• শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় হত্যা মামলা; পাঁচ শিক্ষার্থী গ্রেফতার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে দুই মাসের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে যৌথ-বাহিনীর অভিযানে কল্লাকাটা মিজান’সহ ৭ সন্ত্রাসী আটক পূর্ব শত্রুতার জের ধরে দু’জনকে কুপিয়ে জখম, দুই পক্ষের ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি অস্ট্রিয়ায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ অস্ট্রিয়াসহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটি দেশ প্রচণ্ড বৈরী আবহাওয়ার কবলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বছরে লোকসান ৬৬ কোটি টাকা দেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে মার্কিন প্রতি‌নি‌ধিদলের সাথে আলোচনা গ্রিসের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার বন্ধ ঘোষণা গ্রিসের বেশ কিছু অঞ্চলকে আগুনের উচ্চ ঝুঁকি পূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে
বিজ্ঞপ্তি
প্রিয় পাঠক আমাদের সাইটে আপনাকে স্বাগতম এই সাইটি নতুন ভাবে করা হয়েছে। তাই ১৫ই অক্টোবর ২০২০ সাল এর আগের নিউজ গুলো দেখতে ভিজিট করুন : old.bdnewseu24.com

‘অব্যবস্থাপনা দূর করে দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে হবে -জনগণ এটাই চায়’:হাসিব আহমেদ

গোলাম মোস্তফা রাজনৈতিক প্রতিবেদক ঢাকা
আপডেট : বৃহস্পতিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২০

‘অব্যবস্থাপনা দূর করে দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে হবে -জনগণ এটাই চায়’ -হাসিব আহমেদ।

বাংলাদেশের ১৫ টি রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে, পাঁচ লাখ চাষী আখ চাষের সঙ্গে যুক্ত। এ
ছাড়া পরোক্ষভাবে ৫০ লাখ মানুষের জীবিকাও আবর্তিত হচ্ছে আখ চাষকে কেন্দ্র করে। চিনিকল এলাকায় গেলে দেখা যাবে চিনিশিল্পকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামীণ এলাকায় গড়ে উঠেছে রাস্তাঘাট, ব্যাংক, হাট-বাজার। এছাড়াও বিদ্যুৎ অবকাঠামো, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

ঐতিহাসিকভাবে চিনিকলগুলো গড়ে উঠেছে এই আখচাষী ও মিলের মধ্যকার সম্পর্কের ভিত্তিতে। এছাড়া চিনির উপজাত (চিটাগুড়, ছোবড়া ও প্রেসমাড) কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে গড়ে উঠেছে আরও কিছু শিল্প ও কর্মসংস্থান। যেমন কাগজ, অ্যালকোহল, জৈব সার, স্যানিটাইজার ইত্যাদি। আখের ছোবড়া ব্যবহার করে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, তা দিয়ে মাড়াই মৌসুমে চিনিকলগুলো অনায়াসে চলতে পারে। এই চিনিকলগুলো কর্মসংস্থান তৈরির বাইরেও প্রতিবছর সরকারি কোষাগারে এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি কর হিসেবে দিয়েছে। নতুন করে বিনিয়োগ করে, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এগুলোর অর্থনৈতিক অবদান বহুগুণ বৃদ্ধি পেত।
কিন্তু বেসরকারি চিনি উৎপাদন প্রতিষ্ঠান সমূহের সাথে প্রতিযোগিতা, দুর্নীতি-ভুল নীতি এবং অসাধু চক্রের খপ্পরে পরে চিনিকলগুলোতে লোকসানের পাহাড় জমেছে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ২০০২ সালে চিনি আমদানির অনুমতি দেয়ার পর থেকে আরো বিপাকে পড়ে রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো। দেশে উৎপাদিত চিনির তুলনায় আমদানি করা চিনির মূল্য কম হওয়ায় অবিক্রিত থাকছে রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার চিনি। লোকসান গুনতে গুনতে রুগ্ন হয়ে পড়েছে চিনিকলগুলো। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এসব মিলের লোকসানের পরিমাণ ৯৮২ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

