• মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ইতালির ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় বাংলাদেশী বড় ধাক্কা খেল ভোলার তুলাতুলি পার্কে বিনোদনের নামে প্রকাশ্যে চলছে অশ্লিলতা ভোলায় সাংবাদিক নাহিদের উপর হামলা কারীদের গ্রেফতারের জন্য মানববন্ধন ভোলার আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সহধর্মিণীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশ সমূহের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের নতুন করে উদ্যোগ সাবেক সংসদ সদস্য সুমন গ্রেফতার উনাকে পল্লবী থানায় রেখেছেন ইউরোপিয়ান বাংলা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলাল, সম্পাদক সুমন, উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান নির্বাচিত নিরাপত্তার স্বার্থে সাকিব কে দেশে না ফেরার পরামর্শ: ক্রিড়া উপদেষ্টা আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না অস্ট্রিয়া তিন দলীয় কোয়ালিশন সরকারের পথে এগোচ্ছে
বিজ্ঞপ্তি
প্রিয় পাঠক আমাদের সাইটে আপনাকে স্বাগতম এই সাইটি নতুন ভাবে করা হয়েছে। তাই ১৫ই অক্টোবর ২০২০ সাল এর আগের নিউজ গুলো দেখতে ভিজিট করুন : old.bdnewseu24.com

বিদ্যুৎবিহীন এক কক্ষের জড়াজীর্ন ঘরে মুক্তিযোদ্ধার বসতি দেখার কেউ নেই

বাধন রায় (বরিশাল) ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট : মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ঝালকাঠির কাঠালিয়ার শৌলজালিয়া আলো-বাতাস বিদ্যুৎবিহীন এককক্ষের জড়াজীর্ন ঘরে মুক্তিযোদ্ধার বসবাস।

ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলায় দক্ষিন শৌলজালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভারপ্রাপ্ত কাঠালিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার চিরকুমার মোজাম্মেল হোসেন @ সালেক মিয়া (৬৫) আলো বাতাসহীন জড়াজীর্ন বিদ্যুৎবিহীন ঘরে বসবাস করছে। এলাকায় তিনি সকলের কাছে সাদা মনের মানুষ হিসাবে পরিচিত। তার ঘরে এখনো বিদ্যুৎ সংযোগ লাগেনি। দিনের বেলাও অন্ধকার ঘরে মশারি টানিয়ে বিশ্রাম করতে হয়। জড়াজীর্ন ঘরে কোন জানালা নেই। এক কক্ষের ঘরটিতে প্রবেশের জন্য একটি মাত্র দরজা রয়েছে। মোজাম্মেল হোসেন মিথ্যাচার করেন না। এবং সবসময় সত্যের পথে থেকে কোথাও কোন অন্যায় দেখলে প্রতিবাদ করেন। ৩০ বছর পূর্বে একই এলাকার এক অসহায় নারী সাফিয়া বেগম (৬০) কে তার ঘরে আশ্রয় দিয়েছেন। দুজনেই একই ঘরে ভাই বোনের সম্পর্ক নিয়ে বসবাস করছে এই দীর্ঘ সময়। সাফিয়া বেগমের একরকমের মানসিক প্রতিবন্দ্বিতা রয়েছে। সে স্বাভাবিক সত্তায় থাকলে অত্যান্ত চমৎকার মানুষ কিন্তু কোন কারনে ক্ষুব্ধ হলে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে থাকেন। তার গালাগালি না খেয়েছে এমন কোন এলাকার মানুষ নেই। মানুষের বিপদ দেখলে সাফিয়া বেগম ছুটে আসেন কিন্তু এই মহিলার ভাগ্যে এখন পর্যন্ত জোটেনি কোন বয়স্কভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তা ভাতাও। সে সখের বসে ৬/৭ টি নিজের সন্তানের মতই ছাগল লালন পালন করে।
শৌলজালিয়া গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন এই এলাকার মনু মিঞার সন্তান। বরগুনায় লেখাপড়া কালীন সময় ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষনার পরপরই মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সালেক মিয়া মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন। ভারতে প্রশিক্ষন নিয়ে সাব সেক্টর কমান্ডার মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে রনাঙ্গনে যুদ্ধ করেন।
ঘর না পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন জানান তিনি উপজেলা কমান্ডার। তার উপজেলায় ১৪ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে যাদের গৃহ নির্মান প্রয়োজন। তাদের তালিকা দেওয়া হয়েছে এবং ১৪ জনের মধ্যে ১২ জনের নামে ঘর বরাদ্দ হয়েছে। উপজেলার এই শ্রেণিভূক্ত সকল মুক্তিযোদ্ধার ঘর নির্মানের পরেই তিনি ঘর চাইতে পারেন। এবং তার পূর্বে ঘরের জন্য নাম দেওয়া হলে তাহা নীতি বর্হিভূত হবে ও মুক্তিযোদ্ধা নেতা হিসাবে এটা তার জন্য সমুচিনও নয়।
সবমিলিয়ে সৎ ও নিষ্ঠাবান চিরকুমার মোজাম্মেল হোসেন ও তার আশ্রয়ে থাকা ভাতা বঞ্চিত একরকম চিরকুমারী সাফিয়া বেগম এবং তাদের লালন পালন করা ছাগল নিয়েই মিলিত একটি সংসার। এই সংসারে অভাব অনটন থাকলেও সরকার বা কারো কাছে তাদের কোন প্রত্যাশা নেই। সৎভাবে জীবন যাপনের নির্ভরতাই তাদের অন্যতম চাহিদা।

