রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মুশতাক আহমেদসহ সকল হত্যার বিচার কর
বাংলার মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না, স্বৈরাচারের পতন হবেই
— ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গদি নিরাপত্তা আইনে পরিণত হয়েছে
— জোনায়েদ সাকি
আজ ৩ মার্চ, ২০২১ বুধবার, সকাল ১১:৩০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক নাগরিক সমাবেশ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে এক পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মুশতাক আহমেদসহ সকল হত্যার বিচার, মিথ্যা মামলা, হয়রানি বন্ধ ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি এবং ভিন্নমত-সমালোচনা-গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দমনের হাতিয়ার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে এই সমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই সমাবেশে বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, লেখব শিল্পী অরূপ রাহী, সাংস্কৃতিক কর্মী বিথি ঘোসসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার নাগরিকবৃন্দ। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এবং গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনানো হয়।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নাগরিকে ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য অ্যাড. হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচীব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর, ডাকসুর সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী (ভারপ্রপ্ত) আবুল হাসান রুবেলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনার বাবার অমোঘ বাণী স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বাংলার মানুষকে আর দাবায়ে রাখতে পারবা না, স্বৈরাচারের পতন হবেই। লেখক মুস্তাকের মৃত্যুতে সারা দেশে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তাতে বিচারপতিদের মনেও সাহস সঞ্চারিত হয়েছে। আজ কিশোরের জামিন হয়েছে। কিন্তু এই রায় অসম্পূর্ণ। যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে কিশোর মুস্তাকদের আটক করেছে সেই র্যাব পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেননি। এটাও বিচারপতির দায়িত্বের মধ্যে পরে। কিশোরের শারীরিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন গদি নিরাপত্তা আইনে পরিণত হয়েছে। এই আইনে কিশোরকে ১০ মাস ধরে আটক রাখা হয়েছে। আজ তিনি জামিন পেয়েছেন। এর আগে ৬ বার জামিন নাকচ হয়েছে। কিশোর বা লেখক মুস্তাক আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করলো কে? কেন র্যাব মামলা করলো? একজ ব্যবসায়ীর কার্টুন আঁকা ছাড়া তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাই। চৌধুরী নাফিস শরাফাতের মতো ব্যবসায়ীরা এতো ক্ষমতাবান হয়ে গেছেন যে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যেকোন নাগরিককে তুলে নিয়ে যেতে পারেন, বিচার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে, জামিন আটকে দিতে পারে, জেলে পচিয়ে মেরে ফেলতে পারে। এই ব্যবস্থাকেই বলে মাফিয়া রাষ্ট্র। এই মাফিয়াদের লালন পালন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে জবাব দিতে হবে। যে আইন ব্যবহার করে মাফিয়ারা নাগরিকদের হয়রানি করছে সেই আইন বাতিল করতে হবে এবং যাদের দিয়ে এবং যারা করছে তাদেরকে অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, প্রধানমন্ত্রী লেখক মুশতাকের মৃত্যুকে নিয়ে বলেছেন একটি লোক মারা গেলে এতো হৈচৈ করতে হবে কেনো? তবে উনি কিন্তু বাসা থেকে বের হননা। প্রধানমন্ত্রী বরাবর পদযাত্রা করবেন পুলিশ বাধা দেবে। গণতন্ত্রের পথে এমন সকল বাধা অতিক্রম করতে হবে। দৃঢ়তার সাথে ঐক্যবদ্ধভাবে বাধা মোকাবিলা করতে হবে। মুস্তাকের মৃত্যুতে জাতিসংঘসহ দুনিয়ার প্রত্যেকটি দেশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তিনি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কার নয় সম্পূর্ণ বাতিল করার দাবি জানান।
সাইফুল হক বলেন, ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত আসামী রাষ্ট্রপতির মওকুফ পেয়ে সারাদেশ দাপিয়ে বেড়াতে পারেন। কিন্তু একজন লেখন, একজন উদ্যোগক্তা, একজন সৃজনশী মানুষ সর্বপরি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে ৬ বার আবেদন করেও জামিন পাননি। ফলে আমরা বলতে পারি দেশে কোন আইনের শাসন নাই। কেননা এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় নাই। এই সরকার পাকিস্তানীদের নীতি, চরমপন্থী নীতি গ্রহণ করেছে।
বার্তা প্রেরক
বাচ্চু ভাইয়া
গণসংহতি আন্দোলন
কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি
বিডিনিউজ ইউরোপ টুয়েন্টি ফোর ডটকম/৪ মার্চ/ জ ইসলাম