বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীদের আরেকটি দলকে ফেরত পাঠালো জার্মানি
আশ্রয়ের আবেদন বাতিল হওয়া বাংলাদেশি অভিবাসীদের একটি দলকে মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরত পাঠিয়েছে বার্লিন৷ গত আড়াই মাসের মধ্যে এটি এমন দ্বিতীয় ঘটনা৷
তিনটি সূত্র ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে৷ তাদের বহনকারী ফ্লাইটটি মঙ্গলবার রাত দশটা নাগাদ ঢাকায় অবতরণের কথা ছিল৷ ঠিক কতজনকে এই ফ্লাইটে ফেরত পাঠানো হয়েছে তা নিশ্চিত বলতে পারেনি কোনো পক্ষ৷ ঢাকার একটি সূত্র জানিয়েছে দলটিতে ৩০ থেকে ৩৫ জন রয়েছেন৷ তবে তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়া থেকে চারজন ও রোমানিয়া থেকে তিনজন রয়েছেন৷
ঢাকার একটি গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এবং অভিবাসীদের যথাযথভাবে ঢাকায় পৌঁছে দিতে প্রায় একশো জার্মান পুলিশ সদস্য ফ্লাইটটিতে ছিলেন৷
এদিকে আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া ৫০ থেকে ৬০ জন বাংলাদেশিকে সম্প্রতি ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করার কথা জানিয়েছেন বার্লিনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া৷ ইনফোমাইগ্রেন্টসকে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স প্রতিবেদন পাওয়ার পরে আমরা তাদের ট্রাভেল পারমিট ইস্যু করেছি৷ তাদের মধ্যে কতজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে সেই তথ্য আমাদের কাছে নেই৷’’
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এই দলটিকে বাংলাদেশে পৌঁছে দিতে শতাধিক জার্মান নিরাপত্তা কর্মকর্তারও ভিসা ইস্যু করেছিল দূতাবাস৷ তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রত্যেক যাত্রীর সঙ্গে দুইজন বা তিনজন নিরাপত্তাকর্মী উপস্থিত থাকেন৷
ফেরত পাঠানো হয়েছে আগেও এর আগে আশ্রয় আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়া বাংলাদেশিদের আরেকটি দলকে গত অক্টোবরে ফেরত পাঠিয়েছে বার্লিন৷ সেখানে মোট ৩২ জন ছিলেন বলে জানান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া৷
তিনি ইনফোমাইগ্রেন্টসকে বলেন, ‘‘ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) বসবাসের অনুমতি নেই এমন বাংলাদেশিদের দেশে ফেরত পাঠাতে সহায়তা করতে বাংলাদেশ ও ইইউ এর মধ্যে ২০১৭ সালে ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি)’ স্বাক্ষরিত হয়৷ আমরা সেই চুক্তি অনুসরণ না করলে আমাদের উপর ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করতে পারে ইইউ৷’’
অক্টোবরে ইনফোমাইগ্রেন্টসকে রাষ্ট্রদূত জানান, ২০১৭ সাল থেকে তখন পর্যন্ত ৮১৬ জনের জন্য ‘ট্রাভেল ডকুমেন্ট’ ইস্যু করতে বাংলাদেশের প্রতি জার্মানি অনুরোধ জানিয়েছিল৷ তবে তিনি বলেন, ‘‘এদের মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে জার্মানি ছেড়ে চলে গেছেন৷ ফলে জার্মানি এখন আটশ’র বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাচ্ছে এটা বলা ঠিক নয়৷ বর্তমানের সংখ্যাটি অনেক কম৷’’ অনিয়মিত অভিবাসী ফেরাতে ইউরোপের চাপ ইউরোপীয় কমিশন সম্প্রতি বাংলাদেশ, ইরাক ও গাম্বিয়ার নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপের সুপারিশ করেছে, যদি তারা ইউরোপে অবস্থানরত বৈধ বসবাসের অধিকার নেই এমন দেশগুলোর নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে সহায়তা না করে৷
১৫ জুলাই ইউরোপীয় কাউন্সিলের কাছে পাঠানো এই প্রস্তাবে বাংলাদেশ ছাড়াও ইরাক ও গাম্বিয়াকেও যুক্ত করা হয়েছে৷ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৈধ কাগজবিহীন (আনডকুমেন্টেড) অভিবাসীদের ফেরত নেয়ার (রিঅ্যাডমিশন) ব্যাপারে দেশগুলোর সহাযোগিতা আরো জোরদার করতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে তারা৷
বাংলাদেশ সরকার এরকম নিষেধাজ্ঞা এড়াতে দূতাবাসগুলোর প্রতি স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সহায়তার নির্দেশনা দিয়েছে৷ গত মাসে ঢাকার সহায়তায় ১৯ জনকে ফেরত পাঠিয়েছে গ্রিস৷ ২০১৬ সালের পর গ্রিস থেকে প্রথমবারের মতো অনিয়মিত বাংলাদেশি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ঘটনা এটি৷
এই বিষয়ে গ্রিসের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতামূলক সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে বলে দেশটির গণমাধ্যমকে জানান গ্রিক অভিবাসী ও শরণার্থী বিষয়ক মন্ত্রী নোতিস মিতারাচি৷
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/১৮ জানুয়ারি/জই