• বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ইউরোপীয় ইউনিয়নে অভিবাসীদের সংখ্যা নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে অসুস্থ রেজওয়ানুল ইসলাম রায়হানের শয্যাপাশে দুধরচকী ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বোমা হামলায় ৩ সন্দেহভাজন গ্রেপ্তার বিচারের জন্য স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাওয়া হবে: ড.ইউনূস হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে ইসরায়েলে বিক্ষোভ পরিবর্তন যুব উন্নয়ন সংস্থার আয়োজনে- ফ্রি ব্লাড ক্যাম্পিং চিকিৎসক সংকট ‌ব্যাহত হচ্ছে ঝালকাঠিত‌ স্বাস্থ্যসেবা জার্মানিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে আগাম নির্বাচন বাকুতে প্রধান উপদেষ্টা ড.মুহাম্মদ ইউনূস মণিপুর রাজ্যে নতুন করে সিআরপিএফ-বিদ্রোহী সংঘর্ষে নিহত কমপক্ষে ১১ জন

অভিবাসীদের জন্য ইতালি তৈরি করল আশ্রয় কেন্দ্র আলবেনিয়ায়

কবির আহমেদ কূটনৈতিক বিশ্লেষক আন্তর্জাতিক ডেক্স থেকে বিডিনিউজ ইউরোপ
আপডেট : মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪

অভিবাসীদের জন্য ইতালি তৈরি করল আশ্রয় কেন্দ্র আলবেনিয়ায়। ইংলিশরা উগান্ডায় আশ্রয় কেন্দ্র তৈরি করেছিল এখনো বাস্তবায়ন করতে পারেনি। এদেরকে অনুসরণ করে ইউরোপের দেশ আলবেনিয়া কে বেঁছে নিয়েছে ইতালি। এখন থেকে যারা ইতালি তে অভি বাসন প্রার্থী হবেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আলবে নিয়ায় তৈরি আশ্রয় কেন্দ্র গুলো।কয়েক মাস বিলম্ব এবং বিতর্কের পর অবশেষে চালু হয়েছে আলবেনিয়া য় স্থাপিত ইতালির দুইটি আশ্রয়কেন্দ্র৷ ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার হওয়া অভিবাসীদের একাংশ কে এই কেন্দ্র দুইটিতে রাখা হবে৷সোমবার (১৪ অক্টোবর) ডি ডাবলিউ জানায়,গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) থেকে শেনজিন বন্দর এবং গজদার অঞ্চলের সাবেক সাম রিক ঘাঁটিতে নির্মিত আশ্রয় কেন্দ্রগুলো আনুষ্ঠা নিক ভাবে চালু হওয়ার তথ্য দিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷

প্রতি মাসে হাজার হাজার অভিবাসীকে ভূমধ্যসাগর থেকে আলবেনিয়ায় পাঠানোর এই প্রকল্পটি সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়িত হবে কিনা সেটি এখন দেখার বিষয়৷আলবে নিয়ায় দায়িত্বরত ইতালীয় রাষ্ট্রদূত ফ্যাব্রিজিও বুচি অভিবাসন কেন্দ্রগুলোতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘অভিবাসীদের স্বাগত জানাতে সবকিছু প্রস্তুত৷’’

এর আগে চলতি বছরের আগস্টে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো চালুর ঘোষণা দিয়েছিল ইতালি কর্তৃপক্ষ৷ শেষ পর্যন্ত অক্টোবরে আলোর মুখ দেখল বিতর্কিত এই প্রকল্প৷শেনজিন বন্দরের কেন্দ্রটিতে মূলত অভিবাসীদের আনার পর প্রথম প্রশাস নিক প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে৷

অপরদিকে, গজদার অঞ্চলে তিনটি ভিন্ন কাঠামো অভিবাসীদের থাকার জন্য ব্যবহার করা হবে৷ একটিতে যেসব অভিবাসীদের ‘ডিপোর্ট’ করা হবে, দ্বিতীয়টিতে আশ্রয়প্রার্থীদের এবং সবশেষ কেন্দ্রে যারা কোন অপরাধে যুক্ত থাকবেন তাদের রাখা হবে।ইতালীয়-আলবেনিয়ান এই প্রকল্পের লক্ষ্য প্রতি বছর ৩৬ হাজার অনিয়মিত অভিবাসীর অভ্যর্থনার ব্যবস্থাপনা করা৷

যেসব অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠানো যাবেএই চুক্তির পর অভিবাসীদের অনেকের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে যে সম্ভবত ভূমধ্যসাগর হয়ে আসা সবাইকে আলবেনিয়ায় পাঠানো হবে৷ প্রকৃতপক্ষে যেসব দেশকে ইতালি ‘নিরাপদ’ বলে মনে করে সেসব দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ায় পাঠাতে পারবে রোম৷ বর্তমানে বাংলাদেশ, মিশর, আইভরি কোস্ট এবং তিউনি শিয়াসহ মোট ২১টি দেশ নিরাপদ তালিকায় আছে৷

২০২৩ সালে এই চারটি দেশ থেকে মোট ৫৬ হাজার ৫৮৮ জন অভিবাসী ইতালিতে এসেছেন৷ইউরো পিয়ান কোর্ট অফ জাস্টিসের একটি সাম্প্রতিক রায়ে বলা হয়েছে,‘নিরাপদ’ হিসাবে বিবেচিত হতে হলে একটি দেশকে অবশ্যই সম্পূর্ণ নিরাপদ হতে হবে৷এই রায় দ্রুত প্রত্যাবাসন পদ্ধতির জন্য ইতালির জারি করা ২২টি ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। এছাড়া ইতালির প্রধানমন্ত্রীনজর্জা মেলোনি বলেছেন, অন্তঃসত্ত্বা, অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসী এবং ঝুঁকিতে থাকা অন্যান্য ব্যক্তি দের আলবেনিয়ায় পাঠানো হবে না।

