• শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

“এসো হে বৈশাখ” আসলে কার? ফ্লোরিডা থেকে লেখক মাহ্ফুজুল আলম

বিডিনিউজ ইউরোপ ইন্টারন্যাশনাল ডেক্স
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

“এসো হে বৈশাখ” আসলে কার? ফ্লোরিডা থেকে লেখক মাহ্ফুজুল আলম

আমি ধর্ম বর্জিত বিষয়ের সাফাই কিনবা ধর্ম তান্ত্রিক অতি জ্ঞানের কথা নিয়ে তর্কে যেতে পারছি না। যেথায় আমার নিজেরই ছাপোষা ছাত্র হিসেবে শেখার ঢের বাকি। তবে হাজার কথার ভিড়ে বহু কথা যেমন হারিয়ে যায়, তেমনি সরস কিন্তু ক্ষুদ্রমাত্র যে কোন বক্তব্য বক্তার বলার আগেও ফুরিয়ে যেতে পারে। কারণ বর্তমানে পহেলা বৈশাখ নিয়ে যে এন্টিক ও পাল্টা এন্টিক বা বিক্রিয়া শুরু হয়েছে তার শেষ কবে তা এর প্রবক্তা নিজেও হয়তো জানতেন না- যদিবা তিনি ধরাধামে থাকতেন তবুও।

প্রতিদিনকার সত্যের মত সকালের সূর্য্যের ন্যায়, ভূঁইচাপা ফুলের মতই সুবাস ছড়ায় এমন একটি বিষয়। যা সবার জানা কিন্তু মানা নেই আরও একটিবার জানতে। আরও একটিবার স্মরণ করা যেতেই পারে অন্তত যে নবীনরা হয়তো এ লেখা পড়েই প্রথম জানবেন।

বৈশাখের প্রবক্তার কথা বলছিলাম। যিনি মুঘল সম্রাট আকবর। যিনি উনিশ শত ছাপ্পান্ন সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারীতে সিংহাসনে আসেন। সে সময় দিন হিসেব হতো আরবিতে। আরবি ক্যালেন্ডার চন্দ্র আর বাংলা ক্যালেন্ডার সূর্য হিসেবে গণনা হতো। তবে রূপান্তরের একটি চেষ্টা ছিল। আর তার ধারাবাহিকতার ফসল আজিকার আমাদের উৎসব।
সে সময় প্রজাদের কাছ হতে খাজনা আদায় করা হতো চৈএের শেষে অর্থাৎ কার্তিক-অগ্রাহায়ণের শেষে যখন কৃষকের ফসল কাটা শুরু হয়। তাই খাজনা আদায় বাবত তাদের ভাগে জুটতো মউকুফ কিনবা শাস্তি। সে সময়ে বসতো নতুন ফসল ওঠার আমেজের উৎসব বা মেলা। যা “পূণ্যাহ অনুষ্ঠান” নামে পরিচিতি ছিল।
সময়ের আবর্তে যুগ যুগ ধরে সে ধারার পথটা কখনো উঁচু কখনোবা নিঁচু হয়ে বাংলার লোক সাংস্কৃতিতে ধরা দিয়েছে আমাদের ঐতিহ্যে।

এবার আসছি সে সময়ের মেলা প্রথাটি কি আজ আদৌ আছে? কেন এই বর্তমানের রঙ কিনবা রঙের ঢং? উত্তরটা হচ্ছে, সে প্রথা তো আছেই আরো যোগ হয়ে বহুমাত্রিকতায় রূপ পেয়েছে। যেমন – হালখাতা, বছরের বিভিন্ন সময়ের আড়ং বা মেলা (যা বাংলা ক্যালেন্ডারের সাথে কোন বিষয় ভিত্তিক মিল থাকতেও পারে বা নাও পারে)। এ ছাড়াও বিভিন্ন দিবসের কথা বাদ দেওয়াই ভালো। নতুবা তার বর্ণনা দিতে গেলে এ লেখা শেষ হবে না।

দ্বিতীয় প্রশ্নটা ছিল এত রং ঢং কোথা থেকে এলো? উত্তরটা কি খুব বেশী কঠিন? না, মোটেও না। তখনকার ঐ তথা কথিত রং-ঢং এর জন্য তার যোগান, মাত্রা,জনসংখ্যা, আধুনিকতা,তথ্যের সহজে লভ্যতা, মিডিয়া বা প্রচার সহ যোগাযোগ মাধ্যমটা বর্তমানের ধারের কাছেও ছিল না। তাহলে এটা খুব সহজেই আমরা বুঝলাম যে, তিলটা তাল হতে গিয়ে বর্তমানেরই সম্পূর্ন দায়ভার। সেটা ভালো মন্দ যাই হোক।

