জার্মানির নিউজ নেটওয়ার্ক ডয়েচে ভেলে (DW) ভারত থেকে তাদের নিজস্ব সংবাদদাতার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছেন যে,আজ সমগ্র ভারতে করোনায় আক্রান্তের একদিনের আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখের উপরে উঠে গেছে,যা ভারতে করোনায় আক্রান্ত সনাক্ত একদিনের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
ডয়েচে ভেলে আরও জানায়, ভারতে এই প্রথমবার এত মানুষ একদিনে আক্রান্ত হয়েছেন। আজ একদিনে মারা গেছেন ১ হাজার ৩৮ জন মানুষ। ভারতে বর্তমান করোনার দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাবে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ বলিউডের রাজ্য মহারাষ্ট্র।
ভারতের মধ্যে মহারাষ্ট্রে করোনার আক্রান্তের সংখ্যা সব চেয়ে বেশী। শুধুমাত্র আজই এই রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার। আর রাজধানী দিল্লিতে আজ করোনায় নতুন করে আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ১৭ হাজারের উপরে।
এদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় পত্রিকা “আনন্দবাজার পত্রিকা” জানিয়েছেন যে,করোনার সংক্রমণ অত্যাধিক মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে সপ্তাহ শেষের দিনগুলিতে লকডাউন ঘোষণা করল দেশের রাজধানী রাজ্যে দিল্লির সরকার। তবে অত্যাবশ্যকীয় কাজকর্ম চলবে। যাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠান ঠিক করা আছে, সেটিও আয়োজন করা যাবে, তবে লাগবে কার্ফু পাস। বন্ধ থাকবে শপিং মল, জিম, প্রেক্ষাগৃহ। রেস্তরাঁগুলিও বন্ধ রাখা হবে। তবে চলবে হোম ডেলিভারি। বাজারও চলবে, তবে থাকবে নিয়ন্ত্রণ।
আজ এক ভিডিও বার্তায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, ‘‘আপনাদের জন্যই এই নিয়ন্ত্রণ জারি করা হচ্ছে। করোনার শৃঙ্খল ভাঙার জন্য এই নিয়ন্ত্রণের একান্তই প্রয়োজন। সেই কারণেই এপ্রিলের ১৭ তারিখ থেকে এই কার্ফু জারি করা হচ্ছে। শুক্রবার রাত ১০টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কার্ফু জারি থাকবে।’’ দিল্লির সেনা কমান্ডেন্ট লেফ্টেন্যান্ট জেনারেল অনিল বৈজলের সঙ্গে আলোচনার পরেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন কেজরীওয়াল।
দিল্লি সরকারের নির্দেশে বলা হয়েছে, সিনেমা হল ৩০ শতাংশ দর্শক নিয়ে চালানো যাবে। তবে বন্ধ রাখতে হবে সমস্ত বাজার, শপিং মল, স্পা, সুইমিং পুল, জিম। বসে খাওয়ার জন্য রেস্তরাঁ বন্ধ থাকবে, শুধু খাবার নিয়ে যাওয়া যাবে। প্রতিটি জোনের জন্য একটি করে সাপ্তাহিক বাজার খোলা থাকবে। প্রতিটি বেসরকারি অফিসের কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার ব্যবস্থা করতে হবে অর্থাৎ হোম অফিস করতে হবে।
দিল্লিতে করোনা আক্রান্তের চাপ হাসপাতালের উপর তৈরি হওয়ার কারণে আরও বেশি পরিমাণে কোভিড কেন্দ্র তৈরি করার বিষয়ে জোর দিয়েছেন কেজরীওয়াল।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে রাজধানী দিল্লিতে আজ একদিনেই মৃত্যুবরণ করেছেন ১০৪ জন। ফলে দিল্লির শ্মশানঘাট ও কবরস্থানে লম্বা লাইন ধরতে হচ্ছে মৃতদের সৎকার ও দাফনের জন্য।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন যে,দিল্লির ৮ টি কবরস্থানে গিয়ে দেখা গিয়েছে সমানে মাটি খোড়ার কাজ চলছে। এইভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে এক সময় এই রাজ্যের কবরস্থানে দাফনের জন্য স্থানের অভাব দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে শ্মশানেও মৃতদেহ সৎকারে লম্বা লাইন পড়ছে। অন্ততপক্ষে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
মুম্বাই থেকে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্রে অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা ছাড়া বাকি সব কাজ বাড়ি থেকে করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। করোনার সংক্রমণ অত্যাধিক বিস্তারের ফলে এখন রাস্তাঘাটে মানুষ নেই বললেই চলে। মহারাষ্ট্রে যে সব দোকান খোলা থাকছে, যারা সেখানে যাচ্ছেন, তারা কোভিড-বিধি পালন করছে কি না, তা দেখার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কেউ বিধি ভাঙলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে করোনার নতুন সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকায় ভারতের পর্যটন সমৃদ্ধ রাজ্য রাজস্থানে সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ভোর ৫ টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন রাজ্য সরকার। এই করোনার ভয়াবহতার মাঝেই ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হরিদ্বারে শুরু হয়েছে লাখো মানুষের উপস্থিতিতে কুম্ভমেলা। সেখানে ইতিমধ্যেই জড়ো হয়েছেন লাখো মানুষ। রাজ্য সরকার সেখানে ভিড় কমানোর কোনো ব্যবস্থা নেবে না বলে জানিয়েছেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিরথ সিংহ রাওয়তের মতে, সব কোভিড বিধি মেনেই কুম্ভমেলা পরিচালনা করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে তাঁর আশা, ঈশ্বরভক্তি রোগের ভয়কে জয় করতে সাহায্য করবে।
উত্তরাখণ্ড সরকারের মেডিক্যাল দফতরের হিসাব অনুযায়ী, রবিবার রাত সাড়ে এগারোটা থেকে সোমবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ১৮,১৬৯ জনের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১০২ জন কোভিড পজ়িটিভ। আজ হরিদ্বারে ৫৯৪ জন করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিলেছে। এ নিয়ে ২ দিনে হরিদ্বারে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১ হাজার জনে।
ভারতে করোনার এই ডামাডোলের মধ্যেই আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে ভোট চলছে। প্রতিটি বুথে লম্বা লাইন তাই সেখানে সামাজিক দূরত্বের বিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গেও করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন দ্রুত বাড়ছে। এই রাজ্যে মোট ৪ দফায় ভোটদান সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন মমতার সরকার।
এদিকে আজ পশ্চিমবঙ্গের News 18 নেটওয়ার্ক জানিয়েছে গত এক সপ্তাহেরও বেশী সময় ধরে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে হুইল চেয়ারে বসে নিজ দলের নির্বাচনী প্রচার করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং সাথে হাঁটছেন সমাজবাদী পার্টির নেত্রী তথা অভিনেত্রী জয়া বচ্চন(মিসেস অমিতাভ বচ্চন)।
উত্তর কলকাতার তিন তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে বেলেঘাটা থেকে বৌবাজার পর্যন্ত রোড শো করেন মমতা৷ সেই রোড শোয়েই মমতার দু’ দফায় বেশ কিছুটা পথ হাঁটতে দেখা যায় জয়া বচ্চনকে৷ এমন কি, মিছিলের শুরুর দিকে মমতার হুইল চেয়ার ধরেও এগিয়ে নিয়ে যেতে দেখা যায় জয়া বচ্চনকে ৷
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১৫এপ্রিল/জই