• বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪ পূর্বাহ্ন
বিজ্ঞপ্তি
প্রিয় পাঠক আমাদের সাইটে আপনাকে স্বাগতম এই সাইটি নতুন ভাবে করা হয়েছে। তাই ১৫ই অক্টোবর ২০২০ সাল এর আগের নিউজ গুলো দেখতে ভিজিট করুন : old.bdnewseu24.com

বিক্ষুব্ধ ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্য মণিপুর

কবির আহমেদ কূটনৈতিক বিশ্লেষক আন্তর্জাতিক ডেক্স থেকে বিডিনিউজ ইউরোপ
আপডেট : মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

বিক্ষুব্ধ ভারতের সেভেন সিস্টার্স রাজ্য মণিপুর।ডিসি অফিসে ভারতের পতাকা নামিয়ে সাতরঙা পতাকা উড়াল মণিপুরের শিক্ষার্থীরা।সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) ভারতের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’ তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়,উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মণিপুর রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ভবনে হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।স্থানীয় সময় সোমবার সকালের দিকে মণিপুরের রাজভবন ও জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে হামলা চালায় তারা। এ সময় ডিসি অফিসে টানানো পতাকা নামিয়ে সাতরঙা একটি পতাকা উড়ায় তারা।ইন্ডিয়া টুডে আরও জানায়, মণিপুরের শিক্ষার্থীরা সেখানকার প্রধান প্রধান সরকারি ভবনে হামলা চালিয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজভবন ও থৈবালের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে।

এর আগে, রাজ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তনের দাবিতে রাজধানী ইম্ফলের রাস্তায় নেমে আসে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। এ সময় তারা রাজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারি প্রশাসন ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করে।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা রাজ্যের বর্তমান নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে অপসারণ ও মণিপুরে শান্তি ফেরাতে রাজ্য সরকারের হাতে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি দাবি জানায়। বিক্ষোভকারীরা বলছে, চলমান সংকটকে আরও ভালোভাবে মোকাবেলা করার জন্য নিরাপত্তা অভিযানের দায়িত্ব স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নেওয়া উচিত।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেছে। নিরাপত্তা বাহি নীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছেন। পরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মণিপুরের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সরকারি অফিস থেকে একটি পতাকা নামিয়ে সেখানে নতুন করে আরেকটি পতাকা উড়ানোর ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিক্ষার্থীরা নতুন করে যে পতাকাটি উড়িয়েছেন সেটি কাঙ্গলিপাক বা সালাই ট্যারেট পতাকা বলে ধারণা করা হচ্ছে। মণিপুরের শিক্ষার্থীদের সরকারি অফিসে নতুন পতাকা উত্তোলনের এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থীরা মণিপুরে ভারতের তেরঙা জাতীয় পতাকা নামিয়ে নতুন একটি সাতরঙা পতাকা উত্তোলন করেছে বলে জানা গেছে। সংবাদ মাধ্যম আরও বলছে, রাজ্যের থাউবাল জেলার ডেপুটি কমিশ নারের (ডিসি) কার্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। ভবনের ছাদে উঠে শিক্ষার্থীরা একটি সাত রঙের পতাকাউড়িয়েছে। এই ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত লোকজনকে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।

থাউবালের ডেপুটি কমিশনার এ সুভাষ সিং সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, বিক্ষোভকারীরা একটি পুরোনো সালাই ট্যারেট পতাকা নামিয়ে সেখানে নতুন পতাকা টানিয়ে দিয়েছে। আর এই ঘটনাটি ডিসি অফিসের প্রধান ভবনে ঘটেনি, বরং মূল ফটকে ঘটেছে বলে দাবি করেছেন তিনি।

‘‘কাঙ্গলিপাক বা সালাই ট্যারেট পতাকা’’ একটি আয়তাকার সাত রঙের পতাকা। প্রাচীনকালের মেইতি জাতিগোষ্ঠীর সাতটি বংশের প্রতিনিধিত্বের কথা তুলে ধরতে মণিপুরে অনেকেই এই পতাকা ব্যবহার করেন।

সুভাষ সিং বলেন, শিক্ষার্থীরা একটি পুরোনো সালাই ট্যারেট পতাকা নামিয়ে নতুন পতাকা উত্তোলন করেছে। তবে নতুন পতাকাটি কিছুক্ষণ পরই নামিয়ে ফেলা হয়েছে। বিষয়টি পরিষ্কার করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা সাধারণত প্রধান ফটকে পতাকা উত্তোলন করি না। আমাদের মূল অফিস ভবনে তেরঙা উড়ানো হয়।’’

উল্লেখ্য যে,মায়ানমার সীমান্তবর্তী মণিপুর রাজ্যে গত
কয়েকদিনে দফায় দফায় গুলি বিনিময়, বোমা বিস্ফোরণ, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা, বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু, মণিপুর রাইফেলসের দু’টি ব্যাটেলিয়নের অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্রশস্ত্র লুটের চেষ্টা-সহ একাধিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অবস্থা সামাল দিতে মোতায়েন করা হয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও যৌথ বাহিনী।

এদিকে, শান্তি ফেরানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রতিবাদে নেমেছেন বহু মানুষ। রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে বিপুল সংখ্যক নারী ইম্ফলে রাস্তায় নামেন। রাজ্যে শান্তি ফেরানোর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন তারা।

এই আবহে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন মণিপুরের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য প্রশাসন সচেষ্ট। সাম্প্রতিক সহিংস সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের পাশে রয়েছে তার রাজ্যের বিজেপি সরকার। নিহত এক ব্যক্তির পরিবারের হাতে ক্ষতিপূরণের টাকাও তুলে দেন তিনি।

মণিপুর পুলিশের কর্মকর্তা কে খাবিব (আইজিপি, ইন্টেলিজেন্স) বলেন, “রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনাগুলির কারণে, মণিপুর পুলিশ যৌথ বাহিনীর সাথে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেলা সদরে রয়েছেন এবং পরিস্থিতি মনিটর করছেন।”

ড্রোনের সাহায্যে হামলা চালানো হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। পুলিশের সন্দেহ হামলাকারী সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি সম্প্রদায়ভুক্ত। তারপর থেকে রাজ্যের একাধিক জায়গায় হামলা হয়েছে এবং কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশের সঙ্গেও কুকি সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্যদের সংঘর্ষ হয়েছে বলে অভিযোগ।

দিল্লির মেইতেই আহ্বায়ক কমিটির সেরাম রোজেশ বিবিসি বাংলাকে বলেন, “মণিপুরের বর্তমান পরিস্থিতি কিন্তু খুবই উদ্বেগজনক। আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হস্তক্ষেপ করার জন্য। মেইতেই গোষ্ঠীর মানুষের উপর নির্মম অত্যাচার চলছে।” সাম্প্রতিক সময়ে আক্রমণের জন্য যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটা কারা জোগান দিচ্ছে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

bdnewseu/10September/ZI/Monipory


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