মণিপুর রাজ্যে নতুন করে সিআরপিএফ-বিদ্রোহী সংঘর্ষে নিহত কমপক্ষে ১১ জন।সোমবার (১১ নভেম্বর) ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানায়,উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন ১১ কুকি বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন। রাজ্যের জিরিবাম জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে সংঘাতে কুকি বিদ্রোহীরা নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, আসাম সীমান্ত লাগোয়া জিরিবাম জেলার একটি থানায় কুকি বিদ্রোহীদের হামলায় দেশটির আধা-সামরিক বাহিনী সিআরপিএফের এক জওয়ান আহত হয়েছেন। পরে তাকে আসামের শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।স্থানীয় একাধিক সূত্র বলেছে, সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহীরা জিরিবামের একটি থানায় দুই দিক থেকে ব্যাপক হামলা শুরু করলে সেখানে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। থানার পাশে অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুতদের জন্য একটি ত্রাণ শিবিরও রয়েছে। হামলাকারীরা ওই শিবিরকেও নিশানা বানাতে চেয়েছিল।
জিরিবামের পুলিশের একজন কর্মকর্তা টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এনডিটিভিকে বলেছেন, হামলাকারীরা অটোরিকশায় করে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। জিরিবামের বোরোবেকরা এলাকার ওই থানাটি গত কয়েকমাসে একাধিকবার হামলার শিকার হয়েছে।
সূত্র বলেছে, থানায় হামলা চালানোর পর সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহীরা সেখান থেকে ১ কিলোমিটার দূরের জাকুরাডোর কারোং এলাকার একটি ছোট বসতির দিকে যায়। পরে সেখানে কিছু বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে তারা। বন্দুকযুদ্ধের পর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রকেট চালিত গ্রেনেড (আরপিজিএস) ও একে সিরিজের অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধার করেছেন।
জিরিবামে গত সপ্তাহ থেকে নতুন করে সহিংসতার শুরু হয়েছে। এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্দেহভাজন মেইতে সম্প্রদায়ের বিদ্রোহীরা হমার জনজাতির এক নারীকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেদিন জিরিবামে কুকিদের ঘরবাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়। হত্যার আগে ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয় বলে থানায় অভিযোগ করেছেন তার স্বামী।
একদিন পর মেইতেই সম্প্রদায়ের একজন নারী ধান ক্ষেতে কাজ করার সময় সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহীদের গুলিতে নিহত হন। সোমবার সকালের দিকে সন্দেহভাজন কুকি বিদ্রোহীরা ইম্ফল পূর্ব জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় থেকে গুলি চালায়। এতে একজন কৃষক আহত হন। ধান কাটার মৌসুমে পাল্টাপাল্টি এই হামলায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। হামলার আশঙ্কায় কৃষকরা ক্ষেতে কাজ করতে অনিচ্ছুক বলে জানিয়েছেন সেখানকার সরকারি কর্মকর্তারা।
গত ১৮ মাসের বেশি সময় ধরে চলে আসা সহিংসতায় মণিপুরে এখন পর্যন্ত ২০০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মেইতেরা মণিপুরের জনসংখ্যার প্রায় ৫৩ শতাংশ। তাদের মধ্যে বেশিরভাগ ইম্ফল উপত্যকায় বাস করেন। আর রাজ্যের নাগা এবং কুকি-সহ আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশ। তারা পার্বত্য জেলাগুলোতে বাস করেন। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সহিংসতা ও সংঘাতের কারণে এই রাজ্যের বহু মানুষ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
bdnewseu/13November/ZI/india