• মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম
ইতালির ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় বাংলাদেশী বড় ধাক্কা খেল ভোলার তুলাতুলি পার্কে বিনোদনের নামে প্রকাশ্যে চলছে অশ্লিলতা ভোলায় সাংবাদিক নাহিদের উপর হামলা কারীদের গ্রেফতারের জন্য মানববন্ধন ভোলার আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সহধর্মিণীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা প্রতিবেশী দেশ সমূহের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে ভারতের নতুন করে উদ্যোগ সাবেক সংসদ সদস্য সুমন গ্রেফতার উনাকে পল্লবী থানায় রেখেছেন ইউরোপিয়ান বাংলা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেলাল, সম্পাদক সুমন, উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান নির্বাচিত নিরাপত্তার স্বার্থে সাকিব কে দেশে না ফেরার পরামর্শ: ক্রিড়া উপদেষ্টা আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না অস্ট্রিয়া তিন দলীয় কোয়ালিশন সরকারের পথে এগোচ্ছে
বিজ্ঞপ্তি
প্রিয় পাঠক আমাদের সাইটে আপনাকে স্বাগতম এই সাইটি নতুন ভাবে করা হয়েছে। তাই ১৫ই অক্টোবর ২০২০ সাল এর আগের নিউজ গুলো দেখতে ভিজিট করুন : old.bdnewseu24.com

বিশেষ সাক্ষাৎকার: পৌরবাসীর কষ্ট লাঘব হবে ৬ মাসের মধ্যে : মেয়র

বিডিনিউজ ইউরোপ ন্যাশনাল ডেক্স
আপডেট : রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২০

বিশেষ সাক্ষাৎকার: পৌরবাসীর কষ্ট লাঘব হবে ৬ মাসের মধ্যে
দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকার সৌজন্যে

মুজিবুর রহমান। কক্সবাজারের রাজনীতিতে অত্যন্ত সুপরিচিত মুখ। তাঁর সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কক্সবাজার জেলার সাধারণ সম্পাদক। বিগত ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। দায়িত্বভার গ্রহণের পর কক্সবাজারকে একটি ‘সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন’ নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। অনেক আশা আকাঙ্খা নিয়ে যেই পৌরবাসী আস্থা রেখেছিল তাদের ‘মুজিব বদ্দা ‘র প্রতি বিগত দুই বছরের বেশি সময়ে তাদের সেই আকাঙ্খা ও নিজের প্রতিশ্রুতি পূরণে কতটা সফল হয়েছেন তিনি?কেমন নাগরিক সেবা পেয়েছে পৌরবাসী?

এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে গত শুক্রবার দৈনিক কক্সবাজার মুখোমুখি হয়েছিল মেয়রের। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি কক্সবাজার পৌরসভার নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, বর্তমান ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা, বিদ্যমান সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, নালা-নর্দমা দখলবাজি, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, যানজট নিরসন, তৃণমূলে দলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য, দুদকের অনুসন্ধানসহ নানা বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন অত্যন্ত খোলামেলাভাবে। দীর্ঘ এ আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দৈনিক কক্সবাজার এর পরিচালনা সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মনতোষ বেদজ্ঞ ও নিজস্ব প্রতিবেদক আজিম নিহাদ।

 

দৈনিক কক্সবাজার : নির্বাচিত হওয়ার পর কক্সবাজার পৌরসভাকে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে নিজেকে কতটুকু সফল বলে মনে করেন?

 

মেয়র : কক্সবাজার পৌরসভা আগামী ২০২১ সালে ১৫০ বছর পূর্তি হবে। আমি যখন দায়িত্ব নিই তখন এই পৌরসভায় দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ পরিচ্ছন্ন কর্মী এই শহর পরিস্কার করতো। এখন প্রায় পৌনে চারশ’ পরিচ্ছন্নকর্মীসহ সবাইকে নিয়ে শহরের পরিচ্ছন্নতার কাজ চলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। শুক্রবার একদিন বিরতি দেয়। পরদিন তার কাজ দ্বিগুণ হয়ে যায়। শহরটাকে পরিচ্ছন্ন রাখা আমার দায়িত্ব। আমরা এখানে ডাম্পিং স্টেশন করার উদ্যোগ নিয়েছি। আমি দেশের বাইরে গিয়ে দেখেছি, আবর্জনা থেকে সম্পদও উৎপাদন করা যায়। সেখানে তারা কিছু কাঁচামাল বের করে আধুনিক যন্ত্রপাতি বানায়, খেলার পুতুল বানায়, কিছু শো-পিছের জিনিস বানায়। আর কিছু ময়লা আবর্জনা দিয়ে তারা গ্যাস তৈরি করে। আর কিছু দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে। সেগুলো দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি এটা করবো। জৈব সার উৎপাদন করার জন্য কক্সবাজার পৌরসভা কিছু জায়গা নিয়েছিল মিঠাছড়িতে। সেটা খুব একটা চলে না। কারণ জৈব সার উৎপাদন করার জন্য সেরকম বর্জ্য আমরা এখানে পাই না। এখানে বর্জ্য যেগুলো হয় সেগুলো গ্যাস অথবা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাজ করতে হবে। তবে বিষয়টি সময় সাপেক্ষ। আমি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, দুবাইতে গিয়ে সেখানকার পরিচ্ছন্নতা দেখেছি। কিন্তু শুধু মেয়র করলে হবে না সর্বসাধারণকেও এর সাথে সম্পৃক্ত হতে হবে। আমরা প্রতিদিন ১০০-২০০ টন বর্জ্য অপসারণ করছি। মানুষ যদি সচেতন থাকে এই শহর আর অপরিস্কার-অপরিচ্ছন্ন থাকবে না।

