনবত্ত্ব ভোগ করার আগ্রহ সিনেমাকে এগিয়ে নিয়ে যায়। পরাধীন ভারতবাসী এই নতুন প্রযুক্তিকে আত্মস্হ করতে লেগে পরে। ঢাকার সন্তান হীরালাল সেন, ভাই মতিলাল সেনকে সাথে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন রয়্যাল বায়োস্কোপ কোম্পানি। এই কোম্পানি তখনকার মঞ্চায়িত নাটকের দৃশ্য, নানা রকম ঘটনাবলী ইত্যাদি নিয়ে প্রায় চল্লিশটির মত সিনেমা তৈরি করে ফেলেন। তিনি ভারতে প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরির কৃতিত্ব পান নি। ১৯০৩ সালে তাদের কাহিনী ভিত্তিক সিনেমা ‘আলিবাবা এন্ড ফর্টি থিভস’ দর্শকদের মনোরঞ্জনে প্রদর্শিত হয়। তার আগে ১৮৯৯ সালে মুম্বাইতে সখারাম ভাতওয়াদেকর নামের এক ভারতীয় স্বল্পদৈর্ঘ্যের দুটি ছবি ‘দ্য রেসলারস’ এবং ‘ম্যান এন্ড মাংকি’ নির্মাণ করেন। সিনেমা বলতে যে ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত সে ধারণায় প্রথম নির্বাক সিনেমা তৈরি হয় ধুনধীরাজ গোবিন্দ ফালকের পরিচালনায় ‘রাজা হরিশ্চন্দ্র’। ছবিটির দৈর্ঘ্য ছিল তিন হাজার সাতশ ফিট। ১৯১৩ সালে এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় সিনেমা শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। মুম্বাইয়ের পর কলকাতায় সিনেমা তৈরি শুরু হয় ১৯১৭ সালে। প্রথম বাংলা নির্বাক সিনেমা ‘সত্যবাদী রাজা হরিশ্চন্দ্র’ সিনেমাটি নির্মাণে এগিয়ে এসেছিল প্রদর্শক ম্যাডানের এলফিনস্টন বায়োস্কোপ কোম্পানি। ওদিকে ভারতে পাঞ্জাবের কেন্দ্র লাহোরে গড়ে ওঠে আরও একটি সিনেমা কেন্দ্র। আব্দুর রশিদ কারদার ১৯৩০ সালে নির্মাণ করেন নির্বাক ছবি ‘হুসনে কি ডাকু’। তিনটি কেন্দ্র মুম্বাই যাকে বলা হয় বলিউড, কলকাতা যাকে টালিউড নামেই সবাই চেনে, আর লাহোর কেন্দ্রিক সিনেমাকে বলা হত ললিউড। ততদিনে ভারতীয় জনগণের এক বিনোদনের জায়গা নিয়ে নিয়েছে সিনেমা। সারা ভারত জুড়েই তৈরি হতে লাগলো একের পর এক সিনেমা হল। তৎকালীন পূর্ব বাংলা সিনেমার কেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু না করলেও সিনেমা হল নির্মাণে পিছিয়ে থাকেনি। মুম্বাই, কলকাতা, লাহোর ও বিশেষ হলে বিদেশী ইংরেজি সিনেমাই দেখানো হতে লাগলো। ১৮৯৮ সালে পাটুয়াটুলি এলাকায় ক্রাউন থিয়েটারে প্রথম সিনেমা প্রদর্শিত হয়। প্রথাগত সিনেমা হল নির্মিত হয় ১৯১৫ সালে। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোল চলছে। লেজার নামের এক ইংরেজ নবাব ইউসুফ খান থেকে জায়গা কিনে আরমানিটোলায় সিনেমা হলটি তৈরি করেন, নাম দেন পিকচার হাউজ। লেজার সেটি পরে বিক্রী করে দেন উদ্ভবজী ঠাকুর নামের এক মারোয়ারি ব্যবসায়ির কাছে। পিকচার হাউজ অনেকটা পরে নাম বদলে হয় শাবিস্তান। একুশ শতকের শুরুতেই হলটি বন্ধ হয়ে যায়। সারা দেশে ব্যবসাটির প্রসার ঘটে, দেশব্যাপী গড়ে উঠে একের পর এক সিনেমা হল। দেশ ভাগ হয়ে আমরা যখন পূর্ব পাকিস্তান তখন আমাদের নিজেদের সিনেমা বানানোর ভাবনা এল অনেকের মাথায়। কল্পনাকে বাস্তব