আখচাষ ও রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিশিল্প : সংকট কেন?’ শিরোনামে সর্বজনকথা একটি সংখ্যায় মোশাহিদা সুলতানা ও কল্লোল মোস্তফা কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেছেন,”চিনি আমদানি উদারীকরণ, আখের বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনতা, সরবরাহে ঘাটতি, চাষের জমি হ্রাস ও কৃষকের অনীহা, ফলন কম হওয়া, চিনি আহরণের অতি নিম্নহার, ব্যবস্থাপনাগত সংকট, পরিবহনের সংকট, কারখানার প্রসেস লস, টেকনিক্যাল পারফরম্যান্সের সমস্যা, ঋণের সুদ পরিশোধের দায় ও চিনি বিক্রির যথাযথ উদ্যোগের অপ্রতুলতা প্রভৃতি।”

দেশে বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চিনি আমদানি হয়। আর চিনি শিল্প করপোরেশন উৎপাদন করে মাত্র ৬০ হাজার টনের মতো। তারা প্রতি কেজি খোলা চিনি ৬০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনি ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। বেসরকারি চিনিকলগুলোর মিলগেটে কেজিপ্রতি দর ৫৩ টাকার আশপাশে। এতে সরকারি চিনির চাহিদা কমে গেছে।

আমদানিনির্ভরতা বাড়লে গুটিকতক মানুষের স্বার্থ রক্ষা হলেও অধিকাংশ সময়ই ভোক্তার কষ্ট বাড়ে। যে শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধিত্ব সরকার করে, সেই শ্রেণির স্বার্থই ক্ষমতাসীনদের কাছে মুখ্য। ভোক্তার স্বার্থ, জনস্বার্থ অনেকটাই গৌণ। তা নাহলে টানা দশ-বারো বছর ধরে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে দেশীয় চিনিকলগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে, অথচ সরকার নির্বিকার। কোনোভাবেই সরকার চিনি আমদানির মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে না। অথচ আমদানি রফতানির সূত্রই হচ্ছে, দেশের স্বার্থ, ভোক্তার স্বার্থ, উৎপাদকের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে যে কোনো পণ্য আমদানি কিম্বা রফতানি হবে।

প্রয়োজন শেষ হলে আমদানি কিম্বা রফতানি সরকার বন্ধ করবে। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে দেশীয় চিনিকলগুলোর উৎপাদিত চিনি প্রতিযোগিতার মুখে বিপর্যস্ত হলেও সরকার কেন অপরিশোধিত চিনি আমদানির পথ থেকে সরে আসছে না? না আসাই স্বাভাবিক! কারণ একটি শ্রেণি বিভক্ত রাষ্ট্র কাঠামোয় ক্ষমতাসীনরা নিজেদের স্বার্থে ভোক্তার কষ্ট বাড়িয়ে হলেও একচেটিয়া পুঁজির আধিপত্যকেই প্রাধ্যান্য দিবে। আমাদের দেশে হচ্ছেও তাই।

২০০৪ সাল থেকে রিফাইনারগুলো উৎপাদনে আসার আগে নিবন্ধনপত্রে শর্ত রয়েছে, উৎপাদিত পণ্যের ৫০% রপ্তানি করা হবে কিন্তু সে শর্ত মানা হচ্ছে না উপরন্তু অতিরিক্ত ‘র’ সুগার আমাদানি করা হচ্ছে।

কার্যকর হচ্ছে না সরকারি চাহিদা পূরণে দেশিয় পণ্য ব্যবহারে উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনা এমন দাবি করেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।

তৃণমূলে অভিযোগ রয়েছে, শত কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে চিনি বিক্রি করলেও সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবি কেনে না আখের লাল চিনি। যা স্বীকার করে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের কৃষিবিদ আব্দুল ওহাব বলেন, “বারবার অনুরোধের পরও মন গলে নি টিসিবির। সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি বাৎসরিক প্রয়োজনে চিনির বরাদ্দ চায়। তেমনি টিসিবিও বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করলে মিলে অবিক্রিত চিনি বাজারজাত করা যেত। কিন্তু আমরা অনেক সময় টিসিবিকে চিঠি লিখে চিনি কেনার কথা বলেছি কিন্তু তারা আমাদের চিনি নিতে আসে নি”।

