গৃহহীনদের জন্যে সরকারী বাড়ীঃ সাম্প্রতিক কালে ‘অাশ্রয়ন’ প্রকল্পের অধীনে গৃহহীন/বাস্তুচ্যুত দের জন্য নির্মিত বাড়ি নিয়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।উল্লেখ্য যে,সরকার ১৯৯৭ সালে গ্রামান্চলের গৃহহীন/বাস্তুচ্যুতদের জন্যে বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যে ‘অাশ্রয়ণ’ প্রকল্পটি গ্রহণ করে এবং এযাবৎ হাজার হাজার বাড়ী প্রকল্পের অধীনে নির্মাণপূর্বক গৃহহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।অবশ্য ২০০২-২০০৬ সময়ে ‘অাবাসন’ প্রকল্পের অধীনে এ কর্মসূচী বাস্তবায়িত হয়।সম্প্রতি মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সরকার ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের অধীনে গৃহহীনদের জন্যে ৭০০০০ বাড়ি নির্মাণের কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।এটা নিঃসন্দেহে একটা প্রশংসনীয় ও দরিদ্র বান্ধব কর্মসূচী যা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
০২। প্রকল্পটা ঘিরে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা মোটামুটি এরকমঃ
২.১। অনেক স্হানে বাড়ি গুলো নির্মাণে ব্যাপক দূর্নীতি/ অনিয়ম হয়েছে।অনেক নির্মাণকাজ অতি নিম্নমানের এবং কাজ শেষ হতে না হতেই অনেক বাড়ির দেয়াল ধ্বসে পড়ছে,দেয়ালে/ মেঝেতে ফাটল দেখা যাচ্ছে,অনেক বাড়ি সাধারণ বৃষ্টির পানিতে অনেকাংশে তলিয়ে গেছে।
২.২। খাল/নদীর তীরে বাড়ি নির্মিত হয়েছে যা ইতোমধ্যে নদী ভান্গনের ঝুঁকিতে পড়েছে।
২.৩।অনেক নির্মিত বাড়িতে যাবার রাস্তা নেই।
২.৪।বাড়ি বরাদ্দ পাবার জন্যে অনেক
ক্ষেত্রে অর্থকড়ি ব্যয় করতে হয়েছে।
অভিযোগ গুলো গুরুতর।বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্টদের জন্যে এধরণের একটা দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচী ঝুঁকিতে পড়বে তা কোন মতেই মেনে নেয়া যায়না।তদন্তপূর্বক অনিয়ম দূর্নীতির সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্হা নিতে হবে।বিগত দুদশকেরও বেশি সময়ব্যাপী কর্মসূচীটির অধীনে হাজার হাজার বাড়ি নির্মাণে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে তাতে কি পরিমাণ লুটপাট হয়েছে তা কল্পনা করাও যায়না।তাছাড়া,স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার অন্যান্য প্রকল্পত রয়েছেই।
০৩।এক্ষেত্রে কিছু বিষয় বিবেচনা প্রাসন্গিক হবেঃ
৩.১। একটা কক্ষ,পাকঘর,টয়লেট সহ পাকা মেঝে/পাকা দেয়াল এবং টিন শেড বাড়ি নির্মাণে বরাদ্দ ৳ ১,৭১,০০০/ বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে যথেষ্ট কিনা তা বিবেচনা করা জরুরী।সুদূর/দুর্গম গ্রামান্চলে নির্মাণসামগ্রী পরিবহন কষ্টকর এবং ব্যয় বহুল।স্হান ভেদে নির্মাণ ব্যয়ে বেশ তারতম্য হতে পারে।বরাদ্দকৃত খরচে মানসম্পন্ন বাড়ি নির্মান সম্ভব কিনা তা বিবেচনা করা প্রয়োজন।
৩.২।প্রাপকদের নিজস্ব জমি না থাকলে যথাসম্ভব খাস জমিতে বাড়ি নির্মাণের নির্দেশনা রয়েছে।উল্লেখ্য, অধিকাংশ খাস জমি নীচু/জলাভূমি অথবা নদী বা সমুদ্র উপকূলবর্তী।
