ভিয়েনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপিত
ভিয়েনা থেকে,কবির আহমেদঃ ভিয়েনাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দ্বীপনা এবং নানাবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে আজ ৫০তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন করেছে। সকাল সকাল দশটায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে অস্ট্রিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত কর্তৃক জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। পরে তিনি দূতাবাসের অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
এরপর পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বিশেষ আলোচনা সভা শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন দূতাবাসের সিনিয়র কাউন্সিল কর্মকর্তা জুবায়দুল হক চৌধুরী ।
প্রথমেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর পরিবারের সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা, ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের সম্মানে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ ও প্রচার করা হয়। মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বানী পাঠ করেন বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনের দূতাবাস উপ প্রধান রাহাত বিন জামান এবং মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কাউন্সিলর মালিহা শাজাহান ।
করোনা পরিস্থিতির কারণে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি ও স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত অর্ধশতাধিক বাংলাদেশি অনলাইনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য নিয়ে সাধারণ আলোচনায় যোগদান করেন।
এই অনলাইন আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন, রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহিম,অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম, নজরুল ইসলাম,অষ্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম, অষ্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আক্তার হসেন,অষ্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সাধারনসম্পাদক সাইফুল ইসলাম কবির, অষ্ট্রিয়া- বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও ইউরো সমাচার সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা রুহিদাস সাহা, মিসেস জান্নাতুল ফরহাদ, ইয়াসিম মিয়া বাবু, মিসেস নাসরিন নাহিদ, রবিন মোঃ আলী, হাঙ্গেরি থেকে নওরিন মোস্তফা, আরিফ জামান,মেহদি হাসান, স্লভেনিয়া থেকে রাকিব হাসান রাফি প্রমুখ ।
দূতাবাসের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মোঃ তারাজুল ইসলাম-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সাধারণ আলোচনায় বক্তাগণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তাঁরা স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার দূরদর্শী নেতৃত্ব, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তি সংগ্রাম, স্বাধীনতা-উত্তর দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদান ও স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত
দূরদর্শী নানা নীতি সম্পর্কে বিশদ আলোচনা করেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন ও ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁরা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা অক্ষুন্ন রাখা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঠিক বাস্তবায়নের উপর আলোকপাত করেন। বক্তাগণ বাংলাদেশ সরকারের কাছে ভিয়েনাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ভিয়েনায় স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের দাবী জানান।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি তাঁর বক্তব্যে জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, সম্ভ্রমহারা মা-বোন ও নয় মাস ব্যাপী যুদ্ধে ত্যাগস্বীকারকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনবদ্য অবদান তুলে ধরেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ বর্তমান সরকারের নানা উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের তাত্পর্য সম্পর্কে আলোচনা করেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ভিয়েনাস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারের সাফল্য ও করোনার টিকা সংগ্রহে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন। সাধারণ পরিষদের ৭৫-তম অধিবেশনে প্রদত্ত
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি বলেন যে করোনার টিকাকে একটি বৈশ্বিক সর্বজনীন পণ্য (global public good) হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। এই টিকা যাতে সকল দেশ একই সাথে পেতে পারে সে বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
মান্যবর রাষ্ট্রদূত জানান টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি ও পেটেন্ট পেলে বাংলাদেশের অনেক ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বাংলাদেশেই করোনার টিকা উৎপাদনে সক্ষম। মান্যবর রাষ্ট্রদূত অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরিও স্লোভেনিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের এই মহামারির সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ প্রদান করেন।
আলোচনা সভা শেষে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের অব্যাহত শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন দূতাবাসের সিনিয়র কাউন্সিল কর্মকর্তা জুবায়দুল হক চৌধুরী।
বিডিনিউজ ইউরোপ /১৬ ডিসেম্বর / জই