অস্ট্রিয়ান সরকার করোনা পরবর্তী ৫ লক্ষ কর্ম সংস্থানের “প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা” করছে
আজ ১০ এপ্রিল শনিবার অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর (প্রধানমন্ত্রী) সেবাস্তিয়ান কুর্জ এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, সরকার আগামী এক বৎসরের মধ্যে দেশে ৫,০০,০০০ লাখ মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছে। এই লক্ষ্য নিয়ে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে যাতে করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ বেকার এবং স্বল্প সময়ের কাজের লোকজনদের পুনরায় কর্মস্থলে ফিরিয়ে আনা যায়।
এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার ভবিষ্যত শ্রমবাজারে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরিয়ে আনার আশা প্রকাশ করছে।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন যে, সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি থেকে দ্রুত বেড়িয়ে আসতে ৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান তৈরীর মাধ্যমে আগামী এক বৎসরের মধ্যে বেকারদের পুনরায় কাজে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্য নিয়ে এক বিশাল গবেষণা ও পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হওয়ার কথা জানিয়েছেন। সরকার প্রধান বলেন,আমাদের কমপক্ষে পাঁচ লক্ষ লোককে নিয়মিত কর্মে ফিরিয়ে আনতে হবে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি আয়ের জন্য করও হ্রাস করতে হবে।করোনার সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার একটি অর্থনৈতিক “প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা” তৈরি করছে।
সরকারের এই পরিকল্পনাটি তিনটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে সামনে অগ্রসর হচ্ছে। বিষয় তিনটি হল “ওয়ার্ক”, “গ্রিনিং এবং ডিজিটাইজেশন” এবং “লোকেশন স্ট্রেনথেন্সিং” এ বিভক্ত, যার প্রতিটি কেন্দ্রিয় মন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে থাকবে এবং দায়বদ্ধ মন্ত্রীরা এর বিশদ বাস্তবায়নে দায়বদ্ধ থাকবে। আমাদের লক্ষ্য আগামী এক বৎসরের মধ্যে দেশের ৫ লাখ মানুষকে পুনরায় কাজে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।
সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ আরও বলেন,দেশের কর্মসংস্থান ও অর্থনীতি পুনরায় ফিরিয়ে আনতে বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি আয়ের জন্য কর হ্রাসের পরিকল্পনাও করছে সরকার। এই কর হ্রাসের ফলে ব্যবসায়ের অবস্থানের জন্য উভয়ই একটি অত্যাবশ্যক ভিত্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ যাতে শ্রমজীবীদের জন্য আরও বেশি অর্থ পাওয়া যাবে।
পরিকল্পনার গবেষণা অনুসারে, সবুজায়ন এবং ডিজিটালাইজেশন অস্ট্রিয়ান অর্থনীতির টেকসই এবং পরিবেশগতভাবে রূপান্তরকরণ এবং এইভাবে এটি ভবিষ্যতের প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে তুলতে সাহায্য করবে। এর জন্য জলবায়ু-বান্ধব প্রযুক্তি এবং গণপরিবহন, গ্রামীণ অঞ্চলে ডিজিটাল পরিষেবা এবং ব্রডব্যান্ডের বিস্তারের পাশাপাশি কর ব্যবস্থাকে সবুজকরণের জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন করা হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের উপ প্রধান ভাইস চ্যান্সেলর (উপ প্রধানমন্ত্রী) ভার্নার কোগলার বলেন,সবুজায়ন, ডিজিটালাইজেশন এবং আঞ্চলিককরণ সঙ্কটের বিরুদ্ধে তীব্র লড়াইয়ের পাশাপাশি, তারা তাদের দৃষ্টিভঙ্গি আরও প্রশস্ত করতে এবং কয়েক ধাপ এগিয়ে চিন্তা করতে চান।
তিনি আরও বলেন,আমরা দেশকে আরও আধুনিকীকরণ করতে চাই। আমাদের এখনও এমন অনেক অঞ্চল বা সেক্টর রয়েছে যা আমাদের পুনর্নির্মাণ করতে হবে।
ভার্নার কোগলার আরও বলেন,আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় আরও থাকছে বাস্তুসংস্থান, ডিজিটালাইজড এবং আঞ্চলিকীকরণের উদ্যোগ। আমাদের করোনা পরবর্তী “প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনা” আরও শক্তিশালী করার জন্য, অস্ট্রিয়ায় বিনিয়োগের জন্য এবং বিদেশী সংস্থাগুলির সন্ধানের জন্য আরও উৎসাহ তৈরী করার লক্ষ্যে ফেডারাল সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে যথাসম্ভব প্রতিযোগিতা মূলকভাবে অস্ট্রিয়াকে আরও বেশী পরিমানে উপস্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ আরও জানান,সরকারের এই করোনা পরবর্তী প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনায় মন্ত্রীদের নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এই কমিশনে রয়েছেন শ্রমমন্ত্রী মার্টিন কোচার, পরিবেশমন্ত্রী লিওনর গিউসেলার এবং অর্থমন্ত্রী গেরনট ব্লুমেল। এই কমিশন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার, শিক্ষামন্ত্রী হাইঞ্জ ফ্যাসম্যান, মন্ত্রী মার্গারেট শ্রামব্যাক,মন্ত্রী এলিসাবেথ কাস্টিংগার এবং রাজ্য সম্পাদক আন্দ্রেয়া মায়ার এবং ম্যাগনাস ব্রুনার এর সহযোগিতায় এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবেন।
ফেডারেল চ্যান্সেলারিতে মন্ত্রী কোচার, গিউসেলার এবং ব্লুমেলের মধ্যে একটি কার্যনির্বাহী বৈঠক সোমবার শুরু হবে। পুরো প্রত্যাবর্তন পরিকল্পনাটি আগামী সপ্তাহগুলিতে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানিয়েছেন সরকার প্রধান।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৩,১৩৯ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৮ জন। আজ রাজধানী ভিয়েনায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত সনাক্ত হয়েছেন ৮৩৪ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৫৫৮ জন OÖ রাজ্যে ৫২৪ জন,Steiermark রাজ্যে ৪৪৮ জন,Kärnten রাজ্যে ২২৯ জন,Salzburg রাজ্যে ১৯৭ জন,Tirol রাজ্যে ১৭৮ জন,Vorarlberg রাজ্যে ৯৭ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৭৪ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে আজ সমগ্র অস্ট্রিয়ায় ৭৭,৭৩৫ ডোজ করোনার ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার মোট ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে ২০,২৪,৮৬১ ডোজ।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫,৭৪,৭৫৫ জন এবং এই পর্যন্ত মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৯,৬৬২ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৫,৩২,৫৩৯ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩২,৫৫৪ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৫৮৬ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,৩৫৯ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
বিডিনিউজইউরোপটোয়েন্টিফোরডটকম/১১এপ্রিল/জই