বাংলাদেশ ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের পরীক্ষিত ও নিবেদিত বন্ধু
ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের হিউমান রাইটস সাব কমিটি বাংলাদেশের মানবাধিকার, সুশাসন, ইউরোপের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক, জলবায়ু পরিবর্তন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা , মৌলিক অধিকার,বাংলাদেশের করোনা মোকাবেলা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং পুনর্বাসন ওপর এক মতবিনিময় সভার অয়োজন করে। নাইজেরিয়া, চীন এবং আলজেরিয়ার , মানবাধিকার বিষয়ের সাথে বাংলাদেশের ওপর আলোচনা হয়। অংশ গ্রহণ করেন, ঢাকায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রাষ্ট্রদূত রেইন্স্যে তিরিন্ক, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সাউথ এশিয়ান ডেলিগেশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট , ইউ এবং বেলজিয়ামে বাংলাদেশ সরকারের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মাহবুব হাসান সালেহ, হিউমান রাইটস ওয়াচ এর এশিয়ার ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি, সিভিল সোসাইটির ইসাবেল সান্তোস , এবং ফটো সাংবাদিক শহীদুল আলম।
২০১৮ সালে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট বাংলাদেশে মানবাধিকারের ওপর আনীত প্রস্তাবের বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতার এবং বর্তমান মানবাধিকার অবস্থা নিয়ে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়. । আলোচনায় , বাংলাদেশে ইউ’র মান্যবর রাষ্ট্রদূত রেনস্যে তিরিন্ক এবং সাউথ এশিয়ান ডেলিগেশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন , ইউ বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধু। বাংলাদেশ ইউর সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক , বাণিজ্যিক এবং উন্নয়নের সম্পর্কের বন্ধু। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন, কবিড ১৯ এ বাংলাদেশের অতুলনীয় সাফল্য, মহামারীর সময় যখন ইউরোপিয়ান এবং ব্র্যান্ড পোশাক আমদানিকরকরা অর্ডার বাতিল করে, তখন বাংলাদেশের প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সহযোগিতা , গার্মেন্টস ক্ষেত্রে শ্রম অধিকার উন্নয়ন,ট্রেড ইউনিয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন , সুশাসন, মানবাধিকার এবং এবং গণতন্ত্রের জন্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট এর আধুনিকায়নের মাধ্যমে মত প্রকাশের নিশ্চয়তার জন্য মাননীয় আইন মন্ত্রীর সাথে সার্থক আলোচনার কথা তুলে ধরেন।
ইউ এবং বেলজিয়ামে বাংলাদেশের মাননীয় রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে বাংলাদেশের প্রধান ডেভেলপমেন্ট পার্টনার হিসাবে উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস কমিটির আলোচিত বিভিন্ন ইস্যুতে গঠনমূলক আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য বাংলাদেশের নিজের ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়নে কক্সবাজারের ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের জন্য আধুনিক আবাসস্থল প্রতিষ্ঠা করে। রোহিঙ্গাদের এই আবাসস্থল কক্সবাজারের চেয়ে নিরাপদ এবং আধুনিক, যেখানে রোহিঙ্গারা স্বইচ্ছায় যেতে পারেন। কোবিদ ১৯ এর ভ্যাকসিনেশন বাংলাদেশে এক বিরাট সাফল্য, টিকা দানের ক্ষেত্রে পৃথিবীতে ১৭ দখল করেছে এবং এ পর্যন্ত ২.৬ মিলিয়ন জনসাধারণকে করোনা প্রতিরোধের টিকা দেয়া হয়েছে। অন্যান্য ইস্যুসহ নারী অধিকার ও অধিকার ক্ষুণ্ন করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন , বাংলাদেশ সরকার আইনের যথাযোগ্য প্রয়োগ এবং বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে , আইনের প্রয়োগ কখনো সঠিক ব্যাক্তির হাতে না পড়লে এই সমস্যা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে আমরা যথযোগ্য ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি বাস্তবতার নিরিখে, ইউর অন্যতম পার্টনার হিসাবে , এই ইস্যুগুলোকে সমাধান করার জন্য হিউমান রাইটস কমিটির কাছে আহ্বান জানান।
