অস্ট্রিয়ায় খুব শীঘ্রই করোনার সুপার ভাইরাস ওমিক্রোনের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই অস্ট্রিয়ায় ব্যাপক হারে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট B.1.1.529 বা ওমিক্রোন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন দেশের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট রবার্ট নোভোটনি।
অস্ট্রিয়ার শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট রবার্ট নোভোটনি গতকাল সন্ধ্যায় অস্ট্রিয়ার রাস্ট্রায়ত্ব টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ORF এর সংবাদ বিভাগ Zeit im Bild (ZIB) এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আফ্রিকা মহাদেশে আবিষ্কৃত করোনা ভাইরাসের নতুন মিউট্যান্ট বা রূপান্তরিত সুপার ভাইরাস B.1.1.529 খুব শীঘ্রই অর্থাৎ এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই অস্ট্রিয়ায় শনাক্ত ও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন তিনি।
ভাইরোলজিস্ট নরবার্ট নোভোটনি অস্ট্রিয়ায় ওমিক্রোনের সংক্রমণের বিস্তার দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার কারন হিসাবে বলেন,করোনা ভাইরাসের নতুন এই পরিবর্তিত ধরণ বা রূপটি প্রথমে আফ্রিকান দেশ বোতসোয়ানা থেকে দক্ষিণ আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়েছে।তারপর মুহূর্তের মধ্যেই আফ্রিকার আরও একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ এসেছে।
আর বর্তমানে এই করোনার সুপার ভাইরাস খ্যাত এই ওমিক্রোন এখন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে পর্যটকদের দ্বারা ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্য বেলজিয়াম, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও চেক প্রজাতন্ত্রে এই সুপার ভাইরাস ওমিক্রোনের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর বলা হয়েছে।
এদিকে রয়টার্স জানিয়েছে ইসরাইল তার দেশে সুপার ভাইরাস ওমিক্রোনের সংক্রমণ শনাক্তের কথা জানিয়েছে। নোভোটনি আরও বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় এই নতুন আবিষ্কৃত ভাইরাসটিকে অত্যন্ত দ্রুত সংক্রামক হিসাবে দেখেছি যা অতীতের সকল ভাইরাস থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। কাজেই বড় বিপদ সম্পর্কে আপাতত কিছুই বলা যাচ্ছে না, আগামী কয়েক দিন বা সপ্তাহ এর সংক্রমণ বৃদ্ধির ধরণ পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।তবে আমাদের এখন থেকেই সকলকে সচেতন থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা “হু” (WHO)গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় তাদের সদর দফতর থেকে এক বিবৃতিতে আফ্রিকায় নতুন আবিষ্কৃত এই করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট বা পরিবর্তিত রূপ B.1.1.529 কে বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এক নতুন উদ্বেগের কারন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন। হু নতুন আবিষ্কৃত এই করোনার নতুন ভাইরাসটির নাম রেখেছেন “ওমিক্রোন”।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছেন, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রোনের আবিষ্কৃরের ফলে এশিয়া-ইউরোপে অস্থিরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে আবারও সীমান্ত বন্ধ করতে যাচ্ছে এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো। এর প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ইতোমধ্যে এই দেশগুলো ভ্রমণ বিধিনিষেধে কড়াকড়ি আরোপ করেছে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে শুরু হয় করোনা মহামারি। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই মহামারি ছড়িয়ে পড়ে সারাবিশ্বে। সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে।সংক্রমণ কমতে শুরু করায় চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে একে একে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সরতে শুরু করে।গত সপ্তাহে দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয় B.1.1.529 নামে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট।দেশটিতে সংক্রমণ দ্রুত বাড়ার পেছনে দায়ী এই ভ্যারিয়েন্টটি।এটি বহুবার নিজের মধ্যে রূপান্তর ঘটাতে পারে।
নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিস্তারের কারণে ইতোমধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা, নামিবিয়া, বতসোয়ানা, জিম্বাবুয়ে, লিসোথো ও এসওয়াতিনির ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রিয়া,যুক্তরাজ্য সহ ইউরোপের অনেক দেশ।
অন্তত ১৪ দিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেছেন এমন ব্যক্তিদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইতালি।নিষেধাজ্ঞা আরোপের পূর্ব পদক্ষেপ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভাইরাস ভ্যারিয়েন্ট এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে জার্মানির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লিয়েন জানিয়েছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা ব্যক্তিদের করোনা শনাক্ত পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে ভারত।দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আসা যাত্রীদের প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপের ঘোষণা দিয়েছে সিঙ্গাপুর।দক্ষিণ আফ্রিকা ও আফ্রিকা অঞ্চলের পাঁচটি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের জাপানে প্রবেশের ব্যাপারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে টোকিও।
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/৩০ নভেম্বর/জই