চরফ্যাশনের চেয়ারম্যানকে জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরালো বিক্ষুব্ধ জনতা।আওয়ামী লীগ সরকার দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা কালীন সময় টানা ১৫ বছর ধরে এলাকার মানুষকে নির্মম ভাবে নির্যাতন করেছিল এক ইউনিয়ন পরিষদের দুষ্ট চেয়ারম্যান। যার ফলশ্রুতিতে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর স্থানীয় নির্যাতিত বিক্ষুব্ধ জনতা ওই চেয়ারম্যানকে বাড়ি থেকে ধরে বাজারে নিয়ে জুতার মালা পরিয়ে সাড়া এলাকায় ঘুরিয়ে নৌবাহিনীর হাতে সোপর্দ করেছেন। যার বেশকিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আবু বক্করপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই চেয়ারম্যানের নাম মোঃ সিরাজ জমাদার। তিনি আবু বক্করপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি)চেয়ারম্যান । টানা ৩ বার তিনি ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়াও একই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ও সভাপতি পদেও ছিলেন তিনি।
এলাকাবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি স্থানীয় জনগণকে নির্মম নির্যাতন করেছিলেন। তার নির্যাতনের হাত থেকে কেউই রেহাই পায়নি সাধারণ মানুষ। বেধড়ক মারধর করতেন সাধারণ মানুষকে দেখাতেন ভয়ভীতি এসব ভয়ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিতেন জায়গা-জমি এভাবেই দখল করে নিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি একদল সন্ত্রাসীকে আশ্রয় দিতেন। যাদের মাধ্যমে তিনি জনগণের ওপর অতর্কিত হামলা চালাতেন। টানা ১৫ বছর আবু বক্করপুর ইউনিয়নের মানুষ তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিল বলে ক্ষোভ এলাকা বাসীদের।
ভোলা ৪ আসনের এমপি (চরফ্যাশন-মনপুরা) ও সাবেক পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তনের উপমন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের আস্থাভাজন লোক ছিলেন তিনি। যার কারণে জ্যাকবের ক্ষমতা ও নিজের চেয়ারম্যান পাওয়ার দেখিয়ে এলাকায় এমন তাণ্ডব চালিয়েছেন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন।
গেল ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গা-ঢাকা দিয়ে আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। উত্তপ্ত পরিবেশ কিছুটা শান্ত হওয়ার পর গতকাল সকালে নিজ বাড়ি আবু বক্করপুর ইউনিয়নে আসেন তিনি। এমন খবর পেয়ে স্থানীয় ক্ষুব্ধ জনতা তার বাড়িতে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে জুতার মালা পরিয়ে স্থানীয় বাজার ও এলাকায় ঘুরায়। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা এ ঘটনার বেশকিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। খবর পেয়ে নৌবাহিনীর একটি টিম স্থানীয় রৌদের হাট বাজার থেকে তাকে উদ্ধার করে দুলার হাট থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেন।
স্থানীয় একটি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি এবং তার মসজিদ কমিটির কয়েকজন সদস্যরা ওয়াজ মাহফিলের জন্য চাঁদা তুলতে স্থানীয় রৌদের হাট বাজারে যান। এ সময় চেয়ারম্যান সিরাজ জামাদার তাকে চাঁদা তুলতে বাধা দেন এবং কোনো প্রকার ওয়াজ মহফিল করা যাবে না বলে হুশিয়ারি দিয়ে তাকে চলে যেতে বলেন। পরে মাওলানা মাইনুল ইসলাম এতে অপারগতা প্রকাশ করলে চেয়ারম্যানসহ তার দলবল তাকে ওই বাজারে প্রকাশ্যে হাত-পা বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেন। এ ঘটনায় তিনি ওই দিন থানায় অভিযোগ জানাতে গেলেও মামলা নেয়নি পুলিশ।
দুলারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাকসুদুর রহমান মুরাদ গণমাধ্যমকে জানান, চেয়ারম্যান সিরাজ জমাদারকে বিক্ষুব্ধ জনতা জুতার মালা পরিয়ে এলাকায় ঘুরাচ্ছে এমন খবর পেয়ে নৌবাহিনী বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে চেয়ারম্যানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। পরে মাওলানা মাইনুল ইসলাম তার বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন।
সেই মামলায় মোট ২১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে চেয়ারম্যান সিরাজ জমা দারকে। পরে বিকেলে সেই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন।
bdnewseu/20August/ZI/bhola