• মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
সিরিয়ার দীর্ঘ ৫৪ বছরের পতন আসাদের পলায়ন ভোলার স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান “পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার” সনদপত্র অর্জন ভিয়েনা বিশ্বের মানুষের বাসযোগ্য শ্রেষ্ঠ শহর থেকে একধাপ সরে এলো মারাত্মক বন্যার কবলে মালয়েশিয়া মধ্যপ্রাচ্যে অস্ট্রিয়ার মানবিক সহায়তা সাড়ে সাত মিলিয়ন ইউরো জার্মানির অভিবাসন নীতি বদলে ফেলার বিপক্ষে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস অভ্যুত্থান পরবর্তী লুটপাট বন্ধ হওয়ায় ভারত বাংলাদেশে আগ্রাসন চালাতে চায়:রিজভী ভোলার বীর সন্তান শহীদ শাকিল কে স্মরণীয় রাখতে ডিসি কে স্মারকলিপি প্রদান দেশকে তপ্ত শ্মশানে পরিণত করতে চাই:জামায়াত ঝালকাঠি তে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্যাবের মানববন্ধন

ইউরোপ যাত্রায় মৃত্যু: বাবার কবরের পাশে চিরশায়িত ইমরান, কয়েছের নিথর দেহ হাসপাতালে

মতিউর রহমান মুন্না, (গ্রিস ) এথেন্স
আপডেট : Selasa, ৫ Oktober, ২০২১

ইউরোপ যাত্রায় মৃত্যু: বাবার কবরের পাশে চিরশায়িত ইমরান, কয়েছের নিথর দেহ হাসপাতালে

তুরস্ক থেকে অবৈধপথে ইউরোপের দেশ গ্রিসে যাওয়ার পথে অতিরিক্ত গরমে (হিট স্ট্রোক) মারা যাওয়া ইমরান আহমেদ চৌধুরীকে সিলেটের গ্রামের বাড়িতে তার বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়েছে। বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সহযোগিতায় আইনি জটিলতা কাটিয়ে দীর্ঘ দুই মাস পর সম্প্রতি ইমরানের মরদেহ দেশে পাঠায় এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস।

ইমরান আহমদ চৌধুরী এবাদ সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের দক্ষিণবাঘা গ্রামের মৃত ইকবাল আহমদ চৌধুরীর ছেলে। তিনি রেইনবো গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ‘জাস্ট অর্ডারে’র পরিচালক ছিলেন।

এদিকে সম্প্রতি তুরস্ক থেকে অবৈধপথে গ্রিস যাওয়ার পথে ‘সন্ত্রাসীদের আঘাতে’ আহত কয়েছ আলী নামের এক বাংলাদেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার মরদেহও দেশে পাঠানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস ও দূতাবাস।

জানা গেছে, উন্নত জীবনের আশায় ইউরোপে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রায় দুই বছর আগে দেশ ছাড়েন ব্যবসায়ী ইমরান আহমদ। প্রথমে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে পরে অবৈধপথে সাগরপথে পাড়ি জমান ইরানে। সেখানে কিছুদিন থাকার পর ইউরোপে প্রবেশের উদ্দেশ্যে চলে যান তুরস্ক। গত ১৮ জুলাই তুরস্ক থেকে গ্রিসের পথে রওয়ানা হন। এরপর থেকেই কোনো খোঁজ মিলছিলো না ইমরানের।

পরে জানা যায়, গ্রিসের দক্ষিণে মেসিডোনিয়ার কাছাকাছি শহর আলেকজান্দ্রোপলি এভ্র এলাকায় মহাসড়কের কাছাকাছি একটি রাস্তা দিয়ে তুরস্ক থেকে পায়ে হেঁটে গ্রিসে প্রবেশকালে ‘হিট স্ট্রোকে’ মারা যান ইমরান আহমেদ চৌধুরী।

তখন তার সঙ্গে কোনো পরিচয়পত্র না থাকায় গ্রিসের পুলিশ অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে মরদেহটি মর্গে রেখে দেয়। দীর্ঘদিন পরিবার তার কোনো খোঁজ না পেয়ে পাসপোর্টের কপি ও ছবি পাঠায় গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে। দূতাবাসের সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজাখুঁজি করার এক পর্যায়ে স্থানীয় একটি হাসপাতালের মর্গে ইমরানের মরদেহের সন্ধান পান।

দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিস ও সিলেট জেলা সংগঠন ইন গ্রিসের সার্বিক সহযোগিতায় ইমরানের মরদেহ গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে পাঠানো হয়।

দেশে আনার পর সকালে সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসা মাঠে সর্বস্তরের জনতার উপস্থিতিতে ইমরানের জানাজা সম্পন্ন হয় এবং জানাজা শেষে হযরত শাহজালাল (র.) গোরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