প্রকল্পের ব্যয়:

এই চুক্তিটি সম্পূর্ণ সরকারের অর্থায়নে নিয়ন্ত্রিত একটি কাঠামো৷ জর্জা মেলোনি চলতি বছরের জুনে বলেছেন, পাঁচ বছরে এই স্কিমের জন্য ৬৭ কোটি ইউরো (৬৭০ মিলিয়ন) খরচ হবে৷ যা বর্তমানে ইতালির অভিবাসী অভ্যর্থনা কেন্দ্রগুলোর পেছনের মোট ব্যয়ের ৭.৫ শতাংশ।

তবে ইতালির এপিস্কোপাল কনফারেন্স বা বিশপদের সংগঠন অভিবাসীদের নিয়ে ইতালি.ও আলবেনিয়ার মধ্যের হওয়া চু্ক্তি প্রত্যাখ্যান করেছে। সংকট ‘সামলা নোর অক্ষমতা ঢাকতে’ সরকার অর্থ নষ্ট করছে বলে অভিযোগ তাদের।

এদিকে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, অর্থ ‘‘সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হচ্ছে না’’ এবং এটা “এমন একটি দেশের সঙ্গে অভিবাসন সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য ভালভাবে ব্যয় করা হচ্ছে যেটা ইইউ সদস্য রাষ্ট্র হওয়ার দৌড়ে আছে৷”

যেভাবে অভিবাসীদের পাঠানো হবে:

যেসব অভিবাসীদের ইতালির উপকূলরক্ষীরা ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করবেন তাদের মধ্যে নিরাপদ দেশের নাগরিকদের উদ্ধারের পর সরাসরি আলবেনিয়ায় পাঠানো হবে৷ যাদেরকে মানবিক উদ্ধার জাহাজগুলো উদ্ধার করবে তারা এই আওতায় পড়বেন না৷

আলবেনিয়ায় পাঠানোর ২৮ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের আশ্রয় আবেদন যাচাই বাছাই করা হবে৷ ইতালিতে বর্তমানে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণ করতে এই সময়সীমার চেয়ে অনেক বেশি সময় লাগে৷ যাদের আবেদন গৃহীত হবে তাদেরকে ইটালিতে নিয়ে আসা হবে৷

তবে যাদেরকে আলবেনিয়ায় পাঠানো হবে তাদের বেশিরভাগ অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কারণ যেসব অভিবাসীরা পাঠানো হবে তাদের দেশগুলোকে নিরাপদ বলে মনে করে রোম৷ যা আশ্রয় আবেদন মঞ্জুর করার সুযোগকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সীমিত করে৷ যাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করা হবে তাদেরকে নিজ দেশের ফেরত পাঠানোর আগে প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে আটক রাখা হবে৷

তবে প্রত্যাবাসনের এই প্রক্রিয়া ধীরগতির হবে৷ কারণ কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে বা প্রত্যাবর্তনের অনুমতি দিতে চায় না৷ এছাড়া যেসব আশ্রয়প্রার্থী তাদের আবেদন চলাকালে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে বের হতে পারবেন কিনা সেটি এখনও পরিষ্কার করেনি কর্তৃপক্ষ৷ ইতালিতে আসার পর অনেক অভিবাসী আশ্রয়কেন্দ্র থেকে উধাও হয়ে যায় এবং পরবর্তীতে তারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে৷

রোমের কর্মকর্তারা বলেছেন, এই চুক্তিটি ইতালির আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলোতে আসা অতিরিক্ত ভিড় কমাতে সহায়তা করবে৷ তবে দেশটির সমালোচকেরা বলছেন, এটি আফ্রিকার অভিবাসীদের সমুদ্রে যাওয়া থেকে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে করা হচ্ছে৷ কারণ তাদেরকে শেষ পর্যন্ত আলবেনিয়ায় যেতে হবে৷ আলবেনিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশ নয় এবং অর্থনৈতিক ভাবেও দেশটি ধনী দেশ নয়৷

চুক্তি থেকে আলবেনিয়া যা পাবে:

আলবেনিয়া দীর্ঘদিন ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) সদস্য হওয়ার চেষ্টা করছে৷ জর্জা মেলোনিকে সহায়তার মাধ্যমে রাজধানী তিরানা ইইউ সদস্য পদ পেতে ইতালির সমর্থন নিশ্চিত করার আশা করছে।এছাড়া এই চুক্তির মাধ্যমে আলবেনিয়া ইউরোপের বাকি অংশকেও দেখাতে চায় যে, তিরানা ইইউকে সাম্প্রতিক বছরগুলোর সবচেয়ে জটিল সমস্যাগুলো মোকাবিলায় সহায়তা করতে ইচ্ছুক৷

সাধারণ আলবেনিয়ান নাগরিকেরাও বলছেন, এটি ইতালিকে ধন্যবাদ জানানোর একটি উপায়৷ ১৯৯১ সালে কমিউনিজমের পতনের পর দারিদ্র্য থেকে পালিয়ে আসা হাজার হাজার আলবেনিয়ান ইতালিতে পাড়ি দিয়েছিলেন।

bdnewseu/15October/ZI/Italy


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