প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা হোসেন তৌফিক (এইচ টি) ইমাম ইন্তেকাল করেছেন।
বুধবার (৩ মার্চ) দিবাগত রাত ১ টা ১৫মিনিটে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি…..রাজেউন)।প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া রাত ১টা ২০ মিনিটে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত বেদনার সাথে জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা জনাব এইচ টি ইমাম রাত ১.১৫ টায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। জানাজা এবং দাফনের বিষয়টি পরে অবহিত করা হবে।’
এইচ টি ইমামের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তিনি কিডনির জটিলতাসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। মাসখানেক ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি।
এইচ টি ইমামের ছেলে সংসদ সদস্য তানভীর ইমাম জানান, ‘রাত ১টা ১৫ মিনিটে আব্বা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। জানাজা ও দাফনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সকালে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।
মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দায়িত্ব পালন করা এইচ টি ইমাম ২০১৪ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের চাকরিতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সচিবও হন তিনি।
হোসেন তৌফিক ইমামের জন্ম ১৯৩৯ সালে, পরে তিনি এইচ ইমাম নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।
বাবার চাকরি সূত্রে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে বিভিন্ন জেলায়। ম্যাট্রিক পাস করেন ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে। আবা ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ থেকে।
রাজশাহী কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি নিয়ে তিনি ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি নেন। তখন তিনি বাম ছাত্র সংগঠনে যুক্ত ছিলেন।
পড়াশোনা শেষে শিক্ষকতায় যোগ দিয়েছিলেন এইচ টি ইমাম রাজশাহী সরকারি কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়ে। এরপর পাকিস্তানে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।
স্বাধীতার পর ১৯৭৫ সালের ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত তিনি মন্ত্রিপরিষদের সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সাভারের লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি যোগাযোগ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিবও হন।
অবসর নেওয়ার পর আওয়ামী লীগে সক্রিয় হন এইচ টি ইমাম। দলের নির্বাচন পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান ছিলেন, যে কমিটির চেয়ারম্যান শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে উপদেষ্টার দায়িত্ব দেন। প্রথমে তিনি জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা নিয়োগ করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনা বিষয়ে এইচ টি ইমামের রচিত কয়েকটি গ্রন্থকে বেশ গুরুত্ব দেন গ্রন্থ সমালোচকরা।
এইচ টি ইমাম নিজে নির্বাচনে না দাঁড়ালেও তার ছেলে তানভীর ইমাম সিরাজগঞ্জের একটি আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য।
বিডিনিউজ ইউরোপ টুয়েন্টি ফোর ডটকম/৪ মার্চ/ জ ইসলাম