জার্মানি অনিয়মিত অভিবাসীদের তুরস্কে ফেরত পাঠানো বাড়িয়েছে।জার্মান ও তুরস্কের সরকারের মধ্যে হওয়া একটি নতুন চুক্তির অধীনে আরো বেশি সংখ্যক প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীকে তুরস্কে ফেরত পাঠানো শুরু করেছে জার্মানি৷মঙ্গলবার (১ অক্টোবর, বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিষয় টিকে অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে একটি ‘বড় পদক্ষেপ’ হিসাবে দেখছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ সম্প্রতি জার্মানির সংবাদপত্র ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুং (এফএ জেড) জানিয়েছে, একটি নতুন চুক্তির আওতায় তুরস্কের প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এই চুক্তির অধীনে, অন্তত দুই শতাধিককে ইতিমধ্যেই ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ সংবাদপত্রটি বলছে, আঙ্কারা প্রতি সপ্তাহে পাঁচশ জন পর্যন্ত ফেরত নেওয়ার প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে৷ যদিও জার্মানির সঙ্গে এমন চুক্তির বিষয়টিকে অস্বীকার করেছে তুরস্ক সরকার৷
উল্লেখ্য যে,সিরিয়া ও আফগানিস্তানের পর জার্মানিতে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করা মানুষের সংখ্যায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে তুরস্ক৷ কিন্তু তুর্কি আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুরের অনুপাত ১০ শতাংশেরও নিচে৷ অভিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা প্রো অ্যাসিল বলছে, জার্মানিতে তুর্কি আশ্রয়প্রার্থীদের বেশিরভাগই কুর্দি সম্প্রদায়ের।
এফএজেড জানিয়েছে, জার্মান ও তুর্কি সরকারের মধ্যে কয়েক মাসের আলোচনার পর এই চুক্তিটি হয়েছে৷ জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার বলেছেন, ‘‘আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করেছি৷ এখন তুরস্কে প্রত্যাবাসন আরো দ্রুত এবং কার্যকরভাবে করা যেতে পারে৷ যেসব তুর্কি নাগরিকের জার্মানিতে থাকার অনুমতি নেই তাদের আরো দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে৷’’ফুঙ্কে মিডিয়া গ্রুপকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে এটি একটি বড় পদক্ষেপ৷’’
এমন কোনো চুক্তি হয়নি: তুরস্ক
জার্মানির সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরটি প্রত্যাখ্যান করে তুরস্ক সরকার জানিয়েছে, প্রত্যাখ্যাত তুর্কি নাগরকিদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো নিয়ে জার্মানির সঙ্গে কোনও চুক্তি হয়নি৷ তারা আরো জানিয়েছে, গত বছর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ান এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের মধ্যে এ ধরনের চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে যে দাবি করা হয়েছে, তারও কোনো সত্যতা নেই৷
গুজব ও মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে কার্যকর তুরস্কের একটি সরকারি দপ্তর সপ্তাহান্তে জানিয়েছে, ‘‘জার্মানির সংবাদ মাধ্যমে আসা খবরটি সত্য নয়৷ আমাদের নাগরিকদের ব্যাপকভাবে ফেরত পাঠানো ইস্যুতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি৷ ভিত্তিহীন অভিযোগে বিশ্বাস করবেন না৷’’
তুরস্কের এমন অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজারের সঙ্গে কথা বলেছে জার্মান বার্তা সংস্থা ডিপিএ৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান সরকার ‘ফেরত পাঠানোর বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বাড়াতে আশ্রয়প্রার্থীদের মূল দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে৷’
তুরস্ক এ বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার জানিয়ে ফেজার বলেন, ‘আলোচনার বিষয়গুলোও গোপনীয়৷’
সংখ্যায় কম হলেও প্রত্যাবাসন চলমান ডিপিএ তাদের প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দিয়েছে, ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি একটু ধীর লয়ে এবং বিকেন্দ্রীকরণ প্রক্রিয়ায় করা হচ্ছে৷
জার্মানির কূটনৈতিক একটি সূত্র ডিপিএ-কে জানিয়েছে, তুর্কি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় বাধা দিয়ে আসছে তুরস্ক৷ ফলে, ২০২৩ সালে এক হাজার তিনশ তুর্কিকে জার্মানি থেকে ডিপোর্ট করা সম্ভব হয়েছে৷ আর এ বছরের প্রথম ছয় মাসে সংখ্যাটি মাত্র ৪৪১৷ জার্মানি থেকে তুরস্কে ফেরত পাঠানোর তালিকায় রয়েছে অন্তত সাড়ে ১৫ হাজার তুর্কি নাগরিক৷
তুর্কি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর বিষয়টি আলোচনায় এলো এমন সময়ে যখন জার্মান সরকার অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ে বেশ রাজনৈতিক চাপে রয়েছে৷ চ্যান্সেলর শলৎস গত বছরের অক্টোবরে বলেছিলেন, অবশেষে ‘বড় পরিসরে’ ফেরত পাঠানোর সময় এসেছে৷ তুর্কি নাগরিকদের ফেরত পাঠানোকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে সমালোচনা করেছে প্রো অ্যাসিল৷ তারা বলছে, তুরস্কে বিরুদ্ধ মতকে কঠোরভাবে দমন করা হয় এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে৷
bdnewseu/1October/ZI/Migration