ভারতের গুজরাটের জুনাগড় শহরের মালিকানা দাবি করল পাকিস্তান।ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের জুনাগড় শহরকে নিজেদের অঞ্চলের পুরো দাবি আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছে পাকিস্তান।সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র মমতাজ জাহরা বালোচ সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুরোনো এই দাবি নতুন করে তুলে ধরেছেন।ভারতের গুজরাটের জুনাগড় শহরের মালিকানা ইস্যুতে পাকিস্তানের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে ওই অঞ্চলে ভারতের অবৈধ দখলদারিত্বের নিন্দা জানি য়েছেন মমতাজ। তিনি বলেছেন, ১৯৪৮ সালে দখল করা ভারতের গুজরাটের জুনাগড় শহর সম্পর্কে পাকিস্তানের নীতি ‘‘সবসময়ই পরিষ্কার’’।‘‘জুনাগড় পাকিস্তানের সাথে যুক্ত ছিল। বিষয়টিকে ঐতি হাসিক ও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে পাকিস্তান। জুনাগড় পাকিস্তানের অংশ ছিল। শহরটিকে ভারতের অবৈধভাবে দখল করে রাখাটা জাতিসংঘের সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।’’
‘‘পাকিস্তান সবসময় জুনাগড় ইস্যুটি রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ফোরামে উত্থাপন করে আসছে এবং এর শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়’’ বলে মন্তব্য করেছেন মমতাজ। তিনি বলেন, জুনাগড় ইস্যুকে ভারতের অবৈধভাবে দখলকৃত জম্মু ও কাশ্মিরের মতো একটি অমীমাংসিত অ্যাজেন্ডা হিসাবে বিবেচনা করে পাকিস্তান।তবে জুনাগড়কে নিজেদের শহর বলে পাকিস্তানের এই দাবি এবারই নতুন নয়। এর আগে, ২০২০ সালে ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলকে নিজেদের রাজনৈতিক মানচিত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছিল পাকিস্তান।
ওই সময় দেশটির মন্ত্রিসভায় নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রের অনুমোদনও দেওয়া হয়। সেই মানচিত্রে ভারতের গুজরাটের জুনাগড় ও মানবগড় শহর এবং স্যার ক্রিক অঞ্চলকেও পাকিস্তানের অংশ বলে দাবি করা হয়েছিল।সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের সাথে ইতিবাচক ও শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে পাকিস্তানের আগ্রহের কথা জানান মমতাজ। বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কের বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র বলেছেন, উভয় দেশের সরকারের সহযোগিতায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও উন্নতি ঘটবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের শক্তিশালী সম্পর্ক উভয় দেশের জনগণের জন্যই উপকারী।
জুনাগড় মুসলিম শাসক দ্বারা শাসিত ব্রিটিশ ভারতের একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে এই রাজ্যকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জুনাগড়ের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দে জুনাগড়ের ফৌজদার মুহাম্মদ বাহাদুর খানজী মুঘল শাসনকর্তাকে জুনাগড় থেকে বিতাড়িত করে স্বাধীনতা ঘোষণা করে নবাব উপাধি ধারণ করেন ও জুনাগড় রাজ্যে বাবি রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন।
তার পুত্র প্রথম মুহাম্মদ মহবত খানজী ১৭৫৮ খ্রিষ্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন কিন্তু দুই বছরের মধ্যে তার মাতুল মুজফফর খানজী তাকে সিংহাসনচ্যূত করে বন্দী করেন। ১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে রাধনপুর রাজ্যের নবাব জওয়ান মর্দ খান মুজফফর খানজীকে পরাজিত করে জুনাগড় রাজ্যকে নিজের রাজ্যভুক্ত করলে প্রথম মুহাম্মদ মহবত খানজী কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে পুনরায় সিংহাসন লাভ করেন।
এই রাজবংশের ষষ্ঠ নবাব দ্বিতীয় মহম্মদ বাহাদুর খানজীর শাসনকালে ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দে ঊমর মুখসম নামক আনন্দ রাও গায়কওয়াড়ের একজন কর্মী দ্বিতীয় মহম্মদ বাহাদুর খানজীর সাথে চুক্তি করে তার নিকট হতে অমরেলি, কোডিনর, দামনগর ও শিয়ানগরের কিছু অংশ বরোদা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
পরবর্তীকালে ঊমর মুখসম নবাবের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করলে নবাব ব্রিটিশদের সাহায্য প্রার্থনা করেন। ১৮১৬ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা তাকে ঊমর মুখসমকে জুনাগড় থেকে বিতাড়ণ করেন। ১৮২২ খ্রিষ্টাব্দে নবাব প্রত্যক্ষ ভাবে কর সংগ্রহের অধিকার ত্যাগ করেন ও ব্রিটিশদের মাধ্যমেই কর সংগ্রহের প্রতিশ্রুতি দেন।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৮ই জুলাই ভারতীয় স্বাধীনতা অধিনিয়ম ১৯৪৭ পাশ হলে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি রাষ্ট্রের জন্মের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি দেশীয় রাজ্যগুলিকে এই দুই রাষ্ট্রে যোগ দেওয়া বা স্বাধীন থাকার মধ্যে একটি পথ বেছে নেওয়ার কথা বলা হয়।রাজ্যের একাদশ নবাব তৃতীয় মুহাম্মদ মহবত খানজী ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ই সেপ্টেম্বর পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে তার রাজ্যকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করেন।
ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জুনাগড় রাজ্যে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হলে তিনি ২৪শে অক্টোবর সপরিবারে পাকিস্তান চলে যান। ঐ বছর ৯ই নভেম্বর ভারতীয় আধিকারিকেরা জুনাগড় পৌঁছে রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্বভার গ্রহণ করলে নবাবী শাসনের বিলোপ ঘটে।
bdnewseu/11September/ZI/india