ইসলাম হচ্ছে একমাত্র ধর্ম যে ধর্মে নারীর অধিকার সমুন্নত করা হয়েছে।ইসলামি শরীয়তে সম্পত্তিতে মুসলিম নারীর অধিকার নিশ্চিত করা হলেও আজ তারা উত্তরাধিকার থেকে নানা ভাবে বঞ্চিত। এতদসঙ্গে সঠিক জ্ঞান না থাকায় অনেকে ইসলাম নারীকে ঠকিয়েছে মর্মে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়। ইসলামে উত্তরাধিকার আইনে পুরুষদের চেয়ে নারীদের সম্পদের অংশ কম দেয়া হয়েছে। এর পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ বুঝতে না পেরে অনেকে ইসলামি নীতিমালা সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। তাদের ধারণা নারীদের প্রতি ইসলামের আইন হলো বৈষম্যমূলক। পবিত্র কোরআনুল কারীমের বিধান অনুযায়ী সম্পত্তিতে নারীর অধিকার সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন সম্পর্কিত সুস্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে। এরপরেও মহাবিজ্ঞানময় পূর্ণ জীবনবিধান সম্পর্কে না বুঝে অনেকে কটাক্ষ করে থাকেন। সত্য অনুসন্ধিৎসু সুন্দর মনের অবলোকনের জন্য সম্পত্তিতে নারীর যে কোরআনিক অধিকার রয়েছে তা জানা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের সমাজে কোরআনের আইন মোতাবেক নারীরা সম্পত্তি সর্বক্ষেত্রে পাচ্ছে না বিধায় তারা আজ অধিকারহারা, সম্পত্তিহারা ও নির্যাতিতা। এজন্য মানবতার ধর্ম ইসলামকে কটাক্ষ করা মানে এর বিরোধিতা করা ছাড়া আর কিছুই না। আর বর্তমানে নারীর এই বঞ্চনার জন্য প্রকৃতপক্ষে প্রচলিত সমাজব্যবস্থা দায়ী।
ইতিহাস সাক্ষী বিশ্বমানবতার বন্ধু হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই সর্বপ্রথম অধিকারহারা নারী জাতির প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বাস্তব ঘোষণা দেন। প্রতিটি সভ্যতা ও মতবাদ নারীর অধিকার ও স্বাধীনতাকে কুক্ষিগত করে তাকে ব্যক্তিগত সম্পত্তি কিংবা ভোগ্যপণ্যে পরিণত করেছে। আধুনিক বিশ্বও তাকে স্বাধীনতার নামে আপনহারা ও বাঁধনহারা করেছে। তথাকথিত আধুনিকতা ও সমান অধিকারের সভা-স্লোগান দিয়ে নারীকে নিয়ে চলছে মধ্যযুগীয় কালে। একশ্রেণীর লোক নারীদেরকে অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে গড়ে তুলে বিজ্ঞাপনে পরিণত করেছে। তারা লক্ষ লক্ষ নারী ও শিশুর জীবনকে নৈতিক চরিত্রহীনতার স্তরে ঠেলে দিচ্ছে। নারীর মানবিকতাকে তুলে না ধরে শরীরকে তুলে ধরে সমাজে তাদের পণ্য হিসেবে প্রদর্শন করেছে অহরহ। তাদের জঘন্য একটা পোশাকে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের যৌনকর্মী নামে অভিহিত করা হচ্ছে। অথচ ইসলাম বলেছে, ‘তোমারা যিনার কাছেও যেও না এতে ইহকালীন ও পরকালীন শাস্তি অবশ্যম্ভীবী।’ ইসলাম সর্বপ্রথম নারীকে একটি সত্তা হিসেবে এবং তার ব্যক্তিগত অধিকারকে স্বীকৃতি দিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। যখন নারীকে মানুষ হিসেবেই স্বীকার করা হতো না, তখন ইসলাম এসে ঘোষণা করলো, ‘হে মানবজাতি তোমারা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি দু’জন হতে নর-নারী ছড়িয়ে দেন এবং আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমারা একে অপরের নিকট আরজ করো এবং সতর্ক থাক জ্ঞাতি সম্পর্কে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখেন।’ (সূরা নিসা: আয়াত-১)। নারীদেরকে যখন অবরুদ্ধ করে রাখা হতো এবং তাদের পাওনা মোহরানা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হতো, তখন কোরআন ঘোষণা করলো, ‘তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছো তা হতে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখবে না।’ ইসলামের সর্বজনীন মানবাধিকারের ঘোষণার পূর্বে পৃথিবীর কোন জাতিই নারীর কোন কিছুর উপর নিজস্ব অধিকারকে স্বীকার করতো না। ইসলাম এসে নারীজাতির অর্থনৈতিক স্বাধীনতা স্বীকার করেছে। যেমন কোরআনে বলা আছে, ‘পুরুষ যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য এবং নারী যা অর্জন করে তা তার প্রাপ্য।’ ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পুরুষ উভয়েই তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। কোরআন পাকে বলা হয়েছে, ‘নারীদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে যেমন রয়েছে পুরুষদের।’ নারীর সম্পত্তিতে অধিকার নিশ্চিত করে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন বলেন, ‘পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিতক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশি। এ অংশ নির্ধারিত’। (সূরা নিসা: আয়াত-৭)।
ইসলাম একাধারে কন্যা, স্ত্রী, ভগ্নী, মাতা হিসেবে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার নিশ্চিত করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে কোরআন ও হাদিসের সহিহ বুঝ দান করুন। আমীন।
সূত্র দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকা
bdnewseu/23July/ZI/Islamiclife