দৌলতখানে নববধূকে তুলে নেয়ায় মোড়ল মাতব্বদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ
ভোলার দৌলতখানের কামরুল ইসলামের সদ্য মুসলিম হওয়া স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদাউসকে হিন্দু বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিল স্থানীয় মোড়ল মাতব্বররা। উপজেলার চরখলিফা ইউনিয়নের দিদার উল্যাহ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। কামরুল ইসলাম ওই গ্রামের দিনমজুর আলী হোসেনের ছেলে। কামরুল জানায় , দুই বছর আগে ঢাকার গাজিপুর জেলার জয়দেবপুর থানার নীলের পাড়ায় একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে গিয়ে সংকর চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে শ্রাবন্ত্রী মন্ডলের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক হয়।’পরে তাদের দু’জনের সম্মতিতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে শ্রাবন্ত্রী মন্ডলের নতুন নাম রাখা হয় জান্নাতুল ফেরদাউস। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে দৌলতখানে ফিরে আসে।
গত শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা কালাম তুফানি সহ আরও কিছু সহযোগী মিলে জোর পূর্বক নববধূকে হিন্দু বাবার হাতে তুলে দেয়। এ সময় ওই নববধূর চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠে। পর ওইদিন রাতের দিকে নববধূর কান্নার আহাজারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। ভিডিওটি মুহূর্তের মধ্যেই ফেইজবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে অনেকের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
বর্তমানে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দৌলতখানে চায়ের কাপে ঝড় উঠছে । চলছে আলোচনা সমালোচনার ঝড়।’ অন্যদিকে শ্রাবন্ত্রী মন্ডল তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর তার বাবা শংকর চন্দ্র মন্ডল বাদি হয়ে গত ১২/০৪/২০২১ ইং তারিখে গাজীপুর মহানগর নীলেরপাড়া থানায় একটি অপহরণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১৮-০৪-২০২১ জিএমপি, সদর থানায় মামলা নং-১৬, ধারা- ২০০০ সনের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ মামলাটি রুজু করা হয়।
তার প্রেক্ষিতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো: লুৎফর রহমান গত ২৩/০৪/২০২১ ইং তারিখে ভিকটিম শ্রাবন্তী রানী মন্ডলকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। এ ঘটনায় শ্রাবন্ত্রী মন্ডলের কান্নার আহাজারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভিডিওটি ফেইজবুকে ভাইরাল হয়ে যায় ভিডিওতে দেখা যায়, শ্রাবন্ত্রী মন্ডল ওরফে জান্নাতুল ফেরদাউস কান্না জড়িত কন্ঠে উপস্থিত সবাইকে বলছিল, সে তার বাবা মায়ের কাছে যাবেনা। কামরুল তার স্বামী তার কাছেই থাকবে।
এসময় গেয়াস উদ্দিন নামে এক মেম্বারের পা-ধরে কান্না করতে দেখা যায় তাকে। তার কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠলেও মন গলেনি স্থানীয় টাকার বিনিময়ে আসা মোড়ল মাতব্বররা। কালাম তুফানি সহ স্থানীয় একটি মহল জোর জবরদস্তি ও টানা হেচড়া করে ওই মেয়েকে গাড়িতে তুলে দেয়। সে কান্না জড়িত কন্ঠে তার বাবার বাড়িতে যাবেনা বলে এবং স্বামী কামরুল ইসলামের বাড়িতে থাকবে বললেও তার এ কথায় কারো মন গলেনি।
এ ঘটনায় দৌলতখানের নও-মুসলিম মেয়েকে তার স্বামী বাড়ির থেকে জোর পূর্বক তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে নিন্দা জানিয়েছেন ইশা আন্দোলন ভোলা উত্তর শাখা। অন্যদিকে নও-মুসিলিম মেয়েকে তার স্বামী বাড়ির থেকে হিন্দু বাবা মায়ের কাছে তুলে দিলে উপজেলার মেয়ার হাটের সর্বস্থরের জনগন নামে একটি ব্যানারে জোরপূর্বক কালাম তুফানী ও তার সহযোগীরা টাকার বিনিময়ে হিন্দু পরিবারের কাছে তুলে দেয়ার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও গণ অবস্থান করেন। এতে ওই এলাকার ৫০০/৬০০জন লোক অংশ গ্রহণ করেন।
অন্যদিকে কামরুল ইলসলাম জানান, ‘আমি যদি অপহরণ করে থাকতাম আমার স্ত্রীকে নিয়ে আমি লুকিয়ে থাকতাম। তাকে নিয়ে স্থানীয় সালিশে যেতাম না। আমার স্ত্রী সবার সামনে চিৎকার করে বলছে সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে। তারপর ও কেউ তাদেরকে সাহায্য করতে আসেনি। কামরুল ইসলাম দাবি করেন তার স্ত্রীর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে। তা ভোলা নোটারী পাবলিকে রয়েছে।
এ বিষয় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও দৌলতখান থানা পুলিশ জানান, দৌলতখান চর খলিফা ইউনিয়নের দিদার উল্লাহ গ্রামের মো: আলী হোসেনর ছেলে কামরুল সাথে সনাতন ধর্মাম্বলীর মেয়ে শ্রাবন্তী রানী মন্ডল এর প্রেমের সম্পর্ক হয় এবং এই কারনে তাকে কামরুল ইসলাম নিয়ে আসে। পরবর্তীতে মো: কামরুল ইসলাম শ্রাবন্তী রানী মন্ডলের বয়স সংক্রান্ত মিথ্যা তথ্য দিয়ে মোকাম ভোলা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে। কিন্তু ভিকটিমের জন্ম ও পিএসসির সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ০৫/০২/২০০৬খ্রি:। সেই হিসাবে তার বর্তমান বয়স ১৫ বছর ০২ মাস।এইরুপ অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে হিন্দু ধর্ম হতে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে বয়স বেশি দেখিয়ে মোকাম ভোলা নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে বিবাহ করা আইন সিদ্ধ নয়। এই বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ।
দৌলতখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বজলার রহমান জানান, ভিকটিমের জন্ম ও পিএসসির সনদ অনুযায়ী জন্ম তারিখ ০৫/০২/২০০৬খ্রি:। সেই হিসাবে তার বর্তমান বয়স ১৫ বছর ০২ মাস। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়। তবে কেউ যদি এ ঘটনায় বাণিজ্য করে থাকে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এদিকে এলাকার মানুষের দাবি যদি পোষাক পরিহিত পুলিশ এসে মেয়েটাকে নিয়ে যেত তাহলে তাদের কোন ক্ষোভ থাকতোনা। তুফানের মত টাউট বাটপাররা প্রকাশ্যে মেয়েটিকে টেনে হেচড়ে ছিনিয়ে নেয়ায় এলাকায় এ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/২৮এপ্রিল/জই