অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংসদে নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ঘোষণা-করোনার বিধিনিষেধে কোন আপোষ নাই
অস্ট্রিয়ার নতুন সামাজিক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভল্ফগ্যাং মুকস্টাইন (Wolfgang Mückstein) অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংসদে আজ তার প্রথম ভাষণে বলেন, “করোনার বিধিনিষেধে কোনও আপস নেই “- বলে তিনি তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। তিনি সংসদে এফএফপি-২ পড়ে তার বক্তব্য পেশ করেন।
আজ সকালে অস্ট্রিয়ার সংসদ অধিবেশনে তিনি তাঁর প্রথম বক্তব্যে কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে আরও বলেন, “যখনই মানুষের জীবন রক্ষার কথা আসে তখন আমি একজন ডাক্তার হিসাবে কখনও কোনও আপস করি না।” ভিয়েনার জেনারেল প্র্যাকটিশনার চিকিৎসক ডা. ভল্ফগ্যাং মুকস্টাইনের মতে,বর্তমানে করোনায় খোলার পরিস্থিতি প্রতারণামূলক।
একদিকে, আপনি সবকিছু খোলার পদক্ষেপগুলি সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হন, অন্যদিকে আপনাকে নিবিড় যত্ন ইউনিটগুলির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। বিশেষত ভিয়েনায়,আইসিইউর সার্বিক পরিস্থিতি খুব একটা ভালো অবস্থানে এখনও আসতে পারে নি।
মুকস্টাইনের মতে প্রথমে আপনাকে লোকদের রক্ষা করতে হবে, তারপরে আপনি খোলার কথা ভাবতে পারেন। এখন আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করতে হবে “ভ্যাকসিন প্রদান আরওদ্রুত,করোনা টেস্ট আরও বৃদ্ধি ও দ্রুত ফলাফলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়াও জনগণকে নিয়মিত হাত ধোঁয়া, সামাজিক দূরত্ব এবং এফএফপি ২ মাস্ক পড়তে উৎসাহিত করতে হবে।
তিনি জাতীয় সংসদকে জানান,অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত বায়োনটেক / ফাইজারের প্রথম ১০ লাখ (১মিলিয়ন) ভ্যাকসিন প্রদান সম্পন্ন করা হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় সাধারণত ৮০ বৎসরের উপরে এবং ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের মানুষকে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে।
অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে ফাইজার/ বায়োনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং মডার্নার ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। তিনি সংসদকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, খুব শীঘ্রই অস্ট্রিয়ায় দৈনিক ১,৩০,০০০ হাজার করোনার ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তিনি সামাজিক বিষয়ক মন্ত্রী হিসাবে বলেন,করোনায় অস্ট্রিয়ায় প্রায় ১২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, সমান্তরাল ক্ষতির কারণে, কোভিডের পরে এই সংখ্যাটি কত বেশী হবে তা এখনও আমি এখনও জানি না। এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের ফলে মানুষের মধ্যে মানসিক সমস্যাও বেড়েছে। তিনি সামাজিক মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগে এই জাতীয় মানসিক অসুস্থ রোগীদের জন্য সাইকোথেরাপির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানান।
এদিকে অস্ট্রিয়ার নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী Wolfgang Mückstein আজ সকালে স্থানীয় একটি সম্প্রচার কেন্দ্রে এক সাক্ষাৎকার বলেন,দেশে অনুমোদিত যে কোন ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সকলকে।তিনি জানান,অস্ট্রিয়ায় ব্যবহৃত বিভিন্ন করোনার ভ্যাকসিনগুলিতে কোনও বিপদ দেখছেন না তিনি।
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অস্ট্রিয়ার নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভল্ফগ্যাং মুকস্টাইন (গ্রিনস)বলেছেন, নির্দিষ্ট অনুমোদনপ্রাপ্ত করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন সম্পর্কে কোনও উদ্বেগ নেই, যেমন অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনা প্রতিরোধ ভ্যাকসিন। তিনি আরও বলেন,”আমি একজন ডাক্তার হিসাবে যে কোনও ভ্যাকসিনের পরামর্শ দেব।”
মন্ত্রী আজ সকালে জনপ্রিয় রেডিও “Ö3 – Wecker” এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে উপরোক্ত মন্তব্য করেন। মন্ত্রী বলেন,তার পরিবারের অনেক সদস্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। মন্ত্রী আরও জানান যে,তিনি বায়োনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিনের উভয় ডোজ গ্রহণ করেছেন কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই।
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনার সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২,৫২৩ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৮ জন।
রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৫২১ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে OÖ রাজ্যে ৪৮৭ জন,Steiermark রাজ্যে ৩৮৪ জন,NÖ রাজ্যে ৩৫১ জন,Tirol রাজ্যে ২৬৪ জন, Salzburg রাজ্যে ১৯৫ জন,Kärnten রাজ্যে ১৪৭ জন,Vorarlberg রাজ্যে ১০৬ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৬৮ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় করোনার ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ৪৫,৩১৫ ডোজ। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত মোট ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছেন ২৫,৫৭,৮০৩ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৬,০০,০৮৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৯,৯৯৭ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৫,৬৩,২৬৬ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৬,৮৩৬ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫৫৭ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,০০৯ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/২২এপ্রিল/জই