• মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম
বিজ্ঞপ্তি
প্রিয় পাঠক আমাদের সাইটে আপনাকে স্বাগতম এই সাইটি নতুন ভাবে করা হয়েছে। তাই ১৫ই অক্টোবর ২০২০ সাল এর আগের নিউজ গুলো দেখতে ভিজিট করুন : old.bdnewseu24.com

নারী ও শিশুসহ আটককৃত নিরাপরাধ “বম” দের মুক্তি দাবি দেশের ৫৫ নাগরিকের

ন্যাশনাল ডেক্স থেকে বিডিনিউজ ইউরোপ
আপডেট : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নারী ও শিশুসহ আটককৃত নিরাপরাধ বমদের মুক্তি দাবি দেশের ৫৫ নাগরিকের। “কেএনএফের ‘সন্ত্রাসী’ তৎপরতা দমনের নামে যৌথবাহিনী অভিযানের নামে কালেকটিভ পানিশমেন্ট বা কতিপয়ের অপরাধে পুরো বম জনগোষ্ঠীকে শাস্তি দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। একজন কেএনএফ সদস্যের অপরাধের জন্য তার স্ত্রী সন্তানকে বা তার কমিউনিটির মানুষকে গ্রেপ্তার করা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন। ২০২৩ থেকে ২০২৪ এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার বম জনগোষ্ঠী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মিজোরামে রাজ্যে দেশান্তরিত হয়েছে এবং তাদেরকে ফিরিয়ে আনা আনার ব্যবস্থা করতে হবে।”

৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ছাত্র-শিক্ষক, লেখক, গবেষক, শিল্পী, কবি, সাংবাদিক, কৃষক, অধিকারকর্মী, রাজনৈতিক সংগঠক, আইনজীবী, চিকিৎসকসহ নানান শ্রেণি-পেশার ৫৫ নাগরিকের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ””ছাত্র জনতার গণঅভ্যূথানের মাধ্যমে স্বৈরশাসকের পতনের পরে পাহাড়ে ও সমতলে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সম্ভাবনার ভিন্ন ভিন্ন বাস্তবতা আমাদেরকে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করেছে। সমতল যখন নিপীড়নমুক্ত ভবিষৎ গড়ার সম্ভাবনায় টগবগ করছে তখন বান্দরবানে আদিবাসী বম জনগোষ্ঠীর অনেকে বিনা অপরাধে জেল খাটছেন। যখন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের উৎখাতকে সমতলের দেয়ালে দেয়ালে গ্রাফিতিতে উদযাপন করা হয়েছে, তখন তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী ছাত্র জনতা স্বাধীনভাবে গ্রাফিতিতে তাদের কথা বলতে পারেনি, সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়েছে। আমরা মনে করি, মানবাধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সিলেক্টিভ (সমতলে দেব, পাহাড়ে দেব না) হতে পারে না, বরং এটি এক দেশে দুই শাসন ব্যবস্থার ইঙ্গিত বহন করে।’’

”আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, গত এপ্রিল মাসে বান্দরবানের রুমা ও থানচিতে কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কর্তৃক সংগঠিত ব্যাংক ডাকাতির ঘটনার জের ধরে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তাবাহিনী যৌথ অভিযানের নামে বম জাতিসত্তার উপর যে নিপীড়নমূলক কর্মকান্ড শুরু করেছিল তা এখনও অব্যাহত আছে। গত ছয় মাসে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মিলে সন্ত্রাস দমনের নামে নির্বিচারে অন্তত দেড়শতাধিক জনসাধারণ আদিবাসী নাগরিককে আটক করেছে। আটককৃতদের মধ্যে ২৭ জন নারী, ৪ জন শিশু এবং ১৪ জন শিক্ষার্থী আছেন, যারা বিনা অপরাধে মাসের পর মাস জেল খাটছেন। বিনা অপরাধে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারীও কারাভোগ করেছেন এবং কারাগারেই সন্তান জন্ম দিতে বাধ্য হয়েছেন।”
বিবৃতিতে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হল- (১) অবিলম্বে বম জনগোষ্ঠীকে কালেক্টিভ পানিশমেন্ট প্রদানের কৌশল প্রত্যাহার করতে হবে এবং নির্বিচারে আটককৃত বম বাসিন্দাদের মুক্তি দিতে হবে। (২) যৌথবাহিনীর অভিযানকালে নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত সকল মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চত করতে হবে এবং যে সকল আইন শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বম জনগোষ্ঠীর উপর মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে। (৩) পণ্য ক্রয়-বিক্রয় ও যাতায়াতের উপর সমস্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। (৪) শিক্ষার্থী ভানথাং পুই বম সহ অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ও তাদের মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী কর্তৃক বম জাতিসত্তার লোকজনকে বিচার বহিঃর্ভুত হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত মাধ্যমে জড়িতদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। (৫) পার্শ্ববর্তী দেশের মিজোরাম ও বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নেওয়া বম, ম্রো, ত্রিপুরাদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনতে হবে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “ছয় মাসের (এপ্রিল-অগাস্ট) অধিককাল ধরে প্রতিদিন বান্দরবানের বিভিন্ন নিরাপত্তা চৌকিতে বম যাত্রীদের হেনস্তা করা হচ্ছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, বান্দরবানে আদিবাসীদেরকে কাজে যাতায়াতের সময় পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে এবং তারা নানা জেরার মুখোমুখি হচ্ছেন। গ্রেপ্তার-হয়রানির ভয়ে অনেকে ফসল তুলতে পারেনি, ফল নষ্ট হয়েছে বাগানে, আয়-রোজগারের পথ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। রুমা উপজেলায় লাইরুনপি পাড়া, বেথেল পাড়া, আর্থাপাড়া সাধারণ বম জনগোষ্ঠীদের অস্থায়ী সেনাবাহিনী ক্যাম্পে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে।”
“আমরা আরও জেনেছি যে, বমসহ অপরাপর জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসীদের পাঁচ কেজির অধিক চাল বহনের উপর নিরাপত্তা বাহিনীরা নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি আছে। এমনকি ফার্মাসি থেকে ওষুধ কিনতে হলেও নিরাপত্তা চৌকি থেকে অনুমতি নিতে হয়।”
”তবে বান্দরবানের কেএনফকে নিরস্ত্র (disarming KNF) করার অভিযানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর এ ধরণের নিপীড়ন ও হয়রানির ঘটনা এবারেই প্রথম নয়। এর আগে ২০২৩ সালের মে মাসে রুমা এলাকার আদিবাসীরা অভিযোগ করেছেন, কিভাবে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্যও তাদের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের থেকে আলাদা করে অনুমতি নিতে হত। এ সময় আরও অভিযোগ উঠেছিল যে, এই অভিযানে জেনেভা কনভেনশনে প্রোটোকল ভেঙ্গে (আর্টিকেল ৫১(৭)) বাংলাদেশ সামরিক বাহিনী রুমা ও রেমাক্রি ইউনিয়ন থেকে বম, ম্রো ও ত্রিপুরা পুরুষকে মালামাল-বহনকারী হিসেবে সামরিক অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য করেছিল এবং বিভিন্ন অভিযানে তাদের সম্মুখসারিতে রেখে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।”
“এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বম জনগোষ্ঠী, সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী জনজীবনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যাবে না। পাহাড়ে সেনাশাসন রেখে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।”

নারী ও শিশুসহ আটককৃত নিরাপরাধ বমদের মুক্তি দাবি করেন যে ৫৫ নাগরিক, তাঁরা হলেন-
আদিবাসী অধিকার সুরক্ষাকর্মী ও মানবাধিকার কর্মী রাণী ইয়েন ইয়েন, লেখক রেহনুমা আহমেদ, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস, বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন সদস্য মেঘনা গুহঠাকুরতা, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, চিকিৎসক ড. হারুন উর রশীদ, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী নৃবিজ্ঞানী সায়েমা খাতুন, লেখক-অনুবাদক ওমর তারেক চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল নোমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ নিজার, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক মাহা মির্জা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহা: সোলাইমান চৌধুরী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফারহা তানজীম তিতিল, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় সরকার, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, মার্সার ইউনিভার্সিটি কলেজ অব ফার্মেসির সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সাদাফ নূর, গবেষক হেনা শামস আহমেদ, সাংবাদিক সাইদিয়া গুলরুখ, সঙ্গীত শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান, কৃষক ও সংস্কৃতিকর্মী ব্রাত্য আমীন, কবি বায়েজিদ বোস্তামী, নারী অধিকার কর্মী রেক্সোনা পারভীন সুমি, নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত,গবেষক ও অধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া, শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ, শিক্ষক ও কবি রুমিয়া রুমী, শিল্পী ও শিক্ষক বীথি ঘোষ, লেখক ও শিক্ষক সফিক ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অফ লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রভাষক অলিউর সান, ইউপিডিএফের সংগঠক মাইকেল চাকমা, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ মহানগর কমিটির সম্পাদক ইকবাল কবীর, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সম্পাদক মফিজুর রহমান লাল্টু, সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক সংগঠক গোলাম মোস্তফা, সাংবাদিক অনিক রায়, সাবেক ছাত্রনেতা সুনয়ন চাকমা, এক্টিভিস্ট মার্জিয়া প্রভা, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী তানইয়া নাহার, পরিবেশবার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল, স্পেস এ ফাউন্ডেশন ফর পিস এন্ড কেয়ারের সম্পাদক ও মানবাধিকারকর্মী মোশফেক আরা শিমুল, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সভাপতি অঙ্কন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী সভাপতি দিলীপ রায়, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী, ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়ার গ্র‍্যাজুয়েট শিক্ষার্থী তামান্না মাকসুদ পর্ণা, শিক্ষার্থী রবেন বম ও লালরিথাং বম।
bdnewseu/7 September/ZI/Politics


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