ভোলায় সরকারি খাল দখল করে ভবন নির্মাণের হিড়িক
ভোলার দৌলতখান উপজেলার বাংলাবাজার এলাকার খাসেরহাট খালের দুই পাড়ে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা। বাংলাবাজার ব্রিজ থেকে উত্তর জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে খালের দুই পাড়ে খালের জমি দখল করে পাকা ভবন নির্মাণের হিড়িক পড়েছে। অনেকে দাবি করছেন, খালের মধ্যে তাদের জমি আছে। তাই খালের মধ্যে পাইলিং করে কয়েকতলা ভবন বানাচ্ছেন। কেউ আবার পাইলিং করে খাল ভরাট করে বাড়ি-ঘর বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে কোনো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা না করায় দখলদারদের কবলে পড়ে দিন দিন খালটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কেউ আবার খালের ভিতরে নিজের জমি আছে দাবি করে অন্যের কাছে বিক্রিও করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাংলাবাজার সংলগ্ন খাসেরহাট খালের উত্তর জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে খালের প্রায় ছয় শতাংশ জমি দখল করে একটি বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। গাছপালা বেষ্টিত বাড়িটিতে একটি এক তলা ভবনে তিনটি পরিবার বসবাস করছে। তারা সবাই ভাড়াটিয়া। বাড়িটি নির্মাণ করেছেন দৌলতখান বাজারের পল্লী চিকিৎসক প্রাণ কৃষ্ণ দে। প্রায় ১০ বছর আগে এ যায়গা ভরাট করে প্রাণ কৃষ্ণ বাড়ি-ঘর নির্মাণ করেন। অনেকে আবার খালের ভিতর রেকর্ডকৃত জমি আছে দাবি করে কয়েক তলা পাকা ভবন নির্মাণ করছেন। প্রায় ২৮ জন দখলদার খালের যায়গা দখল করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ করছেন। কোনো বাধা বিপত্তি ছাড়াই কয়েক দশক ধরে খালের দুই পাড়ে বড় বড় পাকা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করছেন দখলদাররা। এতে করে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে এ খালটি।
এক সময় এ খাল দিয়ে বড় বড় পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করলেও বর্তমানে খালটির দুই পার ভরাট হয়ে যাওয়ায় পণ্যবাহী নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে করে বাংলাবাজারের ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। তাই দ্রুত উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে খালটির দুই পাড় দখলমুক্ত করার দাবি করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. শিহাবসহ ৮-১০ জন জানান, অবৈধভাবে খালের জমি দখল করায় দিন দিন খালটি ছোট হয়ে আসছে। খাল দিয়ে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় আমদের পণ্য পরিবহনে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও খালের যায়গা ভরাট হওয়ায় পানির স্রোতে মানুষের রেকর্ডকৃত জমি ভেঙে যাচ্ছে। তাই খালটি দখলমুক্ত না হলে এক সময় এ খালের অস্তিত্ব থাকবে না।
খালের জমিতে বাড়ি নির্মাণ করা প্রাণ কৃষ্ণ দে বলেন, আমি ১০ বছর আগে এই জমি শাকিল নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছি। সে সময় এই জমি নিচু ছিল। জোয়ারে পানি উঠতো। এমনকি শাকিলের কাছ থেকে আমার আরো আত্মীয় স্বজন একই জায়গায় আরও জমি কিনেছেন। বিক্রেতা আমাকে খালের পাড় পর্যন্ত জমি মেপে দিয়েছেন। পরে আমি ওই জমি ভরাট করে বাড়ি নির্মাণ করি। তখন কেউ আমাকে বাধা দেয়নি। সম্প্রতি খালে বালুবাহী জাহাজ চলাচলের সময় পানির স্রোতে আমার বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় আমি খালের পাশে পাইলিং করি। পরে লোকের মাধ্যমে শুনেছি আমার বাড়ির একটি অংশ নাকি খালের মধ্যে পড়েছে। তবে আমাকে ভূমি অফিস থেকে এখনও কিছুই জানানো হয়নি। উত্তর জয়নগর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সঞ্জিব চন্দ্র দে জানান, ইতোমধ্যে বাংলা বাজারের খাসের হাট খালের দুই পারের অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। খালটির দুই পারে প্রায় ২৮ জন দখলদার বিপুল পরিমান খালের সরকারি জমি দখল করে আছে।
দৌলতখান উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মহুয়া আফরোজ জানান, ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে খালের অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হবে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১৬জুন/জই