বিশ্বে ক্ষুধায় প্রতি মিনিটে মারা যাচ্ছে ১১ জন
করোনা ভাইরাস মহামারী এমনিতেই খাদের কিনারে ঠেলে দিয়েছে বিশ্ব অর্থনীতিকে। দেশে দেশে হু হু করে বাড়ছে দারিদ্র্য ও বেকারের সংখ্যা। মহামারীর এই প্রকোপ আঁচ ফেলেছে মানুষের ভাতের থালায়ও। দারিদ্র্যবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফাম বলছে, করোনাকালে পৃথিবীতে খাদ্যাভাব আরও তীব্র হয়েছে। ক্রমেই বিশ্বজুড়ে তৈরি হচ্ছে দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। বিশেষ করে গত বছরের তুলনায় এ বছর খাদ্যের অভাব অন্তত ৬ গুণ বেড়েছে। অবস্থাটা এমনই যে, বিশ্বে এখন প্রতি মিনিটে ১১ জন অনাহারে মারা যাচ্ছে। তাই করোনাকে ভয় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খ্যাদ্যাভাব নিয়েও মানুষকে সচেতন হতে আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
গতকাল শুক্রবার প্রকাশিত ‘দ্য হাঙ্গার ভাইরাস মাল্টিপ্লাইস’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে অক্সফাম এসব তথ্য জানিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনায় মৃত্যুর গতিকে বিশ্বজুড়ে হারিয়ে দিতে শুরু করেছে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্বে ১৫ কোটিরও বেশি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বা আরও খারাপ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যার সংখ্যা গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ কোটি বেশি। তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ অনাহারে থাকে, কারণ তাদের দেশ হয় গৃহযুদ্ধ নয়তো অন্য কোনো সামরিক দ্বন্দ্বের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ইয়েমেন, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, আফগানিস্তান, দক্ষিণ সুদান, ভেনিজুয়েলা ও সিরিয়ায় করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে থেকেই খাদ্য সংকট ছিল। এখন মহামারীর প্রভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির ফলে খাদ্য সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ, উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে বিভিন্ন দেশে অন্তত পাঁচ লাখের বেশি মানুষ দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া চরম ক্ষুধায় রয়েছে সাড়ে ১৫ কোটি মানুষ। এই সাড়ে ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে প্রতি তিনজনে দুজনের বসবাস সহিংস ও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে।
অক্সফাম আমেরিকার প্রধান ও সিইও অ্যাবি ম্যাক্সম্যান বলেন, খাদ্যাভাব নিয়ে যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তা বিস্ময়কর। তবে আমাদের মনে রাখতে হবে, এই দুর্যোগে মানুষ অকল্পনীয় দুর্ভোগের সম্মুখীন। মানুষ যখন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তখন যুদ্ধবাজরাও পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত। এ ছাড়া আবহাওয়া বিপর্যয় ও অর্থনৈতিক ধাক্কায়ও লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তার মধ্যেও যুদ্ধবাজরা অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা অব্যাহত রেখেছে। তারা নাগরিকদের খাদ্য ও পানি থেকে যেমন বঞ্চিত করছে তেমনি মানবিক ত্রাণকে বাধা দিচ্ছে। মানুষ নিরাপদে যেমন বাস করতে পারছে না তেমনি খাবার কিনতে যেতে পারছে না, কারণ বাজারগুলোতে বোমাবর্ষণ করা হচ্ছে। ধ্বংস হচ্ছে ফসল ও গবাদিপশু।
অক্সফাম জানায়, মহামারী পরিস্থিতির মধ্যেও বিশ্বে সামরিক ব্যয় অন্তত ৫ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে, যা ক্ষুধা নিরসনে জাতিসংঘের ব্যয়ের চেয়ে বহুগুণে বেশি। তাই অনতিবিলম্বে সরকারগুলোকে সংঘাত বন্ধ করে এই বিপর্যয়জনিত খ্যাদ্যাভাব নিরসনের আহ্বান জানিয়েছে অক্সফাম। সেইসঙ্গে ত্রাণ সংস্থাগুলো যেন সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলোয় তৎপরতা চালাতে পারে সে ব্যবস্থা করতেও আহ্বান জানানো হয়েছে। ক্ষুধা নিরসনে জাতিসংঘের তহবিলে আরও অর্থদান করতেও দাতা দেশগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে তারা।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১২জুলাই/জই