আর কয়েছ মিয়া ছিলেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার হলদিকান্দি গ্রামের আহমদ আলীর ছেলে। প্রায় ১০ মাস আগে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ইরানে পাড়ি জমান মা-বাবার একমাত্র সন্তান ৩০ বছর বয়সী কয়েছ মিয়া।

সেখানে কিছুদিন থাকার পর ইউরোপের দেশে প্রবেশের উদ্দেশ্যে চলে যান তুরস্ক। এরপর চলতি মাসের শুরুর দিকে তুরস্ক থেকে গ্রিসের পথে রওয়ানা করেন কয়েছ।

পরিবারের লোকজন জানান, গ্রিসে অনুপ্রবেশকালে ‘সন্ত্রাসীদের কবলে পড়েন কয়েছ’। তখন তিনি সন্ত্রাসীদের আঘাতে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে গ্রিসের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে প্রায় একমাস চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কয়েছ। এখন সেই হাসপাতালেই আছে তার মরদেহ।

কয়েছের মরদেহ দেশে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের মাধ্যমে সম্প্রতি গ্রিসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন পাঠায় তার পরিবার।

এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) বিশ্বজিত কুমার পাল বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে গ্রিস দূতাবাস সবসময় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতার জন্য সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে।

সাম্প্রতিক সময়ে সিলেটের এবাদ ও কয়েছের মৃত্যুতে আতংক বিরাজ করছে তুরস্ক থেকে গ্রিসে অনুপ্রবেশে ইচ্ছুক অভিবাসন প্রত্যাশীদের মাঝে।
মোহাম্মদ আলী নামের এক তরুণের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। মোহাম্মদ আলী তুরস্ক থেকে গ্রিসে প্রবেশ করতে চান। টাকাও জমা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তুরস্ক থেকে গ্রিসে যেতে চাই, ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা জমা করেছি। বর্তমানে দালালের ঘরে আছি। সম্প্রতি তুরস্ক থেকে গ্রিসে প্রবেশকালে দুজনের মৃত্যুর খবরে আতংকে আছি। পরিবারের লোকজনও চিন্তায় আছে। এমনকি আমার সাথের বেশ কয়েকজন বর্তমানে রাস্তায় আছে তাদেরও খোঁজ মিলছেনা।’

অপরদিকে- সিলেটের ইমরামের লাশ গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরলে ওইদিন সকালে সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সর্বস্থরের মানুষের উপস্থিতিতে নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাযা শেষে হযরত শাহজালাল (র:) কবরস্থানে দাফন করা হয়।
লাশ দাফনের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিহতের ছোট ভাই সাংবাদিক সলমান আহদে চৌধুরী একটি হৃদয়বিদারক স্ট্যাটাস দেন।
‘দীর্ঘ ২ মাস পর জন্মভূমি বাংলাদেশে ফিরে এসে বাবার কবরের পাশে শায়িত হলেন প্রিয় ভাই ইমরান আহমদ চৌধুরী (এবাদ)। সিলেট সরকারী আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সর্বস্থরের মানুষের উপস্থিতিতে নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং জানাযা শেষে হযরত শাহজালাল (র:) গোরস্থানে দাফন করা হয়। মৃত্যুর বেশ কিছুদিন হয়ে যাওয়ায় খুবই কম সময়ের মধ্যে দাফন করতে হয়েছে। অনেকেই অল্প সময়ের কারণে শেষ বিদায় জানাতে আসতে পারেননি, এর জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তিনি বলেন দেশ-বিদেশ থেকে যারা প্রতিনিয়ত আমার এবং আমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রেখে, মানষিকভাবে স্বান্তনা দিয়েছেন আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমার ভাইয়ের প্রতি আপনাদের যে মায়া এবং ভালবাসা ছিল তদ্রুপ আমার পরিবারের প্রতিও মায়া এবং ভালাবাসা অব্যাহত থাকবে এই কামনা করছি। ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনার ব্যাপারে আমাকে যারা সরাসরি সহযোগিতা করেছেন, আমার পাশে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত আমাকে নিঃস্বার্থভাবে সহযোগিতা করেছেন এদেরকে আমি নাম উল্লেখ্য করে ছোট করতে চাই না। আমার এই দুঃসময়ে আপনারা যেইভাবে আমার পাশে ছিলেন আমিও আপনাদের পাশে এইভাবে সুখ-দুঃখে থাকার সুযোগটি করে দিবেন। আল্লাহ আপনার/আমার সকলকে নেক হায়াত দান করুক, আমাদের ঈমান এবং আমলের সহিত জীবন যাপন করার তৌফিক দান করুক। সবাই নিরাপদে থাকুন, সুস্থ থাকুন, সকলের প্রতি আবারো আন্তরিক মোবারকবাদ জানাচ্ছি।’

বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/৫ অক্টোবর/জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