ব্লে বেবেওসি নিয়ে ফ্লাইট জটিলতার অবসান-লাগবে ট্রাভেল পারমিশন
অবশেষে ব্লে বেবেওসি নিয়ে যারা বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট সমস্যায় আটকে গ্রীস ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তিত ছিলেন,তাদের সেই সমস্যার অবসান ঘটেছে।আটকে পড়া গ্রীক প্রবাসীদের,গ্রীসে ফিরে যেতে অবশ্যই নিকটবর্তী গ্রীক দূতাবাস থেকে নিতে হবে একটি ট্রাভেল পারমিশন।
বৈশ্বিক করােনা মহামারীর আগে বিভিন্ন দেশের মতােই গ্রিস থেকেও অনেক প্রবাসীরা নিজ দেশে বিভিন্ন কাজে ও পারিবারিক ছুটিতে দেশে এসে গ্রীসের বৈধ রেসিডেন্স পারমিট (ব্লে বেবেওসি-নীল সনদ/দলিল) অনলাইনে থাকা স্বত্বেও বিভিন্ন এয়ার লাইন্স কোম্পানী এবং গ্রীক আশ্রয় ও অভিবাসন মন্ত্রণালয়ের ইমেইল কনফার্মেশনের অবহেলায় দীর্ঘ সময়কাল ধরে ফ্লাইট জটে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।তবে যাদের কাছে স্মার্ট কার্ড রয়েছে তারা গ্রীসে ফিরে যেতে পারছেন এবং যাদের ব্লে বেবেওসি থেকে সিরিয়াল অনুযায়ী ফাইল খুলে স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করার জন্য অনলাইনে ডাকা হচ্ছে তারাও গ্রীসে প্রবেশ করতে পারছেন।পারছেন না শুধুমাত্র ব্লে বেবেওসি ধারী ব্যক্তিগণ এবং কিছু ক্ষেত্রে স্মার্ট থাকা ব্যক্তিরাও প্রবেশে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন,যাদের কাগজের মেয়াদ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে।যদিও মেয়াদ শেষ হলেও গ্রীক সরকারের এই ব্যপারে এক্সটেনশন বা স্বয়ংক্রিয় মেয়াদ বাড়ানোর প্রটোকল ও জারি আছে।
ব্লে বেবেওসির ব্যাপারটি শুধু বাংলাদেশে আটকে থাকা গ্রীস প্রবাসীদের জন্য নয়।গ্রীসের এই ধরনের রেসিডেন্স পারমিট তথা ব্লে বেবেওসি নিয়ে এশিয়া,আফ্রিকা বা আরবসহ সকল দেশের প্রবাসীরাই এক বিভ্রান্তির সম্মুখীন হয়েছেন।গ্রীক আইন অনুযায়ী যেকোন দেশের নাগরিকদের জন্য ব্লে বেবেওসি একটি বৈধ রেসিডেন্স পারমিট।
- অথচ ব্লে বেবেওসি নিয়ে বিগত ১০বছরেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা গ্রীস থেকে নিজ নিজ দেশে যাতায়াত করে আসছিলেন। গ্রীক ইমিগ্রেশন আইনে , গ্রীসে বসবাস করার জন্য যদি কারাে ” স্মার্ট কার্ড ‘ বা আবাসন অভিবাসন অনুমতির মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তখন নতুন করে ” স্মার্ট কার্ড বা আবাসন অভিবাসন অনুমতির মেয়াদ বাড়ানাের জন্য আবেদন করতে ব্লে -বেবেওসি বা ছবি সম্বলিত নীল রঙের একটি রশিদ দেয়া হয়ে থাকে যার মেয়াদ এক বৎসর।এছাড়াও অন্যান্য কোনাে আইনে কেউ যদি প্রাথমিক ভাবে গ্রীক রেসিডেন্স পারমিট অর্জন করে থাকেন, তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় সেই ব্যক্তিকে ব্লে বেবেওসি প্রদান করা হয়ে থাকে(ব্লে বেবেওসি দিয়ে স্মার্ট কার্ড পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজ জন্ম ভূমিতে ভ্রমন করার অধিকার রয়েছে)।