করতে এগিয়ে এলেন আব্দুল জব্বার খান। ফরিদপুরে সংগঠিত এক ডাকাতির কাহিনী নিয়ে তিনি নেমে পরলেন এই বাংলার প্রথম সিনেমা বানাতে। ১৯৫৩ সালে শুরু করে ১৯৫৬ সালে মুক্তি পেলো এই বাংলার প্রথম সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’। সিনেমাটি দর্শকদের মধ্যে বিপুল আগ্রহ সৃষ্টি করেছিল। চৌষট্টি হাজার রুপী ব্যয় হয়েছিল সিনেমাটি নির্মাণে। প্রথম দফাতেই ছবিটি আয় করে ৪৮ হাজার রুপী। সিনেমা আর থেমে থাকেনি এই বাংলায়। পয়ষট্টির যুদ্ধের পর ভারতীয় সিনেমা নিষিদ্ধ হলে লাহোর করাচির সিনেমার সাথে সমান তালে পাল্লা দিয়ে এগিয়েছে এই বাংলার সিনেমা। আজ সেই সিনেমার কী দুর্দশা!

বাংলাদেশের বহু জেলায় এই সময়ে কোনো সিনেমা হল নেই। ভাবা যায়! পর্যটন নগরী কক্সবাবাজারে বিনোদনের জন্য কোনো সিনেমা হল নেই। আগে এই শহরে দুটি সিনেমা হল ছিল। পর্যটনের অপর শহর রাঙামাটির অবস্থাও তাই। আগে এই শহরে তিনটি সিনেমা হল ছিল। ঢাকার পাশে নরসিংদী শহরে ছিল তিনটি সিনেমা হল এখন একটিও চালু নেই। একই অবস্থা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরেও। সেখানে তিনটি সিনেমা হলের সবকটিই বন্ধ। সিনেমা হল নেই নড়াইল, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরেও। একের পর এক বন্ধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন মার্কেট। এজন্যই চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে নতুন ভাবনায় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। বলা হয় মানসম্পন্ন সিনেমা না থাকাতে সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে দর্শকরা তাই এই ধ্বস। মানসম্পন্ন সিনেমা তৈরি হবার সুযোগইতো কমে এসে বিপজ্জনক অবস্হায়, সিনেমা হল নেই। যাও আছে তারও সংষ্কার নেই, নেই আধুনিক বিলাসের সুযোগ সুবিধা। প্রথাগত সিনেমা হলের সংজ্ঞা বদলে গেছে, সিনেমা দেখার প্রচলিত ধারণাও বদলে গিয়ে আজ অন্যরূপ নিয়েছে। সিনেমা দেখা, কেনাকাটা, খাওয়া দাওয়া ইত্যাদি মিলিয়ে প্যাকেজ বিনোদনের সময় এখন। সেজন্যই সিনেপ্লেক্স গড়ে তুলতে সচেষ্ট হতে হবে। দর্শকদের ফিরিয়ে আনতে হবে সিনেমা দেখার জন্য।
নব্বই দশক পর্যন্ত সিনেমা দেখাটা ছিল পারিবারিক বিনোদনের অন্যতম উৎস। অবস্থা বদলে যেতে থাকে আকাশ সংষ্কৃতির উদ্ভব হওয়ায়। এর আগে টেলিভিশনে চ্যানেল বলতে একটিই ছিল। সেটি ছিল বিটিভি। আকাশ সংষ্কৃতি নাগরিক জীবনে বহু চ্যানেল দেখার জানালা খুলে দিল তাও দিবস ও রজনী চব্বিশ ঘন্টা। তার মধ্যে আবার বিদেশি চ্যানেল। নিষিদ্ধ বস্তুুর আকর্ষণের মত সনাতন ধারা নাগরিকদের হুমরি খেয়ে পরতে দেখা গেল টেলিভিশন পর্দায়। তাতে আরও যোগান দিল বাংলা সিনেমার অধোগতি। সে সময় বহু নির্মাতাকে বলতে দেখা গেছে তাদের নির্মিত সিনেমা নিম্নবিত্তরা দেখলেই তারা টিকে যাবে। সেজন্যই হয়তো অশ্লীলতা গ্রাস করতে লাগলো বাংলা সিনেমাকে। মেধা ও মননের চর্চার এই পতন মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করলো