একটানা ১৪ মাস ধরে করোনায় আক্রান্ত তুরস্কের নাগরিক মোজাফের কেয়াসান
তুরস্কের ঐতিহাসিক নগরী ইস্তাম্বুলের বাসিন্দা
মোজাফের কেয়াসান একজন লিউকোমিয়ায় আক্রান্ত রোগী।তুরস্কের জনপ্রিয় পত্রিকা “দৈনিক সাবাহ” ও “দৈনিক হুরিয়েত”জানিয়েছে,বৈশ্বিক মহামারী করেনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর প্রায় ১৪ মাস ধরে করোনা পজিটিভ তুরস্কের মুজাফফের কেয়াসান (৫৬) নামে এক ব্যক্তি। আক্রান্ত হওয়ার পর ৭৮ বারের পরীক্ষাতেও তার পজিটিভ এসেছে। এ কারণে হাসপাতাল ও বাড়িতে তাঁর বন্দী জীবন কাটছে প্রায়
১৪ মাস ধরে।পত্রিকা সমূহ আরও জানায়, দীর্ঘ সময় ধরে করোনায় আক্রন্ত এই ব্যক্তি একজন লিউকোমিয়ার রোগী। ২০২০ সালের নভেম্বরে তিনি প্রথমবারের মতো করোনায় আক্রান্ত হন। প্রথম দফায় ভাইরাসটি তাঁকে তেমন ভোগায়নি। অল্প কিছুদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফেরেন। পুরোপুরি সেরে উঠতে ইস্তাম্বুলের সার ইয়ার জেলার বাড়িতে স্বেচ্ছা আইসোলেশনে যান মুজাফফের। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয় তাঁর ঘরবন্দী জীবন।লিউকিমিয়া বা লিউকেমিয়া হল, রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর প্রধান লক্ষণ হচ্ছে
শরীরের রক্তকণিকায় শ্বেত রক্তকণিকার অস্বাভাবিক সংখ্যাবৃদ্ধি। রোগটির নামই হয়েছে এর থেকে- লিউক~ অর্থাৎ সাদা, হিমো~ অর্থাৎ রক্ত। রক্তে ভ্রাম্যমাণ এই শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি অপরিণত ও অকার্যকর। রক্ত উৎপাদনকারী অস্থিমজ্জার মধ্যে এদের সংখ্যাধিক্যের ফলে স্থানাভাবে স্বাভাবিক রক্তকণিকা উৎপাদন ব্যাহত হয়। তবে সব লিউকিমিয়াতেই যে শ্বেত কণিকার সংখ্যাধিক্যই দেখা যাবে তা নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে অ্যালিউকিমিয়া অর্থাৎ শ্বেত কণিকার স্বল্পতা বা সাব-লিউকিমিয়া অর্থাৎ প্রায় স্বাভাবিক সংখ্যার শ্বেত কণিকা দেখা যেতে পারে (যেমন “হেয়ারি সেল লিউকিমিয়া” নামের একটি লিউকিমিয়াতে বহুল ভাবে দেখা যায়)। কাজেই সংখ্যা দিয়ে নয়, রক্তকণিকার অস্বাভাবিকতার ফলেই এই রোগ হয়।
বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের
বিশ্বব্যাপী সাধারণত ১৪ দিনপর করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল এলে রোগীকে আইসোলেশনে থাকতে হয় না। কিন্তু এ রকম অসংখ্য সপ্তাহ পার হলেও পরবর্তী পরীক্ষায় মুজাফফের কেয়াসানের নেগেটিভ ফল আসেনি। সব মিলিয়ে ৭৮ বার পরীক্ষা করলেও প্রতিবারই ফল পজিটিভ এসেছে তাঁর। বাধ্য হয়ে ১৪ মাস যাবৎ হাসপাতালে ও বাড়িতে ঘরবন্দী থাকতে হচ্ছে তাঁকে। এর মধ্যে ৯ মাস হাসপাতাল ও ৫ মাস যাবত বাড়িতে আছেন তিনি।
এ পরিস্থিতিতে বিরক্ত হয়ে বন্দীদশা থেকে মুক্তির জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন মুজাফফের। ঘরবন্দী জীবন তাঁকে পরিবারের সদস্যদের থেকেও একরকম বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। ঘরের জানালা দিয়ে নিজের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হতো তাঁকে।
স্থানীয় একটি বার্তা সংস্থা গত শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) মুজাফফেরের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। সাক্ষাৎকারে মুজাফফের বলেন, দীর্ঘদিনেও নেগেটিভ ফলাফল না পাওয়ায় তিনি চিকিৎসকদের কাছে এর সমাধান জানতে চান। চিকিৎসকেরা তখন তাঁকে জানান, লিকিউমিয়ার কারণে শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ভেঙে পড়ায় তিনি প্রতিবারই পজিটিভ হচ্ছেন। মুজাফফের আরও বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর কিছু ওষুধ সেবন শুরু করেন। আর এভাবেই তিনি টিকে আছেন। অনুযোগের সুরে তিনি বলেন, এভাবে টিকে থাকা খুব কঠিন।
প্রথম দিকে মুজাফফেরের স্ত্রীও করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময় পর দুই দফা পরীক্ষায় তাঁর নেগেটিভ ফল আসে। ওই সময়ে স্ত্রী ছাড়াও তাঁর এক ছেলের করোনা হয়। পরে পরীক্ষায় তাঁরও নেগেটিভ ফল আসে। কিন্তু আটকে যান মুজাফফের।
মুজাফফের বলেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম আমি নিজেই ভাইরাসটি বহন করেছি। এ সময় তারা ছাড়া (স্ত্রী-সন্তান) আর কেউ আমার সঙ্গে ছিল না। ভেবেছিলাম, তাদের চেয়ে ভাইরাসটি আমাকে বেশি পেয়ে বসেছে।’ ঠাট্টার ছলে তিনি বলছিলেন, ‘আমার মনের অবস্থা এমন ছিল যে জানালার পাশ দিয়ে কোনো বিড়াল হেঁটে গেলেও মনে হতো সেটি আমাকে আক্রান্ত করতে পারে।’
সুস্থ না হওয়ায় মুজাফফের কায়াসানের জীবন এখনো আটকে আছে চার দেয়ালেই। সেই দুঃখের কথাই বলছিলেন তিনি, ‘প্রিয়জনদের সঙ্গ না পাওয়ার কষ্ট ছাড়া এ মুহূর্তে আমার তেমন সমস্যা নেই। এটা খুবই কঠিন। আমার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য আমি টিকাও নিতে পারছি না।’
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১৬ ফেব্রুয়ারি/জই