মধ্যপ্রাচ্য থেকে অনিয়মিত অভিবাসী প্রবাহের আশঙ্কায় গ্রিস।সীমান্ত বেড়া নির্মাণে অর্থায়নে অনাগ্রহী ইইউ, মধ্য. প্রাচ্য থেকে অভিবাসীপ্রবাহের শঙ্কায় গ্রিস।,অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী তুরস্কের সঙ্গে নতুন করে সীমান্ত বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে গ্রিস৷ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) সেখানে অর্থায়নে রাজি হোক না হোক পরিকল্পনা টিকে এগিয়ে নিতে চায় এথেন্স৷ কিন্তুইউরোপীয় কমিশন বলছে, এসব ক্ষেত্রে আরো ‘স্মার্ট’ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত৷ গ্রিস শঙ্কা করছে, মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাতের কারণ ইউরোপমুখী নতুন অভিবাসন প্রবাহ তৈরি হতে পারে৷ এজন্য লেবানন ও ফিলিস্তিনির সঙ্গে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিচ্ছে দেশটি৷
তুরস্কের সঙ্গে থাকা উত্তর-পূর্ব স্থল সীমান্তে ২০১২ সাল থেকে বেড়া নির্মাণ শুরু করে গ্রিস৷ এরপর থেকে নিজস্ব তহবিল দিয়ে সেই বেড়াকে সম্প্রসারণের কাজ করে যাচ্ছে দেশটি৷ অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কঠোরভাবে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শুরু করছে জার্মানি৷
এরপরই গ্রিসের বেড়া নির্মাণ সম্পর্কিত আলোচনাটি আবারও শুরু হয়৷ কারণ, অনিয়মিত অভিবাসীরা প্রধানত ইতালি, গ্রিস হয়েই পশ্চিম ইউরোপে প্রবেশ করে। তাই অনিয়মিত অভিবাসনে প্রথম সারির দেশ হিসাবে ইউরো পের বাহ্যিক সীমানা সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে গ্রিসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জার্মানি৷
তারপরেই বেড়া সম্প্রসারণে অর্থায়নের অনুরোধ জানিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চিঠি দিয়েছে এথেন্স৷গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কিরিয়াকোস মিৎসোতাকিস বলেন, ‘‘ইউরোপ সঙ্গে থাকুক বা না থাকুক নতুন বেড়া নির্মাণ হবেই৷’’ অবশ্য ইউরোপীয় কমিশন অবশ্য এই ইস্যুতে অর্থায়নে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি৷ তারা বলছে, নিজেদের সীমান্ত কিভাবে সুরক্ষিত রাখতে হয়, তা নিয়ে সদস্য দেশগুলো নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন৷
ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র ইউর্যাকটিভকে বলেন, “সদস্য দেশগুলোকে অবশ্যই ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্হিঃসীমান্তের সুরক্ষা দিতে হবে৷’’ ইইউ কর্মকর্তা আরো বলেন, কার্যকর বর্হিঃসীমান্ত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন করা জোটের একটি অগ্রাধিকার এবং এজন্য সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণ করাও দরকার৷
মুখপাত্র আরো বলেন, ‘‘ইউরোপীয় সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াটি সমন্বিত, যৌথ পরিচালন এবং নজরদারি ব্যবস্থা উন্নয়নের মতো স্মার্ট ও আধুনিক হওয়া উচিত এবং আমাদের সেদিকেই মনোযোগ দিতে হবে৷’’
মধ্যপ্রাচ্য ও তুরস্ক নিয়ে ভাবনা:
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর তুরস্ক থেকে অভিবাসী আগমন বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছে গ্রিস৷ এসব অভিবাসী মূলত সমুদ্রপথ ব্যবহার করেই আসছেন, তুরস্কের সঙ্গে থাকা স্থল সীমান্ত দিয়ে নয়৷অনেকেই মনে করছেন, অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে তুরস্ক এবং গ্রিসের মধ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই মূল চাবিকাঠি৷ ফলে, এথেন্স সেদিকেও নজর দিয়েছে৷
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়্যেপ এর্দোয়ানের সঙ্গে ৩০ মিনিটের একটি বৈঠক করেছেন গ্রিক প্রধানমন্ত্রী মিৎসোতাকিস৷ ওই বৈঠকে মানবপাচার চক্রগুলো ভেঙে দেয়ার বিষয়ে কাজ চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন দুই দেশের দুই শীর্ষ নেতা৷
গ্রিক সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বৈঠকে অভিবাসন ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়ানোর মতো ইতিবাচক আলোচনার বিষয়ে জানানো হয়েছে৷ কিন্তু এর্দোয়ান তার কয়েক ঘণ্টা আগেই প্রকাশ্যে সাইপ্রাসকে দুটি দেশে ভাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন৷ তার এই মন্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে গ্রিস ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তাই ওই বৈঠক কতোটা ফলপ্রসূ হয়েছে তা নিয়ে ধোঁয়াশা রয়ে গেছে৷
এদিকে ইসরায়েল লেবাননে স্থল আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে প্রকাশিত খবর এথেন্সকে ভাবিয়ে তুলেছে৷ কারণ, লেবাননে সিরীয় ও ফিলিস্তিন মিলিয়ে অন্তত ১৫ লাখ শরণার্থী রয়েছেন৷ লেবানন তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে, ফলে দেশটিতে আক্রমণ হলে বিপুলসংখ্যক অভিবাসী তুরস্ক হয়ে গ্রিসে আসার চেষ্টা করতে পারে, যা এথেন্সের জন্য খুবই অস্বস্তিকর৷
লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ বো হাবিবের সঙ্গে দেখা করেছেন গ্রিক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিওরগোস গেরাপেত্রিতিস৷ আহত এবং চিকিৎসা প্রয়োজন এমন লেবানীজ নাগরি কদের সহায়তা দিতে ইইউ পর্যায়ে পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি৷ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রধান মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গেও দেখা করেছেন তিনি।
bdnewseu/29September/ZI/Politics