প্রখ্যাত কবি,সাহিত্যিক,প্রাবন্ধিক ও দক্ষ কূটনৈতিক সুজন দেবনাথ বহুমাত্রিক একজন জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে দেশে প্রবাসে যথেষ্ট দক্ষতার সফলতা ও মানবিকতার চর্চার উদাহরণ ইতিমধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে আমরা বিডিনিউজ ইউরোপ পরিবার উনার আরো উত্তর উত্তর সফলতা কামনা করছি। উনার আরো একটি চমৎকার কবিতা আপনাদের সকলের জন্য উপস্থাপন করা হলো—
আমি ঘর পোড়া ছাই
এসো আগুন, তোমায় আলো হতে শিখাই
প্রতিটি মানুষই নদী –
একটি ঢেউয়ের পেছনে ছুটছে, জন্মাবধি
ঢেউটিকে আমি বলি কবর, তুমি সমাধি
বেঁচে থাকার প্রয়োজনে প্রতিদিন নিজেকে একটু একটু বেচে ফেলার নামই – চাকরি
মেঘের পা ভারী হলে – মাটিতেই নামে
কফিন যত দামীই হোক, গোরস্থানেই থামে
রাতের কষ্ট পুড়িয়ে পুড়িয়ে জ্বলে সব তারা
সফলতার গল্প হয় না – বিফল মানুষ ছাড়া
পড়ছি কেন? চাকরি চাই, রিসার্চ ফিসার্চ বুঝি না
সাগর এলে পায়ের কাছে, নামবো সবাই লবণ চাষে
মুক্তা-টুক্তা খুঁজি না
একটি অতিথি পাখির কাছে হেরে গেছে রাষ্ট্র, মুছে গেছে সীমানা
পাখিটি দেশে দেশে ঘুরছে ভিসাহীন – পালকেই লিখছে ঠিকানা
সারাদিন হেঁটে হেঁটে ক্লান্ত বাতাস – হঠাৎ দমকা ছুটে যায়
বেঁচে আছি জানানোর জন্যও, মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়াতে হয়
দেয়ালে বাবার ছবি ঝুলছে – হঠাৎ তাকাই
ছবিতে আমার ছেলের বাবা, আমার বাবা নাই
ফুলদানি আর ছাইদানি – দুটোই আসলে কফিন
একটি ফুলের মৃত্যুর জন্য, অন্যটি ধূমপানকারীর
সাগর-নদী সেলফি তোলে, পাহাড়কে বলে না
দূরে ঝরনা একা কাঁদে, কেউ পাত্তাও দেয় না
সফলতার অনেক বন্ধু – অনেক বাবা-মা
ব্যর্থতার কোন মা নেই, কেউ দত্তক নেয় না
তুমি সাত বার শূন্য দিলে, অষ্টম বারে এক লিখে এককোটি বানাই
হারতে শিখি নাই, আমি একটি স্বপ্নের এপিটাফে নতুন স্বপ্ন টানাই
মনখারাপ আমার সিরিয়াল কিলার
প্রতিটি নির্ঘুম রাতে খুন করে আমাকে বারবার
ওকে চলে যেতে বললে, বলে–
সবাই তো আমায় নিয়ে হাঁটে চলে, জামাই-বৌ খেলে
তো, সমস্যাটা কী তোমার!
মনখারাপ আমার সিরিয়াল কিলার
সেই প্রথম দিন থেকে ছাইদানিটি ভেবেই যাচ্ছে –
আজই সিগারেট ফ্যাক্টরির নামে মামলা করবে
মানবতার রঙও দেয়াল খোঁজে
কোনখানে বেশি আলো বোঝে
সব আর্তনাদ সবাইকে ছোঁয় না
অনেক কষ্টই কয়লায় থেমে যায়
হীরা আর হয় না
আচ্ছামতো খাওয়া হলে বিড়াল মুখটা মুছে ফেলে
চারদিকে অনেক বিড়াল, দুই পা – নৈঃশব্দে চলে
সাত রং সমান হবে বলেই, সূর্য নিজেকে পুড়িয়ে আলো দেয়
তবু ওরা শুধু লালের কথাই কয়
ওদের বলে দিও, রক্ত দিয়ে নদী বানালেও, সাগর নীলই রয়
কথা ছিলো, পৃথিবীতে সব মিলে একটা সুখ হবে
তবু সুখ জিরো-সাম, এতো টুকরা – খণ্ড খণ্ড
আমি সুখী হলে, তোমার খুব জ্বলে– যত সব ভণ্ড
নীল সবুজ গোল একটা বল – আচ্ছারকম ভাবে করলে কাটাকুটি
সংবিধান বলে, কাঁটাতারের নাম দেশ, তার দিয়ে মানুষ বেঁধে রাখি
জাতিসংঘ বলছে, সার্বভৌম রাষ্ট্র। কৃষক দেখছে, ঈশ্বরের দেয়া মাটি
আমি দেখি – সাড়ে তিন হাত – আমার জন্য রয়েছে শুধু বাকি
যতোবার দুয়ার খুলি, তোমার সাথে দেখা
বলতে চেয়েও বলি না –
কেউ নেই আমার, তুমিও কি একা?
