পরীমনি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার : প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি
বাংলা চলচ্চিত্রের হালের আলোচিত অভিনয় শিল্পী পরিমনি ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার শিকার! ৪ দিন ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বিচার না পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে খোলা চিঠি লেখেন পরীমনি। ১৩ জুন (রোববার) রাতে কাঁন্নাভেজা এক সংবাদ সম্মেলনে অভিনেত্রী পরীমনি তাঁর ওপর সংঘটিত নিপীড়নের বর্ণনা দেন। তিনি জানান, ৯ জুন (বুধবার) রাত ১২ টার দিকে রাজধানী ঢাকার উত্তরায় ভোট ক্লাবে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ নামক কর্তৃক ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার শিকার হন। ঘটনার ওই রাতে নিজেকে বোট ক্লাবের সাবেক সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন নাসির ইউ মাহমুদ। ওই রাতে পরীমনি তাঁর ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমি, পারিবারিক বন্ধু অমি, ও এক আত্মীয়কে সাথে নিয়ে বের হন। অমি কৌশলে তাদেরকে উত্তরার ভোট ক্লাবে নিয়ে যান।
বোট ক্লাবে হঠাৎ করে নাসির ইউ মাহমুদ পরীমনিকে জোর করে মদ্যপান করানোর চেষ্টা করেন। মদ্যপানে রাজি না হলে পরীকে শারীরিকভারে নির্যাতন করেন নাসির ইউ। পরীমনির অভিযোগ তাঁর ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমিকে নির্যাতন করা হয়।
প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও ক্লাবকর্তা নাসির ইউ মাহমুদ আইজিপি বেনজির আহমেদের বন্ধু।
ভয়াবহ ওই ঘটনা ও এর পরবর্তীতে থানা, চলচ্চিত্র পরিবারসহ বিভিন্ন জায়গায় সহযোগিতা না পেয়ে মানসিকভাবে আরো ভেঙে পড়েন পরীমনি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বারবার কাঁন্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, বনানী থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে কোনো সহযোগিতা পান নি।
রোববার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি খোলা চিঠি লেখেন পরীমনি। পরীর খোলা চিঠিতে যা লেখা ছিলেন-
“বরাবর,
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমনি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।
এই বিচার কই চাইবো আমি? কোথায় চাইবো? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি গত চারদিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্রবন্ধু বেনজির আহমেদ আইজিপি স্যার! তুমি কাউকে খুঁজে পাইনা মা। যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনা বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়! আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কি বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুনি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারো কি করবার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোন অন্যায় মেনে নিতে!
আমার মা যখন মারা যান তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহুর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার।
আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা।
আমি বাঁচতে চাই।
আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।”
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১৪জুন/জই