লন্ডনে সর্বদলীয় উলামা মশায়েখের উদ্যোগে আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র স্মরনে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল।
বৃটেনের সর্বদলীয় উলামা সংগঠন বাংলাদেশী মুসলিমস ইউ,কে’র উদ্যোগে সেন্টার ফর ইসলামিক গাইডেন্স এ অনুষ্ঠিত হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলেমে দ্বীন, শায়খুল হাদীস হযরত আল্লামা মুফতী মুজাহিদ উদ্দীন চৌধুরী দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল।
গত ২২ আগস্ট রোববার আয়োজিত মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন ইস্ট লন্ডন মসজিদের সাবেক প্রধান ইমাম ও খতিব, শায়খুল হাদীস হাফিজ মাওলানা আবু সায়িদ। বাংলাদেশী মুসলিমস ইউ, কে’র সেক্রেটারী মাওলানা শাহ মিজানুল হকের পরিচালনায় শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন ক্বারী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী দুবাগী। এতে লন্ডনের শীর্ষ স্থানীয় উলামায়ে কেরাম, রাজনীতিবিদ, ইমাম, শিক্ষক ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ অংশ গ্রহন করেন।
বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার কাউন্সিলর আহবাব হোসেন, কাউন্সিল অফ মস্ক এর চেয়ারম্যান ও এশাতুল ইসলাম মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা শামসুল হক, আল্লামা জিল্লুর রহমান চৌধুরী দুবাগী, খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব ও সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আব্দুল কাদির সালেহ, নিউক্রস জামে মসজিদের খতিব মাওলানা ওলিউর রহমান চৌধুরী দুবাগী, জমিয়তের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও মারকাজুল ইসলাম লন্ডনের চেয়ারম্যান মাওলানা শোয়াইব আহমদ, নূরে মদীনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা শফিকুর রহমান বিপ্লবী, লন্ডন মাজাহিরুল উলুম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা এমদাদুর রহমান আল-মাদানী, আল-কোরআন রিসার্চ ইন্সটিটিউটের চেয়াম্যান হাফিজ মাওলানা শফিকুর রহমান মাদানী, দারুল উম্মাহ মসজিদের ইমাম মাওলানা আবুল হাসনাত চৌধুরী, জামিয়াতুল উম্মাহ লন্ডনের সিনিয়র উস্তাদ ও লন্ডন চাঁদ দেখা কমিটির সমন্বয়কারী মাওলানা মুমিনুল ইসলাম ফারুকী, বাংলাদেশী মুসলিম এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা এফ কে এম শাহজাহান, মহানগর খেলাফত মজলিসের সাবেক সভাপতি মাওলানা তায়ীদুল ইসলাম, সিলেট আলীয়া মাদ্রাসা প্রাক্তন ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, সেন্টার ফর ইসলামিক গাইডেন্স এর একাডেমিক ডিন মাওলানা আবুল বারাকাত মিশকাত হাসান, বাংলাদেশ টিচার্স এসোসিয়েশন ইউকের অর্থ সম্পাদক প্রফেসর মিসবাহ উদ্দিন কামাল, বাংলাদেশ সেন্টারের সহ-সভাপতি জনাব মুহিবুর রহমান মুহিব, নিউক্রস জামে মসজিদের প্রেসিডেন্ট জনাব সেলিম রহমান, মাওলানা গোলাম আম্বিয়া, মাওলানা হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
মাওলানা গোলাম আম্বিয়া আল্লামা দুবাগী ছাহেবের শানে স্বরচিত একটি মর্সিয়া পেশ করেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) বৃটেনের মুসলিম মনীষীদের মধ্যে অতুলনীয় এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন। তিনি একাধারে একজন যুগ শ্রেষ্ঠ আলেমে দ্বীন, প্রখ্যাত শায়খুল হাদীস, মুফতি, বক্তা, ক্বারী, মুফাসসির, গবেষক, লেখক, শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, সুসাহিত্যিক, ভাষাবিদ ও সামাজিক ব্যক্তিত্ব সহ বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন সত্যিকার অর্থে দ্বীনদার এবং মুহাক্কিক আলেমে দ্বীন। আর আধ্যাত্মিক জগতে ছিলেন একজন বড় দরজার অলী। তাঁর মত মেধাবী মানুষ সচরাচর দেখা যায়না। বৃটেনের আলেম সমাজের অন্যতম এক অভিবাবক ছিলেন তিনি। যুক্তরাজ্যের প্রায় এলাকায় ছিল তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। তিনি নিজেও মানুষকে ভালবাসতেন, আলেম-উলামাদের ইজ্জত করতেন। বিভিন্ন দেশের প্রখ্যাত উলামা মাশায়েখের সাথে ছিল তাঁর গভীর সম্পর্ক। আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহঃ)’ র চেহারা ছিল উজ্জ্বল নূরানী, তিনি সভা সমিতিতে যোগদান করলে পূর্বেকার ওলীগনের মত সামান্য বয়ানেই মানুষ প্রভাবিত হতেন।
আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র জীবনে ইসলামের নানামুখী খেদমতের সুযোগ হয়েছে। ইসলামের বিভিন্ন বিষয় তিনি সাধারণ জনগণকে খুব ভালো করে বুঝাতে পারতেন। আলেম-উলামা এবং জন সাধারণের কাছেও ছিলেন অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য এক ব্যক্তিত্ব। সবসময়ই দ্বীন ইসলামের কথা মাথায় থাকতো তাঁর।
সত্তর শতকের শেষ দিকে বিলেতে বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞান চর্চার পথ সুগম ছিল না। তখন নানাভাবে মুসলমানদের উন্নতি ও অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতা ছিলো। বিলেতে মুসলিম ঐতিহ্য ও ইসলামী সংস্কৃতি তখন নানাভাবে বাধাগ্রস্ত ছিলো। এমনি যুগ সন্ধিক্ষণে শায়খুল হাদিস আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.) এর বৃটেন আগমন। দ্বীনের প্রচার বৃটেনের কোণায় কোণায় ছড়িয়ে দিয়েছেন। ইলমের মাধ্যমে মানুষের বা সমাজের উপকার করা এবং দ্বীনের বুনিয়াদী শিক্ষাকে ঘরে ঘরে পৌঁছাবার কাজ করেছেন। জ্ঞান অর্জন করার সাথে সাথে কীভাবে উত্তম চরিত্র-আখলাক অর্জন করা যায়, তার জন্য সবাইকে উৎসাহিত করেছেন। আল্লাহর দ্বীন এ জমীনে প্রতিষ্ঠা করতে জীবনের সর্ব শেষ মূহুর্ত পর্যন্ত তিনি ছিলেন রাহেলিল্লাহ। তিনি ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ বন্ধের সময় একজন বীর সৈনিক, সেনাপতির মত কাজ করে গেছেন।
বৃটেনে বহু মসজিদ-মাদ্রাসা ও ইউকে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ সহ আরো সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং অভিভাবক ছিলেন তিনি। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদান অপরিসীম। ছাত্র হিসেবে তিনি ছিলেন তুখোড় মেধাবী। শিক্ষক হিসেবে ছিলেন মানুষ গড়ার দক্ষ কারিগর। অসংখ্য ছাত্র হজরতের কাছে বুখারী শরীফসহ অন্য কিতাব পড়ে ধন্য হয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্তে তাঁর ছাত্ররা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন, এদের অনেকাংশ শায়খুল হাদীস, শায়খুল কুররা, মুফতি, মুফাসসির, ওয়াইজ, মুবাল্লিগ, প্রিন্সিপাল, ইমাম, রাজনীতিবিদ, লেখক, গবেষক, ইঞ্জিনিয়ার, সাংবাদিক, আমলা ও ব্যাবসায়ী হিসেবে খেদমতে খালক করে যাচ্ছে। সর্বদিক দিয়ে তিনি একজন সফল ব্যক্তি ছিলেন, তাঁর সন্তানগণ সবাই ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত এবং স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কবরে শুয়ে শুয়ে তিনি পেতে থাকবেন সদকায়ে জারিয়ার সওয়াব।
সকল দল, মত ও চিন্তার উচ্চপর্যায়ের আলেমদের সাথে ছিল তাঁর আন্তরিকতা। আলেম উলামাদের কাছে পেলে তিনি খুবই আনন্দিত হতেন। যথাযোগ্যভাবে সকলকে আপ্যায়ন করতেন। আলেম-উলামাদের কাছে পেলেই তিনি বিভিন্ন মাসয়ালা-মাসায়েল, কুরআনের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা, শানেনুযুল, বিভিন্ন হাদিস শরীফ ইত্যাদি নিয়ে পরস্পর মত বিনিময় করতেন। ইসলামী দুনিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য বিশেষ করে বাংলাদেশের আলেম-উলামাদের করণীয় বিষয়ে অকপটে বলতেন। তিনি কথায় ও কাজে কোনো সময়েই আলেম-উলামাদের খাটো করে দেখতেন না। যে কেউ তাঁর কাছে সহজে যেত পারত। যে কোন ব্যক্তিকে তার যথাযোগ্য মর্যাদা দিতেন, কাছে টানতেন। অনুজদেরকে সম্মুখপানে এগিয়ে দিতেন। তাঁর অমায়িক ব্যবহার কেউ ভুলতে পারবে না।
আল্লামা দুবাগী ছাহেব (রহ.)’র ইন্তেকালের পর বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি সহ সর্বস্তরের মানুষের শোক প্রকাশ এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সোস্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়ায় সংবাদ, সম্পাদকীয়, প্রবন্ধ-নিবন্ধে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ও বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় দোয়া মাহফিলের যে ধারা লক্ষ্য করা গেছে তা তুলনাহীন। সারা জীবন তিনি ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষা ও প্রচার-প্রসারে নিয়োজিত ছিলেন। নিজ কর্মগুণে তিনি ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছেন।
পরিশেষে ইলমে দ্বীনের এ প্রবীণ খাদেমের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম কামনা করে দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন দুবাগী ছাহেবের সুযোগ্য বড় ছাহেবজাদা আল্লামা জিল্লুর রহমান চৌধুরী দুবাগী।
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/৩০আগস্ট/জই