বিপুল সংখ্যার মধ্যবিত্তকে। তারা বিনোদনের উৎস হিসেবে আঁকড়ে ধরলো চার দেয়ালি বিনোদনের বাহন টিভিকে। দর্শক কমতে থাকায় লোকসানের বোঝা টানতে টানতে প্রথাগত সিনেমা হলগুলির ঝাঁপ বন্ধ হতে লাগলো। যারা নিভু নিভু হলেও টিকে থাকলো তারা সংষ্কার দর্শকদের সুবিধার কথা বিবেচনায় নিতে পারলো না। সিনেমা দেখার পরিবেশ পৌঁছালো তলানিতে। তাহলে কি আকাশ সংষ্কৃতির বিকাশ সিনেমার এই দুর্দশার জন্য দায়ী? এই প্রশ্নে বিতর্ক চলতে পারে, অনেকেই এই প্রশ্নে সমর্থন জানাতে পারে তবে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বিচার করা হলে দেখা যাবে আকাশ সংষ্কৃতির বিকাশ সিনেমাকে হটাতে পারেনি বরং আকাশ সংষ্কৃতি সহায়ক হয়েছে সিনেমার বাণিজ্যিক বিকাশে। প্রতিবেশী দেশ ভারতের দৃষ্টি ফেললে দেখতে পাব সেদেশে জাতীয় তথা বলিউডি সিনেমার রমরমা অবস্থা। এমনকি আঞ্চলিক সিনেমাও পুঁজি ফেরত পেয়ে মুনাফা করছে। সেদেশে সিনেমার হিট বিচার হচ্ছে প্রথম সপ্তাহে সেল শত কোটির বিচারে। সেদেশে আকাশ সংষ্কৃতির বিকাশে রয়েছে তিনটি মাধ্যম। ক্যাবল টিভি, ডিটিএইচ, আইপি টিভি। রয়েছে আঞ্চলিক, জাতীয়, আন্তর্জাতিক মিলিয়ে সহস্র টিভি চ্যানেল। সেখানে সিনেমার রমরমা। এর প্রধান কারণ সেদেশে সিনেপ্লেক্স এর বিস্তার ঘটেছে জনমানসের মানসিকতাকে লালন করে। সেদেশেও প্রথাগত সিনেমা হল বন্ধ হচ্ছে, এর মধ্যে ঐতিহ্যধারি বহু সিনেমা হলও রয়েছে। সিনেমার নির্মাণ কৌশল, বিষয়ও বদলেছে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। লস্ট ফাউন্ড, অ্যাকশন, এরপর মধুর মিলন এই ফর্মুলা সিনেমা এখন হয়না। সেখানে বায়োপিক এমনকি মঙ্গল অভিযান নিয়ে সিনেমার বিষয় হয়, সেগুলি দর্শকদের আনুকুল্যও লাভ করে। আমাদের এখানে আমরা প্রথার বাইরে গিয়ে টান টান চিত্রনাট্যে সিনেমা নির্মাণ করি দর্শকরা দেখবে কোথায়? আগেই বলেছি বহু জেলা শহরে সিনেমা হলের অস্তিত্বই নেই। যা কটি আছে সে সব হলে না আছে আরামদায়ক আসন ব্যবস্থা, না আছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, না আছে আধুনিক শব্দ ব্যবস্থা,পরিবেশতো কহতব্য নয়। মানসম্পন্ন সিনেমা তৈরি হবে কী করে? কোন প্রযোজক লোকসান দেয়ার জন্য অর্থ লগ্নি করবে না, একারণেই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ধারণা বদলাতে হবে। জেলায়, উপজেলায় গড়ে তুলতে হবে সিনেপ্লেক্স। তাহলেই বাঁচবে বাংলা সিনেমা, তৈরি হবে মানসম্পন্ন দর্শক রুচিকে প্রাধান্য দিয়ে বাংলা সিনেমা। বিনিয়োগ ফেরত পাবার গ্যারান্টি এই ধারণার সাথে জড়িত।

সিনেকমপ্লেক্স তৈরি হলে সেখানে কি বিদেশী সিনেমা দেখানো হবে? বিদেশি আমদানি নির্ভর সিনেমার পৃষ্ঠপোষকতার জন্য এই আন্দোলন নয়। দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে বাঁচাতে, জগৎসভায় আসন নিতে এই সিনেপ্লেক্স ভাবনা। এবার বাংলা সিনেমা কেমন হবে সেদিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। অবশ্যই বাংলা সিনেমা বাংলা সংষ্কৃতি, বাঙালিয়ানা নিয়েই আন্তর্জাতিক হয়ে উঠতে হবে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক হয়ে উঠতে হবে।