৩.৩। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নির্দিষ্ট সময় সীমার মধ্যে বাড়ি নির্মাণ ও বরাদ্দ সম্পন্ন করার জন্যে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের তাগিদের প্রেক্ষিতে তাড়াহুড়ো করে যেনতেন ভাবে কাজ শেষ করার বিষয়টাও ঘটে থাকতে পারে।
৩.৪।নীচু জমি ভরাট করার পর পরই নির্মাণ কাজ করলে মেঝেতে ফাটল দেখা দেয়া খুবই স্বাভাবিক।বিশেষত RCC পাইলিং বিহীন কাজ হলেত কথাই নেই।
৩.৫। প্রকল্পের কাজ তত্বাবধানের জন্যে স্হানীয় Project Implementation Officer(PIO) ছাড়া কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন অার কেউ ছিলোনা।
৪.০। সরকার প্রকল্পটা এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।গৃহহীনদের বাড়ি দিতে হলে মান সম্পন্ন বাড়িই দিতে হবে যাতে তারা একটা যুক্তিগ্রাহ্য সময় পর্যন্ত নির্বিঘ্নে বসবাস করতে পারে। সামান্য ঝড়ে টিন উড়ে গেলে বা দেয়াল ধসে পড়লে,সাধারন বর্ষামৌসুমে বা নিয়মিত বন্যায় বা সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বাড়ি তলিয়ে গেলে সে বাড়ি দেয়া হবে অর্থহীন।অামরা ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের জন্যে ভালো মানসম্পন্ন বাড়ি নির্মান করতে পেরেছি।নিজ দেশের নাগরিকদের জন্যে নিম্ন মানের বাড়ি দেয়ার কোন যুক্তি নেই। প্রয়োজনে বাড়ির সংখ্যা কমিয়ে মান বাড়ানো হোক।RCC পিলার,বীম ইত্যাদি দিয়ে ভালো মান সম্পন্ন বাড়ি নির্মানকরে গৃহহীনদের দেয়া হোক।এজন্যে যা করতে হবেঃ
৪.১। প্রথমেই বিগত দূদশকেরও অধিক সময়ে নির্মিত ও বরাদ্দ দেয়া হাজার হাজার বাড়ির সর্বশেষ অবস্হা সম্পর্কে একটা ব্যাপক সমীক্ষা করা যেতে পারে।বরাদ্দ প্রাপ্তরা বাড়িতে থাকেন কিনা,বাড়ি গুলোর অবস্হা কি,তাদের অর্থনৈতিক অবস্হা,বাড়ি বরাদ্দ প্রক্রিয়া কি রকম হওয়া বাঞ্চনীয়, নির্মান প্রক্রিয়া কিরূপ হওয়া উচিৎ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় সমীক্ষায় অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।সমীক্ষার সুপারিশের ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহন করা যাবে।
৪.২। নির্মাণকাজ তত্বাবধানের জন্যে স্বাধীন নির্মানতত্বাবধানকারী পরামর্শক ফার্ম(Independent Construction Supervision Consultant Firm) নিয়োগ দেয়া যেতে পারে।
৪.৩।বাড়ি বরাদ্দে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে।
৪.৪। বাড়ির নির্মান ব্যয় যৌক্তিক হওয়া বাঞ্চনীয় যাতে মান সম্পন্ন বাড়ি নির্মান করা যায়।
৪.৫। বাড়ির স্হান নির্ধারনে খুবই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।নীচু/জলাভূমি এবং নদী ভান্গন/ সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস প্রবণ এলাকা পরিহার করতে হবে।
লিখকঃ এএমএম নাছির উদ্দীন তিনি ককসবাজার মেডিক্যাল কলেজের রুপকার ও বাস্তবায়নের মূল নিয়ন্ত্রক, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব, জ্বালানি সচিব ও তথ্য সচিব সহ গণপ্রজাতন্ত্রীবাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত থেকে দীর্ঘ চাকরি জীবন শেষে অবসরে আছেন।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/৯আগস্ট/জই