আর পাঁচ জনের মতই আমিও চাই এই উৎসব অব্যাহত থাকুক। এবার কথা থেকে যাচ্ছে এই রং ঢং আদৌ আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিয্য বহন করে কিনা? না এবং হ্যাঁ, দু’টি উত্তরই আছে। অর্থ্যাৎ ঢং বা আনন্দের বেলায় সম্রাট আকবরের আচরণ অনুযায়ী আংশিক বেশী করে যাচ্ছি আমরা বাঙ্গালীরা। যেমন – ইলিশ-পান্তা।
এখানে অনেকেই আমার সাথে দ্বিমত হতেই পারেন। কারণ এটা কেবল মাত্র আমার নিজের ইথিক্স, আমার ব্যাক্তিগত মতামত। এতে ভিন্নতা থাকতেই পারে। আমি প্রত্যেকের স্ব স্ব যুক্তির পক্ষে শ্রদ্ধা রেখে বলছি, এমনিতেই ইলিশে বাঙ্গালীরা লোভাতুর। তাই বাজার দামটাও সরস। সেখানে এমন যুৎসই বাঙ্গালীপনার ওযুহাতে ইলিশ মাছ কেন – ওর পরিবর্তে সস্তার তেলাপিয়া স্থলাভিষিক্ত হয়ে গালে কষে চড় লাগালেও আশ্চর্য হবার কিছুই ছিল না।
হাসছেন? আমি হাসছি না তাদের কথা ভেবে, যাদের সে সাধ্যি নেই যে দু’বেলা মুঠো ভাতের পরিবর্তে ইলিশ কেন যে কোন দামি মাছের কথা ভাবতে পারেন। ওরা তো কেবল ছাপোষা মধ্যবিত্তের গৃহকর্তীর পানে না তাকিয়ে ঘাড় গুঁজে ভাবতে পারেন “যদি এক টুকরো ইলিশের লেজ পেতাম তাহলে ছেলে-পুলের জন্য পোটলায় করে নিয়ে যেতাম “। কিন্তু দেখুন এমনই ভাগ্য যে, সতের হাজার টাকায় আটশত গ্রাম ইলিশ ঢাকায় বসে বড়লোকের বড়লোকিতেই আটকে গেছে। মধ্যবিত্ত আর গরিবের যায়গা কোথায়? এর পরিবর্তে “খিঁচুড়ী-শুকনা মরিচ”হলেই ভালো হতো! অন্তত সস্তার চাল আর ডাল মধ্যবিত্ত এবং গরীবের ভাগ্য হতে বাদ যেত না।

এবার আসছি রং টা কি এখনকার মত আগেও ছিল নাকি এটা অনাবাদি? ঠিক তাই! অনাবাদি জমিতে অনাবাদি মস্তিষ্কের মাত্রারিক্তের ফসল। কি কঠিন কিছু বললাম? মোটেও না। একটু ভাবুন। মেলা,আনন্দ, বাজি, বেলুন ইত্যাদি ইত্যাদি অন্যান্য জাতীয় দিবসের মতই কিছুটা রং-রস নিয়ে এগোতেই পারে। কিন্তু মূর্তিমান নানা আঙ্গীকে, নানা পাখি, পশু, দত্য, দানব, ভূত,নাম গন্ধহীন উদ্ভট মুখোশ ইত্যাদি ইত্যাদির আদৌ কোন সাংস্কৃতিক উৎস আমাদের বাঙ্গালীত্বে প্রাচীন প্রসার বা প্রচার আছে কিনা এটাই আমার প্রশ্ন। যদি উত্তর না হয়, তবে রং এবং ঢং টা যদি একটু বুঝে শুনে করি তাতে দোষ কি? যেটা অন্তত আমার মধ্যবিত্ত বা গরীবের হাতের নাগালে থাকতেই পারে। বাঙ্গালী সাংস্কৃতি যদি এই দুই শ্রেনীপেশার মানুষকে বাদ দিয়ে না হয় তবে তাঁদেরকে নিয়ে “খিঁচুড়ী-শুকনা মরিচ” এর মত যে কোন হাতের নাগালে থাকা খাদ্য দিয়ে হতে দোষী কি?

আজ সারাটি জীবনের মত ইলিশের চিকচিকে রূপালী আভাটা চাঁদের মত ঝলসানো রুটি হিসেবেই দেখে যেতে হবে? এটাই কি সেই রং? আর গরম ভাতের পান্তা করে খাওয়া বুঝি তার ঢং? চট করে উত্তর দেবার কথা মোটেও ভাববেন না। উৎসব করুন তাতে আমিও আছি। কিন্তু যে উৎসব কাউকে বাদ দিয়ে হবার নয়, সেখানে কাউকে এড়িয়ে যাচ্ছি নাতো?

তবে “এসো হে বৈশাখ এসো ” কাদের আহবান করে? উচ্চবিত্ত? মধ্যবিত্ত? নাকি নিন্মবিত্ত? এই উত্তরটি কি আমরা এখনও খুঁজে পেয়েছি?
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১৩এপ্রিল/জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