বাংলাদেশে এই কাগজ দিয়ে ভ্রমন করার আগে ভ্রমন করার সময় বাংলাদেশ দূতাবাস গ্রীস থেকে একটি প্রত্যয়ন পত্রও দেয়া হয়ে থাকে,যেন প্রবাসীরা ভ্রমণকালীন সময়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন না হন। এই প্রক্রিয়া আইনগতভাবে বৈধ।
সাম্প্রতিক পাকিস্থানে ব্লে বেবেওসি নিয়ে আটকে পড়া প্রবাসীদের ইসলামাবাদের, গ্রীক দূতাবাসের সামনে লাগাতার মানববন্ধনে অবশেষে সেখানে অবস্থিত গ্রীক দূতাবাস আলোচনার মাধ্যমে তাদেরকে একটি ট্রাভেল পারমিশন দিয়েছে।
এই ট্রাভেল পারমিশন দিয়ে পাকিস্থানের ব্লে-বেবেওসি বাহকগণ পুনরায় গ্রীসে ফিরতে শুরু করেছেন।তাদের ফ্লাইটজট কেটে গেছে।এ খবর পেয়ে বাংলাদেশে আটকে পড়া প্রবাসীগণ খুঁজে পেয়েছেন নতুন আশার আলো।
বাংলাদেশ থেকে সার্বক্ষণিক ব্লে বেবেওসির ফ্লাইট সমস্যা নিয়ে কাজ করা মোহাম্মেদ অলিউর রাফি,দিদারুল ইসলাম,ইব্রাহিম,বশির আহমেদ,সাইদুল ইসলাম সহ আরো অনেকেই পাকিস্তানের ফ্লাইট সমস্যা সমাধানের পরেই খোঁজ নিতে শুরু করেন।
অবশেষে হাতে পাওয়া গেছে ইসলামাবাদের অধীনস্থ গ্রীক দূতাবাসের সেই ট্রাভেল পারমিশন।এছাড়াও বিভিন্ন ব্লে বেবেওসি ধারী পাকিস্থানীদের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে,দূতাবাসের এই ট্রাভেল পারমিশন নিয়ে তারা গ্রীস ফিরতে পারছেন।
বাংলাদেশের আটকে পড়া প্রবাসীদের জন্য এটি খুশির খবর হলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুটি বিষয়।প্রথমত,বাংলাদেশে পাকিস্থানের মত গ্রীক দূতাবাস নেই।বাংলাদেশের মানুষকে ভারতের নয়াদিল্লীর গ্রীস দূতাবাসে গিয়ে সেবা নিতে হয়।আর দ্বিতীয়ত,এই মুহুর্তে ভারতে যাওয়ার মত কোন ভিসাই চালু নেই।করোনা মহামারীর কারনে ভারতে চিকিৎসা ভিসা ও ব্যবসায়ীক ভিসা ছাড়া আর কোন ক্যাটাগরির ভিসাই চালু নেই।
তবে,বাংলাদেশের আটকে পড়া গ্রীস প্রবাসীদের ব্লে বেবেওসি নিয়ে ফ্লাইট ধোঁয়াশা কেটে গেছে।ভারতে যাওয়ার জন্য এই মুহুর্তে সকল প্রবাসীরাই ভিসা খুলার অপেক্ষায় আছেন।তাছাড়া সকল প্রবাসীরা ভারতে যাওয়ার ভিসা পাওয়ার প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমরা আশাবাদী শিগগিরই বাংলাদেশে আটকে পড়া সকল গ্রীস প্রবাসীরা,ভারতের নয়াদিল্লীর গ্রীক দূতাবাস থেকে ট্রাভেল পারমিশন নিয়ে পুনরায় গ্রীসে ফিরে যেতে পারবেন।
তবে দু:খের বিষয় এই যে,ব্লে বেবেওসি নিয়ে ফ্লাইট সমস্যার যে সমাধান পাওয়া গেছে সে বিষয়ে গ্রীসে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস,কমিউনিটি বা কোন দলীয় সংগঠন থেকে কোন কিছুই জানানো হয়নি।তারা সম্ভবত এই ব্যাপারে জানেই না।তারমানে কি দাঁড়াল?আটকে পড়া প্রবাসীরাই তাদের সমস্যার সমাধান করলো!
বিডিনিউজ ইউরোপ/৯ নভেম্বর/বার্তা সম্পাদক