সাফিয়া বেগমের কিশোরী বয়সে বিয়ে হয় কিন্তু তার মানসিক প্রতিবন্দ্বিতাজনিত কারনে বিয়ের ৩ দিন পর স্বামী তাকে পিত্রালয় পাঠিয়ে দেন। তারপর থেকে সাফিয়া বেগমের ভাগ্যে আর কোন বর জুটেনি এবং বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পর একই গ্রামে বসবাসকারী তার পরিবারের সাথে সম্পর্কের বাধন আলগা হতে থাকে। এক পর্যায় পিত্রালয় ছাড়া হয়ে পথে পথে সাফিয়া বেগমকে ঘুরে বেড়াতে হয়। ৩০ বছর পূর্বে মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হোসেন তাকে তার ঘরে আশ্রয় দেয় এবং এই দীর্ঘ সময় ধরে তারা একটি ঘরেই বসবাস করছে। অথচ গ্রামের আধা কিলোমিটারের মধ্যে সাফিয়া বেগমের ভাইবোন নিয়ে আপন পরিবার রয়েছে। এখন বন্ধু-অভিভাবক এই মুক্তিযোদ্ধাই দুজনের মধ্যে চমৎকার আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা রাতে বাড়িতে ফিরতে দেরি হলে রাস্তায় দাড়িয়ে থাকে সাফিয়া বেগম এবং রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী এলাকার মানুষের কাছে জিজ্ঞাসা করে “ওনাকে কোথাও দেখেছ ”।
সাফিয়া বেগম মানসিক প্রতিবন্ধি হলেও গ্রামের কোন মানুষের বিপদ হলে আর্থিক নয় সহমর্মিতা নিয়ে পাশে দাড়ায়। তার সখের লালন পালন করা সব ছাগলগুলিরই জেন্ডার ভিত্তিক পৃথক প্রথক নাম রয়েছে। এদেরকে নাম ধরে ডাকলে তারা চলে আসে। জন্মের পর থেকেই এদের নাম দেওয়া হয়। বর্তমানে ময়না, কমলা, সাহেব, ছত্তার, কুরু ও ছাদমান নামের ছয়টি ছাগল রয়েছে। কোন কারনে ছাগল মারা গেলে তাদের পাশে বসে কান্নাকাটি করে এবং পানিতে ভাসিয়ে না দিয়ে কবর দেয়।
শৌলজালিয়া গ্রামের বাসিন্দা ভারপ্রাপ্ত কাঠালিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার চিরকুমার মোজাম্মেল হোসেন ও সাফিয়া বেগম।

বিডিনিউজ ইউরোপ ২৪ডটকম/২৮ সেপ্টেম্বর/জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