২০২৪’ গণঅভ্যুত্থানের শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিলের প্রতি জনতার শ্রদ্ধাঞ্জলি।গত ৮ আগস্ট ২০২৪, বৃহস্পতিবার, দুপুর ১২ টায়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ঢাকা মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আহমেদ শাকিলসহ শহীদদের প্রতি ছাত্র-জনতা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ডের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফের সঞ্চালনায় শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি পালিত হয়। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
শ্রদ্ধা নিবেদন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল, গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য ফিরোজ আহমেদ, তাসলিমা আখতার, সমগীত সাংস্কৃতিক প্রাঙ্গনের সংগঠন অমল আকাশ, আমাদের পাঠশালার প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেনসহ জুলফিকার হোসেন শাকিলের সহপাঠী ও সহযোদ্ধারা।
জোনায়েদ সাকি তার বক্তব্যে বলেন, “আবু সাঈদ থেকে জুলফিকার শাকিল প্রত্যেক শহীদদের নাম, পরিচয় ও তার গৌরবকে আমাদের সংরক্ষণ করতে হবে। এই দেশে বৈষম্য বিলোপ ও মানুষের মর্যাদা ফিরিয়ে আনার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন মানুষের মুক্তির সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই আমাদের তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। আজকের এই শহীদদের আমাদের আগত প্রজন্মের কাছে পথনির্দেশক ও আইকন হিসেবে হাজির করতে হবে। এই তরুণরা যদি জীবনবাজি রেখে প্রতিরোধ না করতো তাহলে এখানে হয়তো ফ্যাসিবাদী শাসন আরো দীর্ঘায়িত হতো। ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে দেশকে সেই ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করেছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্মাণে এই তরুণরা আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। ”
সভাপতির বক্তব্যে মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, “এই অভ্যুত্থানে শাকিলসহ শতশত শহীদের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করেছি, শাকিল এই বিজয় দেখে যেতে পারেন নি। শাকিল আমাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করেছে এদেশে যেন আর কেউ স্বৈরতন্ত্র কায়েম করতে না পারে। আমরা ছাত্র ফেডারেশন সেই দায়িত্ব ধারণ করি এবং শহীদদের আত্মত্যাগের ভেতর দিয়ে অর্জিত এদেশ যেন অন্য কেউ ছিনতাই করতে না পারে সেই শপথ আমরা গ্রহণ করি। শাকিল সর্বশেষ পর্যন্ত আমাদের বার্তা দিয়েছে “ভীত হবেন না সংগঠিত থাকুন”। নিজের অধিকারের জন্য, মর্যাদার জন্য সংগঠিত থাকুন। আমরা শাকিলের এই শ্লোগান জারি রাখবো। শহীদ শাকিলসহ কারও আত্মত্যাগকে আমরা বৃথা যেতে দেব না। যতদিন ছাত্র ফেডারেশনের একটি কর্মীও বেঁচে থাকবেন আমরা তার অঙ্গীকার বুকে ধারণ করবো এবং রাজপথে থাকবো।”
শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিপ্লবী ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ চৌধুরী স্বপন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালাসহ বিভিন্ন ছাত্র, যুব ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
আরো উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূইয়া, জুলহাসনাইন বাবু, দীপক কুমার রায়, সম্মিলিত পেশাজীবী সংহতির সম্পাদক ইখতিয়ারউদ্দীন বিপা, বাংলাদেশ যুব ফেডারেশনের আহ্বায়ক উৎসব মোসাদ্দেক, গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল হোসেন, বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতির নেতা বেলায়েত শিকদার, ঢাকা মহানরগর ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি আল-আমিন রহমান, সাধারণ সম্পাদক নুসরাত হকসহ নেতৃবৃন্দ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুলফিকার আহমেদ শাকিলের তৃতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে গতকাল ইউনিভার্সিটি অফ ডেভলপমেন্ট অলটারনেটিভ ও মিরপুরে আমাদের পাঠশালায় তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুটি নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পথিমধ্যে বরিশালে অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং সেখানেও জানাজা হয়।
পারিবারিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ তার গ্রামের বাড়ি ভোলা জেলার ভেলুমিয়া উপজেলার বাগমারা গ্রামে বাড়িতে ষষ্ঠ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে রাত ৯ টায় তাঁকে দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট ২০২৪, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ কর্মসূচি পালনকালে মিরপুর-১০ এ ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার আহমেদ শাকিল মৃত্যুবরণ করোছেন। তিনি গত ৪ আগস্ট থেকে ঢাকার আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসাইন্স এ্যাণ্ড হসপিটালে ভর্তি ছিলেন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টার নেটিভ’র চারুকলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। শাকিল মিরপুরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিদ্যায়তন আমাদের পাঠশালার সাবেক শিক্ষার্থী এবং ওই বিদ্যালয়ের সংগঠক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, রামপালে কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র বাতিলের দাবিতে আন্দোলন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনেও শাকিল সক্রিয়ভাবে স্থানীয় সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের গুলিতে নিহত হন। ৭ আগস্ট ২০২৪, বুধবার, বিকেল ৩:৩০ টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
bdnewseu/10August/ZI/Politics