ক্রিসমাস ও নববর্ষের পূর্বে ইংল্যান্ডে নতুন লকডাউন ঘোষণায় হাজার হাজার মানুষের লন্ডন ত্যাগ! ইংল্যান্ডে আকস্মিক লকডাউন ঘোষণার পর ভিয়েনার সাথে লন্ডনের বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
করোনার সংক্রমণ বিস্তার রোধে ক্রিসমাস ও নববর্ষের প্রাক্কালে বৃটিশ সরকার ২০ ডিসেম্বর রবিবার থেকে লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বৃহত অংশে ২(দুই) সপ্তাহের জন্য নতুন করে লকডাউন ঘোষণা করেছে। ফলে শনিবার ১৯ ডিসেম্বর ও রবিবার ২০ ডিসেম্বর হাজার হাজার মানুষ লন্ডন ছেড়ে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। তার ফলে বাসস্ট্যান্ড,ট্রেন স্টেশন এবং বিমানবন্দরের প্রচন্ড ভিড়ের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ইংল্যান্ড থেকে অষ্ট্রিয়ার সহ কয়েকটি দেশের সকল ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ।
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ব্রিটিশ রাজধানীতে এই নতুন করোনার সাথে সম্পর্কিত লকডাউন সম্পর্কে এক বক্তব্যে তার সমর্থন জানিয়েছেন। তবে তিনি এই স্বল্পমেয়াদী ২ সপ্তাহের লকডাউনের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন। রবিবার লন্ডনের মেয়র জনাব খান বিবিসিকে বলেছেন, করোনার অব্যাহত সংক্রমণে আমরা ভীত ও হতাশাগ্রস্ত। জনাব খান আরও বলেন,”শেষ মুহূর্তের”লকডাউনের ঘোষণাটি পরিবার ও ব্যবসায়িকদের জন্য মারাত্মক আঘাত হবে। কিন্ত আমার মতে, সরকারের এই লকডাউন সিদ্ধান্ত সঠিক। সরকার সংক্রমণ রোগ বিজ্ঞানী এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টাদের পরামর্শক্রমে এই কঠোর বিধিনিষেধ সহ লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রবিবার ২০ ডিসেম্বর থেকে লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে এই কঠোর লকডাউনে লোকদের কেবলমাত্র বৈধ কারনেই বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেমন গ্রোসারি কেনা বা চিকিত্সকের সাথে দেখা করা এবং কাজ থেকে আসা এবং যাওয়া। এই তথাকথিত করোনা অঞ্চল ৪ এর বাইরে ভ্রমণের অনুমতি নেই। সমস্ত অপ্রয়োজনীয় দোকান এবং সুবিধা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
শনিবার ১৯ ডিসেম্বর বিকালে সরকার এই লকডাউন ও কঠোর বিধিনিষেধের ঘোষণা দেন। সরকার এক বিবৃতিতে বলেন,দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে করোনা ভাইরাস তার জিন বা গঠন পরিবর্তন করে এক নতুন রূপে ভয়ঙ্কর আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন করোনার এই নতুন ভাইরাসটি পূর্বের ভাইরাস থেকে আরও বিপজ্জনক। খান বলেন,তিনি বুঝতে পেরেছেন যে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার আগে লোকেরা তাদের দ্বিতীয় পরিবারে সাথে মিলিত হওয়ার জন্য রওয়ানা দিয়েছেন। সাদিক খান বলেন,তাদের এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল সিদ্ধান্ত। বৃটিশ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (NHS) জানিয়েছেন,বৃটেনে এই পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের শরীরের করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। আজ বৃটেনে করোনায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৩৫,৯২৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩২৬ জন। বর্তমানে আইসিইউতে আছেন ১,৩৬৪ জন। বৃটেনে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লক্ষ ৪০ হাজার ১৪৭ জন এবং মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৬৭ হাজার ৪০১ জন।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমণ সনাক্ত হয়েছেন ১,৬৪৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪২ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৩১৪ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ২৯৫ জন,OÖ রাজ্যে ২৩৯ জন, Steiermark রাজ্যে ২১৮ জন,Kärnten রাজ্যে ১৪৬ জন,Salzburg রাজ্যে ১৪৫ জন,Vorarlberg রাজ্যে ১৪১ জন,Tirol রাজ্যে ১২৪ জন্য এবং Burgenland রাজ্যে ২৩ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৩৮,৮৫৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫,৩৭১ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৩,০৩,২১৩ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৩০,২৯০ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ৪৭৫ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ২,৮৮৭ জন। অবশিষ্ট আক্রান্তরা নিজ নিজ বাসায় আইসোলেশনে আছেন।
বিডিনিউজ ইউরোপ /২০ ডিসেম্বর / জই