চেন্গিস খানের দেশ মঙ্গোলিয়ার ভ্রমণ কাহিনীঃএএমএম নাসির উদ্দীন
প্রাইভেটাইজেশন সংক্রান্ত এক আন্তর্জাতিক ওয়ার্কসপে যোগদিতে ১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে মন্গোলিয়ার রাজধানী উলানবাতর(Ulaanbaatar) সফরে যাই।প্রকৃতপক্ষে,ইংরেজি অক্ষর ‘aa’ ব্যবহার হয় এমন আর কোন শব্দ আমি দেখিনি।উত্তরে রাশিয়া এবং দক্ষিণে চীন এর মাঝখানে প্রায় ছয় লাখ চার হাজার বর্গ মাইলের শীত প্রধান দেশ মন্গোলিয়া।লোকসংখ্যা প্রায় তেত্রিশ লাখ মাত্র যার প্রায় অর্ধেক রাজধানী উলানবাতরেই বাস করে।সে দেশের লোক সংখ্যার প্রায় ৩০% যাযাবর বা আধা যাযাবর।লোকসংখ্যার প্রায় ৫২% বৌদ্ধ ধর্মালম্বী,প্রায় ৪১% এর কোন ধর্ম নেই, মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৩%। ওয়ার্কসপের অবসরে অামাদের বিভিন্ন স্হানে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়।রাজধানীর বাহিরের লোকজন সাধারণত তাঁবুতেই বাস করে।খাট,চেয়ার,টেবিল,সোফা,ওভেন,ফ্রিজ ইত্যাদি আধুনিক সব জিনিসই তাঁবুতে রয়েছে।
০২। পশুপালন ও কৃষি তাদের মূল পেশা।ঘোড়া,গরু,ভেড়া ইত্যাদি তারা লালন পালন করে থাকে।মানুষের চেয়ে ঘোড়ার সংখ্যা বেশি।তবে সাম্প্রতিক কালে কয়লা,তামা,টিন,স্বর্ণ ইত্যাদি ব্যাপকভাবে উত্তোলনের ফলে খনিজ খাত জিডিপি তে সর্বোচ্চ অবদান রাখছে।রাজধানীর বাহিরে ঘোড়াই চলাচলের বাহন।সব পরিবার ঘোড়া লালন পালন করে এবং পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নিজস্ব ঘোড়া রয়েছে। আট নয় বছরের শিশুদেরকেও দেখেছি দ্রত বেগে ঘোড়ায় চড়তে।ঘোড়ার দুধ তাদের খুব প্রিয় পানীয় এবং এক পরিবার আমাদের ঘোড়ার দুধ দিয়ে আপ্যায়নও করে।ঘোড়ার মাংসও তাদের খুব পছন্দের খাবার।তবে শরীর উষ্ণ রাখার জন্যে শুধুমাত্র শীত কালেই তারা ঘোড়ার মাংস খায়।
০৩।দুর্ধর্ষ চেন্গিস খান ১২০৬ সালে বিশাল মন্গোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।পরবর্তীতে তার নাতি কুবলাই খান চীন দখল করে ইউয়ান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইউয়ান সাম্রাজ্যের পতনের পর মন্গোল রা নিজেদের দেশ মন্গোলিয়াতে ফিরে যান।অাজ থেকে একশত বছর আগে ১৯২১ সালে মন্গোলিয়া চীনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে।পরে ১৯২৪ সালে তারা রাশিয়ার প্রভাবে এবং সমাজতান্ত্রিক ধারায় চলে যায়।১৯৯০ সালের বিপ্লবের পর ১৯৯২ সালে মন্গোলিয়া নতুন শাসনতন্ত্র ও বাজার অর্থনীতি চালু করে।
০৪।ওয়ার্কসপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী মিঃ গানাবোল্ড।প্রধানমন্ত্রী মিঃ আলভেকডর ও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু তিনি মঞ্চের একদম বাম পাশে সর্বশেষ চেয়ারটাতে বসে ছিলেন এবং তিনি কোন বক্তব্য ও রাখেননি।তিনি ছিলেন কেবল শ্রোতা।অনুষ্ঠান শেষে মাত্র দূজন পুলিশ পাহারায় তিনি চলে যান।তাঁকে ঘিরে কোন অাড়ম্বর দেখিনি।অামাদের দোভাষী ছিলেন এক ভদ্র মহিলা বেশ সুন্দরী, স্মার্ট এবং ইংরেজিতে বেশ পারদর্শী।
সে একদিন আমাকে জিজ্ঞেস করল,মিঃ নাসির,শুনেছি তোমার দেশে নাকি মোজ্লেম(মুসলিম) অাছে যারা নারীদের কাপড় দিয়ে ঢেকে ঘরে বন্দী করে রাখে?অামি বললাম, অামার দেশে শতকরা প্রায় ৯০% মোজ্লেম।আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী,বেশ কয়েকজন মন্ত্রী নারী,অামাদের রয়েছেন অনেক নারী এম পি,অনেক স্কুল কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী,নারী কর্মকর্তা,নারী শ্রমিক ইত্যাদি।সে বেশ আশ্চর্যান্বিত হয়েছিল আমার জবাবে।সম্ভবত পশ্চিমা মিডিয়ার কারনেই তাঁর এ ধারনা।তখন সে সময়কার আফগানিস্তানের তালেবান শাসনকে সে বাংলাদেশের সাথে গুলিয়ে ফেলেছিল।মন্গোলিয়া তে মোজ্লেম আছে কিনা জানতে চাইলে সে জানালো,শুনেছি রাজধানী থেকে প্রায় ২০০০ কিঃ মি দূরে পশ্চিম মঙ্গোলীয়ায় কিছু মোজ্লেম অাছে।
০৫। দীর্ঘদিনের সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্হায় মন্গোলিয়া নিরক্ষরতা সম্পুর্ন নির্মূল করতে পেরেছে,তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বেশ ভালো।এ যাবত করোনা সংক্রমণ হাজার খানেকের একটু বেশী।দেশটি বেশ দ্রতই এগিয়ে যাচ্ছে।আমার সফরের সময়ের কিছু ছবি পোস্ট করলাম।
বিডিনিউজ ইউরোপ২৪ডটকম/২৭আগস্ট/জই