সাংবাদিক শহিদুল আলম , রাজনৈতিক,ষড়যন্থমূলক এবং উদ্দেশ্যমুলুক ভাবে গত নির্বাচন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, গ্রেফতার এবং ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট এর অপপ্রয়োগ নিয়ে অভিযোগ করেন ।যদিও এই আলোচনা ছিল মানবাধিকার বিষয় কোন রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর নয়। হিউমান রাইটস ওয়াচ এর মীনাক্ষী গাঙ্গুলি একইভাবে পুনরাবৃত্তি করেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের ওপর পার্লামেন্টের হিউমান রাইটস কমিটির এর পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের অন্যতম পার্টনার হিসাবে আরো বন্ধুত্তপূর্ন সুদৃঢ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এই আলোচনা।
পার্লামেন্টের ইউ ডেলিগেশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের একটা অন্যতম দৃষ্টান্ত। মানবাধিকার ও উন্নয়ন প্রসঙ্গে , বাংলাদেশের সাথে মতবিনময় করে বন্ধুত্তপূর্ণ সম্পর্ক আরো দৃঢ় করার ওপর গুরুত্ত আরোপ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য হলো দারিদ্র বিমোচণ। ইউ বাংলাদেশকে দারিদ্র্র বিমোচনের জন্য ৭০০ মিলিয়ন ডলার সাহাহ্য দিয়েছে। রানা প্লাজা ট্রাজেডির পর, বাংলাদেশ শ্রম অধিকার বিষয়ে অনেক অগ্রগতি করেছে , রোহিঙ্গা বিষয়ে সাউথ এশিয়ান ডেলিগেশন ২০১৮ সালে কক্সবাজার পরিদর্শন করেছে এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের বিষয়ে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাহাহ্যের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন , মানবতার জন্য ১.৫ মিলিয়ন রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীতে মানবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তিনি বলেন , বার্মায় সামরিক শাসনের জন্য ,রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কবিড ১৯ মোকাবেলা এবং সর্বস্থরের জনসাধারণকে কবিড টিকা দানের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংরক্ষণ বাংলাদেশের একটা সফল উদাহরণ।
সমাপনী বক্তব্যে বাংলাদেশের ইউ রাষ্ট্রদূত রেনসে তিরিন্ক ইউর সাথে বাংলাদেশের ঐতিহ্যপর্ণ সম্পর্ক , ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট এর আধুনিকায়ন নিয়ে আইনমন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা,সুনির্দিষ্ট কেসগুলু নিয়ে সমাধান, সফ্ট ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে গঠনমূলক সমাধান , ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের সাউথ এশিয়ান ডেলিগেশন এর কোরোনা মহামারীর পর বাংলাদেশে আগমন বিষয়ের ওপর আলোকপাত করেন। তিনি ইউর প্রতি রাষ্ট্রদূত মাহাবুব হাসান সালেহর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে মানবাধিকার উন্নয়ন সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কাজ করার জন্য প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন , তার সমাপনী ভাষণে বলেন, রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনে জন্য প্রতি বছর ৮৫০ মিলিয়ন খরচ হচ্ছে। ইউ ছাড়া অন্যান্যদাতা গোষ্ঠী থেকে এখনো তেমন রোহিঙ্গাদের জন্য সাহাহ্য আসে নি । ইউ রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের জন্য ভাষানচরের পক্ষে , আরো কিভাবে উন্নত করা যায় তা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার গুলুর সাথে আরো আলোচনা করে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন সুনিশ্চিত করতে হবে । ইউ বাংলাদেশের সহযোগিতা এবং সম্পর্ক উন্নয়ন , মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র নিশ্চিত করার জন্য সিভিল সোসাইটি এবং সমাজের সকল অংশের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে জোরদার করবে। বাংলাদেশ রেডি মেড গার্মেন্টসের তিনি বলেন ৮০% নারী যেখানে কর্মরত , তাদের জীবন মান্নোন্নয়নের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান বাংলাদেশ গার্মেন্টস এসোসিশন এবং গার্মেন্টস শিল্পে সংশ্লিষ্ঠ সংগঠনগুলুর সাথে আলাপ করে যাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য, ২০২৪ সালে, বাংলাদেশ মধ্যবর্তী আয়ের দেশ থেকে কিভাবে উন্নত দেশে পরিণত করা যায় সেভাবে কাজ করে যাবে।
বিডিনিউজ ইউরোপ /২৭ ফেব্রুয়ারী / জ ইসলাম