প্রত্যাশিত সিনেপ্লেক্স সারা দেশে গড়ে উঠলে সেসব সিনেপ্লেক্সে কি বিদেশি সিনেমা জাঁকিয়ে বসবে? এই আশংকা অনেকেই করেন হালফিলে বাংলা সিনেমার অবস্থা দেখে। আশংকাটি অমূলক নয়। সিনেপ্লেক্সে যারা বিনিয়োগ করবেন তারা নিশ্চয় লোকসানের বোঝা বইবেন না। দর্শক শুন্য সিনেপ্লেক্স উদ্যোক্তারা চাইবেন না। এখানে সচেতন হতে হবে চলচ্চিত্রের সাথে জড়িতদের। মেধাবী মননশীল নির্মাতাদের সুযোগ করে দিতে হবে প্রযোজকদের। শিল্পীদের বেলায় একই কথা। সম্পূর্ণ পেশাদারদের স্বাছন্দে বিচরণের সুযোগ করে দিতে হবে। তাহলেই বাংলা সিনেমা আবার ঘুরে দাঁড়াবে। গল্পে, নির্মাণে, চিত্রনাট্য, সংগীত সকল বিভাগে মেধাবীদের মিলন ঘটলেই সেই সিনেমাটি হয়ে উঠবে দর্শক নন্দিত সিনেমা। কারিগরি প্রযুক্তির দিকেও নজড় দিতে হবে। আধুনিক সর্বশেষ প্রযুক্তি আমদানি, প্রশিক্ষণ আমাদের চলচ্চিত্র শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সেন্সর বোর্ডকেও আধুনিক সংষ্কৃতিমনা নীতি দিয়ে সিনেমার ছাড়পত্র প্রদানকে বিচারে আনতে হবে। সর্বোপরি সরকারের প্রশাসনের হস্তক্ষেপ মুক্ত হতে হবে। সমাজের নানা অসংগতি সিনেমার গল্পে উঠে আসাটা স্বাভাবিক। অপরাধীরা নিজেদের শাসক দলের লেভাস ধরে অপরাধকে জায়েজ করতে। নানাভাবে ম্যানেজ করার প্রতিভাবান তারা। সিনেমায় এসব চিত্র উঠে আসলে রাজনৈতিক দলগুলো সিনেমাটির বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারে। এখানেই সরকার নিরেপেক্ষ অবস্থানে থেকে গণতান্ত্রিক চর্চাকে উৎসাহিত করলে সিনেমার যেমন লাভ তেমনি সমাজ নির্মাণে রাখবে ভূমিকা। তাই বলে অশ্লীলতা, নগ্নতাকে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে। বাঙালিয়ানা নগ্নতা অশ্লীলতাকে স্বীকার করে না। বাংলা সিনেমা আধুনিক হবে, সর্বশেষ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হবে কিন্তু বাঙালিয়ানার মূল চরিত্র ধরে রেখে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে বাঙালিরা, সেই বাজারটিকে ধরতে হবে। তাহলেই বাংলা সিনেমার নতুন দিনের শুরু হবে, বিশ্বব্যাপী বাজবে বাংলা সিনেমার জয় ডংকা।
টেলিভিশন, অনলাইন বাংলা সিনেমার জন্য হুমকি মনে করেন অনেকেই। অনেকে ভাবেন সিনেমা হয়ে যাবে অ্যাপস নির্ভর। আমাজান, নেটফ্লিক্স, হইচই, বায়োস্কোপ এসব হবে সিনেমার প্লাটফর্ম। সিনেমার চরিত্র এই ধারণাকে সমর্থন করে না। বড় পর্দা, প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া একা সিনেমা দেখা সিনেমার আসল স্বাদটিই আসে না। করোনা মহামারীতে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ সেখানে বিকল্প অনলাইনের ভাবনাটা গেঁড়ে বসেছে। কিন্তু এই ব্যবস্থা সাময়িক। করোনা জয় করে মানব সভ্যতা স্বরুপেই অবস্থান নেবে। টেলিভিশন কখনও সিনেমার বিকল্প নয়। বিশ্বের সর্বাধিক সিনেমার