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত চিনির বিক্রয়মূল্য চার দফা কমানো হয়েছে কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্মকর্তা কর্মচারীর সদিচ্ছার অভাবে বিক্রি বাড়ানো সম্ভব হয় নি। ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি চিনির দাম ৬০ টাকা, ওই বছরই আরেক দফা কমিয়ে ৫৫ টাকা, ২০১২ সালের ১৯ জুলাই ৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ এ বছর নির্ধারণ করা হয় ৪০ টাকা।

চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল বলেন, “নানমুখি সমস্যা থাকলেও লাগামহীন দুর্নীতির কারণে অবস্থার অবনতি ঘটছে। চিনি উৎপাদন খরচের তিন ভাগের এক ভাগ দাম যুক্ত হয় ঋণের ভার হিসেবে৷ ঋণের এক অংশ চিনি উৎপাদন মূল্যের সাথে যোগ হয় বলে উৎপাদন মূল্য বেড়ে যায়।”
রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি ব্যাংক থেকে গত বছর ১৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করার নজির আমাদের আছে। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত চিনি শিল্প সুদের ভারে নুয়ে পড়েছে।

আখের অভাবে গত বছর চিনি উৎপাদন হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৪১৪ মেট্রিক টন। আখের স্বল্পতার কারণে মিলভেদে বছরে আখমাড়াই কার্যক্রম ৪৭ থেকে ১২৬ দিন পর্যন্ত চলে। আখের যোগান কম থাকায় সারাবছর উৎপাদন সম্ভব হয় না। এছাড়াও চিনিকলগুলোয় সিবিএ নেতাদের অনিয়ম রয়েছে নির্দেশ করে বিএসএফআইসির চেয়ারম্যান সনৎ কুমার সাহা

বলেন, “এখানে সিবিএ নেতাদের খবরদারি রয়েছে। তারা এক মাস কাজ করে তিনমাসের বেতন চান। সারা মাস বসে থাকেন। যেখানে একজন শ্রমিক লাগার কথা সেখানে দশজন শ্রমিক ব্যবহার করে শুধু শুধু।”

“উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ার পেছনে কারণ অনেক। একটি মিলে মাড়াই মৌসুমে যত বেশি দিন আখমাড়াই করে চিনি উৎপাদন হবে, যত উন্নত মানের আখ ব্যবহার করে, যত সিস্টেম লস কমিয়ে যত বেশি আখ থেকে যত বেশি চিনি উৎপাদন করা যাবে, তত চিনির দাম কমবে।” (সর্বজনকথা, ২০১৬)।
আবার বেশি আখ ব্যবহার করলে বেশি উপজাত তৈরি হবে। কিন্তু এর সবকিছুর জন্য প্রথমে প্রয়োজন কৃষককে আখ চাষে উদ্বুদ্ধ করা। এর আগে বিভিন্ন সময়ে সময়মতো আখ সরবরাহ করলেও কৃষকেরা সময়মতো টাকা পান নি। এতে কৃষকেরা নিরুৎসাহিত হয়েছেন। ফলে আখ সরবাবহ কমে যাওয়ায় সারাবছর কল চালু রাখা সম্ভব হয় না। যার কারণে উৎপাদন বন্ধ থেকেও ব্যয় অপরিবর্তনশীল রয়েছে ক্ষেত্রবিশেষ দুর্নীতিতে বেড়েছে।

দেশে চিনির ব্যাপক চাহিদা ও বাজার রয়েছে তারপরও দেশিয় কারখানায় উৎপাদিত শিল্পপণ্যে কেন লোকসান হয়? কী কী কারণে লোকসান হয় সে সবের সমাধান না করে সরকার মিল বন্ধ করে দেয় এবং আমদানি করার পথ বেছে নেয় যা দেশের স্বার্থের পক্ষে কোনো সমাধান নয়। দুর্নীতি, ভুল নীতি, আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতা, অব্যবস্থাপনা দূর করে দেশীয় শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, বিকশিত করতে হবে -এটাই জনগণের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি।

লেখক: হাসিব আহমেদ, সংগঠক মওলানা ভাসানী পাঠাগার, বরিশাল।
বিডিনিউজ ইউরোপ /২৪ ডিসেম্বর / জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