জলবায়ু বিপর্যয় এখন বৈশ্বিক মহামারী পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।
জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য বৈশ্বিক উদ্যোগের দাবি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আহ্বানে অনুষ্ঠিতব্য জলবায়ু সম্মেলনে জলবায়ু তাড়িদ বাস্তুচ্যুতদের জন্য বিশেষ বৈশ্বিক উদ্যোগের বিষয়টি তুলে ধরতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন নাগরিক সমাজ। শনিবার কোস্ট ফাউন্ডেশন এবং স্থায়িত্বশীল পল্লী জীবন-জীবিকার জন্য প্রচারাভিযান (সিএসআরএল), ক্লিন-বিডি, বিআইপিএনইটি-সিসিবিডি, সিপিআরডি আয়োজিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সম্মেলন: নাগরিক সমাজের প্রত্যাশা’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে বক্তাবৃন্দ এই আহ্বান জানান।
পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডঃ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী । কোস্ট ফাউন্ডেশনের রেজাউল করিম চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে আরও বক্তৃতা করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি গাইবান্ধা -১, ডঃ আতিক রহমান নির্বাহী পরিচালক-বিসিএএস, ড. আইনুন নিশাত, অধ্যাপক এমেরিটাস ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ডাঃ মনজুরুল হান্নান খান প্রাক্তন অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল, সিএসআরএলের জিয়াউল হক মুক্তা, সিপিআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুদ্দোহা, বিপনেট-সিসিবিডি’র মৃণাল কান্তি ত্রিপুরা, ক্লিন-বিডি’র হাসান মেহেদি এবং বাংলাদেশ ক্লাইমেট জার্নালিস্ট ফোরামের কাওসার রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে কোস্টের সৈয়দ আমিনুল হক বলেন, জলবায়ু পরির্বতন মোকাবেলার আন্দোলনে বৈশ্বিক নেতৃত্ব নিতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিগে হবে, যেমন-গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস করা, সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচিতে অর্থায়ন করতে হবে। মূল প্রবন্ধে কিছু সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়, যেমন- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কার্বন নি:সরণ মাত্রা ২০১০ সালের তুলনায় ২০৩০ সালের মধ্যে ৪৫ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করে জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে, যাতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন সঃসরণ শুণ্যে নেমে আসে। যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে ৩ বিলয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুত পূরণ করতে হবে এবং সর্বোচ্চ বিপদাপন্ন দেশগুলোর অভিযোজন এবং প্রশমনের সহায়তার জন্য মেধাস্বত্ব শিথিল করতে হবে।
ডাঃ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ বলেন, যে ক্লাইমেট ভালনারেবল ন্যাশান ফোরাম (সিভিএফের) চেয়ারম্যান হিসেবে বাংলাদেশ আসন্ন এই শীর্ষ সম্মেলনে তার জলবায়ু বিপদপিন্নতার বিষয়গুলো ধুলে ধরবে। এছাড়াও অতিবিপদাপন্ন দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের ক্ষেত্রে জিসিএফ’র দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করে অভিযোজনের জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তার দাবি জানাতে হবে এবং আমাদের উচিৎ প্যারিস চুক্তির আওতায় অভিযোজন সম্পর্কিত আলোচনা প্রক্রিয়ায় ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা।
সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় একটি বহুপাক্ষিক উদ্যোগ নেওয়ার সম্ভাবনা যাচাইয়ের অংশ হিসেবেই জো বাইডেন এই শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য বড় কার্বন নির্গমনকারীদের জন্য আমাদের ১.৫ ডিগ্রি সীমা বেধে দিতে হবে এবং এই লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণের কর্মসূচি দিতে হবে। তিনি লক্ষ্যপূরণের জন্য উপযুক্ত শীর্ষ বছরের সময়সীমা নির্ধারণকেও গুরুত্ব দেন।
ডাঃ আইনুন নিশাত বলেন, প্যারিস চুক্তির আওতায় বাজার ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ হয়ত লাভবান হবে না। বরং অর্থায়ন এবং জলবায়ু অভিবাসনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নিয়েছে। ডঃ আতিক রহমান বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের শেষ চার বছরের ভূমিকা এবং কার্বন নিঃসরণ ভুলে গিয়ে শীর্ষ সম্মেলনের নামে
লোকদেখানো আয়োজন করছে। জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, জলবায়ু বাস্তুচ্যুতদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা চাই। শামসুদ্দোহা এবং কাওসার আহমেদ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য সিভিএফকে একটি বিশেষ গ্রæপ হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান ।
জলবায়ু পরিবর্তনেনর প্রভাবের কারণে অস্তিত্ব সংকটের আশংকা করেন ব্যারিস্টার শামীম পাটোয়ারী এমপি। তিনি বলেন, এই বিষয়গুলো শীর্ষ সম্মেলনে তুলে ধরতে হবে। আমাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে তহবিল গঠন করা উচিত। হাসান মেহেদী মার্কিন বিনিয়োগকারীদের কার্বন নির্গমন প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান, কারণ যুক্তরাষ্ট্রেই বৈশ্বিক গ্রিন হাউস গ্যাসের ১১৭ গুণ বেশি নির্গত হয়।
মনজুরুল হান্নান বলেন, কার্বন নি:সরণ প্রকল্পের নামে নানা ধরনের ক্ষতিকর প্রকল্প উন্নত দেশগুলি এমভিসি দ্বারা বাস্তবায়ন করবে, যা গ্রহণ করা উচিত নয়। ধনীদেশগুলোকে কার্বন নি:সরণ কমানোর জাতীয় লক্ষ্যমাত্র বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া উচিত।
সূত্র-দৈনিক জনকণ্ঠ
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১৮এপ্রিল/জই