আমরা ভিসামুক্ত পৃথিবীর কথা ভাবছিলাম – তখনই এলো করোনা
উড়োজাহাজের পাখা কেটে পৃথিবী বললো– সাবধান, হাত ধরোনা
ছুঁয়োনা, ছুঁয়োনা, অশুচিতে ভরা দশদিক
মানুষকে বাঁচাতে মানুষ আজ অমানবিক
আমি করুণ চোখে ভালোবাসার দিকে তাকালাম
ভালোবাসা মুচকি হেসে বললো–
তুমি কি হাতি? হাতে হাতে চাও আহবান
তুমি মানুষ, মনে মনে হোক তোমার টান
এই সুযোগ, নিজেকে চিনে লও
পৃথিবীর প্রথম মানুষের মতো
বিজনে একা একা কথা কও
নদী আমার মা
অন্য কেউ বললে বিশ্বাস করতাম না।
কথাটা আমাকে বলেছে বাংলাদেশ
বিশ্বাস না করে পারছি না।
মুঠোফোনের কার্নিশে, ধার করা এসএমএসে
মিথ্যামিথ্যিই বলুক সে – ভালো থেকো, নতুন বর্ষে
আমি না হয় –
ফোনের স্ক্রিনেই অনায়াসে, পাবো তাকে আমার পাশে
তারপর অর্ফিয়াসের সুরে ভেসে, হারিয়ে যাবো ঐ আকাশে
তবু একবার, শুধু একটিবার বলুক সে –
সেদিন যেমন বলেছিলো – ভালো থেকো, নতুন বর্ষে
সব কথা স্বরতন্ত্রে শব্দ করে না
সব পাখি সব সময় চিনে না নীড়
কিছু কথা লেখা থাকে ভ্রু-পল্লবে
বুঝে নিতে হয় তারে সরিয়ে ভিড়
জুম করতে থাকলে প্রেমের ফ্রেমে
একদনি এসেই যান, ফ্রয়েড সাহেব
আলোর অক্ষমতার যন্ত্রণাকে নাম দিয়েছ ছায়া
আলো কিছু বলেনি
পৃথিবীর জ্বর সীমা ছাড়ালে, সাগর ছাড়বে না
পানি ক্ষমা শিখেনি
মহামারী চলে গেলে, আবার আমরা মানুষ হবো
তোর নিঃশ্বাস ছুঁয়ে নির্ভয়ে একটা হাসি দেবো
এক কাপ চা আবার তিনজনে ভাগ করে খাবো
গলাগলি, কোলাকুলি, গালে গালে গালাগালি
চোখ-সেতু, ঠোঁট-সেতু, হৃদয়ের অলিগলি
কথা দিলাম – এইবার মহামারী চলে গেলে
তোকে অনেক বেশি ভালবাসবো
লকার থেকে মানবতা ফিরিয়ে এনে
দেখিস – সত্যি আবার মানুষ হবো
আবার – মানুষকেই ভালোবাসবো
কাল রাতে তুমি – চাঁদকে যে কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলে –
আমি তোমার হয়ে সেই কথাটি বলছি – তুমি শুনতে পাচ্ছ কি –
মায়ের কোলে মাথা রাখতে আমার খুব ইচ্ছা হয়, কিন্তু
তার মুখের প্রতিটি বলিরেখা আমাকে আসামী করে দেয়,
মায়ের পেটের প্রতিটি দাগ আমাকে ফাঁসির রায় শুনায়।
প্রতিটি স্বামীকে তার নিজের চেয়ে, স্ত্রীই ভালো চিনে।
স্ত্রীই আয়না ধরে, শিথানে-পৈথানে।
ক্ষমতার একটাই প্রতিশব্দ– ভয়
খাঁচা – তোকে দিলাম মেয়ে হবার ভয় – মেয়ে-জন্ম বড় ভালোবাসি,
তুই প্লিজ আমার ভয় নিয়ে থাক, আমি কারাতে ক্লাস শেষ করে আসি
মনের কোন আকার নেই, যে পাত্রে ধরো তার মতো
কোন আয়তনও নেই, ছোট-বড় দুটোই হয়, ইচ্ছেমতো
ভেবেছিলে – কোনদিন এতোটা নিচে নামতে পার?
একবার ইচ্ছা করেই দেখো, তুমি হিমালয়ের চেয়ে বড়
.
// বইঃ হোমার সাগরে হিমালয় // সুজন দেবনাথ
চৈতন্য প্রকাশনী, বইমেলা ২০২২ স্টলঃ স্টল নং ৫৭৬-৫৭৭
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১২ফেব্রুয়ারি/জই