নির্মাতা দেশ ভারত। সেখানে টেলিভিশন দর্শক কমাতে ভূমিকা রাখেনি বরং টেলিভিশন ভারতের সিনেমাকে নানা ভাবে সহায়তা করছে। একটি সিনেমার প্রমোশনে টেলিভিশন বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। ট্রেলার, সাক্ষাতকার, সিনেমাটির বিহাইন্ড দ্য সিন, গানের ছায়া দৃশ্য নানা ভাবে দর্শকদের আগ্রহ সৃ‌ষ্টিতে ভূমিকা রাখছে। একটি সদ্য রিলিজ করা সিনেমার টিভি রাইট দেওয়া হয় দুই বছর বয়সী হলেই। ভারতের প্রযোজক গিল্ডের এই সিদ্ধান্ত কঠোর ভাবে পালন করা হয়।
একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা নেয়ার সময় হয়ে গেছে চলচ্চিত্র নিয়ে। একদিকে তিনশত সংসদীয় আসনে তিনশত সিনেপ্লেক্স তৈরি করা অন্যদিকে ভালো সিনেমা তৈরির উদ্যোগ। সরকারের কাছে বিশেষ করে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলচ্চিত্র নিয়ে বিশেষ নজরের প্রত্যাশা রয়েছে চলচ্চিত্র শিল্পের সকলের। তিনি ইতিমধ্যে সিনেমাহল উন্নয়নের জন্য, চলচ্চিত্রের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ নেয়ার তহবিল গঠন করে দিয়েছেন। তাতে আশা জেগেছে আমাদের নেত্রী আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে পথ দেখাবেন। চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর এফডিসি বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া। চলচ্চিত্রের যে কোন সংকটে জননেত্রী হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন এর নজীর রয়েছে অসংখ্য। নানা কারণে ভালো প্রযোজকরা সিনেমা থেকে দূরে সরে গেছেন। সব পক্ষের মধ্যেই সংকট নাড়া দিয়েছে, সব পক্ষই নিজেদের মধ্যে মত বিনিময় করছেন। সবাই একটি ঐক্যমত্য পোষণ করেন যে সিনেমা দেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে, সময়ের ব্যবধানে সিনেপ্লেক্সই হতে পারে পরিবেশ ফিরিয়ে আনার একমাত্র মাধ্যম।
প্রদর্শক সমিতির হিসেবে ষোল কোটি মানুষের দেশে সিনেমা হল সচল রয়েছে মাত্র ৬২টি। দু বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ২৬০টি। দেশের ২৫টি জেলায় এখন সিনেমা হলের অস্তিত্বই নেই। এথেকেই সংকটটির ভয়াবহতা অনুমান করা যায়। চলচ্চিত্রের সাথে জড়িত সকল পক্ষের কাছে আহব্বান রাখতে চাই হাজার মানুষের রুজীর ব্যবস্থা করছে চলচ্চিত্র। এই চলচ্চিত্র শিল্প বন্ধ হয়ে গেলে বেকারত্বের সাথে সাথে বাংলা ও বাঙালি সংষ্কৃতির চর্চার শুন্যতা সৃষ্টি হবে। আসুন সবাইকে নিয়ে চলচ্চিত্র বাঁচানোর পথ খুঁজি, সরকারের কাছে দাবি তুলি নুন্যতম তিনশ সংসদীয় আসনে তিনশ সিনেপ্লেক্স গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে প্রায় কোমায় যাওয়া বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জন্য অক্সিজেন যোগান।
লেখক: হাবিবুল ইসলাম হাবিব, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক
বিডিনিউজ ইউরোপ/৮ নভেম্বর/বার্তা সম্পাদক


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