 

 

দৈনিক কক্সবাজার : অনেকে মনে করেন রাজনীতিক মুজিব বদ্দার তুলনায় মেয়র মুজিবুর রহমানের দরজা পৌরসবাসীর জন্য কম উন্মুক্ত। আপনার বক্তব্য কি?

মেয়র : বিষয়টি সত্য নয়। অতীতে মানুষের সাথে আমি যেভাবে চলেছি, এখনও আগের মতোই আছি। আমি রাজনীতিক হিসেবে মানুষের সঙ্গে যেভাবে থাকি মেয়র হিসেবেও একই। এই অফিসে ভিক্ষুকরাও ঢুকতে পারেন, সাধারণ মানুষও ঢুকতে পারেন, শ্রমজীবী মানুষও ঢুকতে পারেন আবার সমাজের বিত্তবানরাও ঢুকতে পারেন। কারও জন্য আমার কোন বাঁধা নেই।

 

দৈনিক কক্সবাজার : অনেক আশা-আকাঙ্খা নিয়ে মানুষ আপনাকে বিপুল ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও আপনার প্রতি মানুষের প্রত্যাশা বেশি। পৌরবাসীর প্রত্যাশা আপনি কতটুকু পূরণ করতে পেরেছেন?

 

মেয়র : মানুষের চাহিদা অনুসারে আমি সেবা দিতে বাধ্য। আমার সাধ্যমত আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে। শুধু রাজনৈতিকভাবে না, আমি স্কুল করেছি, মাদ্রাসা করেছি, মসজিদ করেছি সমস্ত জায়গায় আমার হাত পড়েছে ইনশাল্লাহ। কোন মানুষ আমার কাছে এসে বিফল হয়ে গেছে এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।

দৈনিক কক্সবাজার: আপনার দুই বছরেরও বেশি সময় মেয়াদকালে কত টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে পৌরসভায়? বর্তমানে কয়টি প্রকল্পের কাজ চলছে? এসব প্রকল্পে ব্যয় কত হবে? কবে নাগাদ কাজগুলো পৌরবাসীর কাছে দৃশ্যমান হবে?

 

মেয়র : তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের (ইউজিপ-৩) প্রকল্পের আওতায় ১২৪ কোটি ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৯৯৬ টাকার কাজ, মিউনিসিপ্যাল গভরন্যান্স অ্যান্ড সার্ভিসেস (এমজিএসপি) প্রকল্পের আওতায় ১৩৭ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ৭১৮ টাকার কাজ, পৌরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে এক কোটি ৪৫ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকা, আরও অন্যান্য কাজ মিলিয়ে প্রায় পৌনে তিনশ’ কোটি টাকার কাজ বর্তমানে চলমান। এখন জাইকা আমাদের আশ্বস্ত করেছে আমাদের ৩৪০ কোটি টাকা দেবে। চলতি অর্থ বছরের মধ্যেই কাজগুলো দৃশ্যমান হবে।

 

দৈনিক কক্সবাজার : সমালোচকরা বলেন, শুধু আপনার বাসার রাস্তাটি ছাড়া পৌরসভার আওতাধীন সড়ক-উপসড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। কবে দুর্ভোগ থেকে রেহাই পাবে পৌর শহরের বাসিন্দারা?

 

মেয়র : আমি যখন আসি তখন কক্সবাজার পৌরসভার রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। আমাদের ইউজিপ-৩ এর পক্ষ থেকে হোটেল-মোটেল জোনের কাজ হয়েছে। মেরিণ ড্রাইভে কিছু কাজ হয়েছে। কিছু ড্রেন হয়েছে। কিছু রাস্তা হচ্ছে বিজিবি ক্যাম্পের সামনের পাড়া-মহল্লাগুলোতে। সেখানে ইউজিপ-৩ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২০ কোটি ২৪ লক্ষ টাকার কাজ চলমান। পরবর্তীতে আমি এসে প্রায় সড়ক, ড্রেন, কালভার্ট, স্ট্রিট লাইটসহ ১৩৭ কোটি টাকার কাজ চলমান। ড্রেনের ৭৮-৮০ ভাগ কাজ আমরা ইতোমধ্যে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। আশা করি, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে আমাদের ড্রেনের কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর রাস্তা এবং ফুটপাতের কাজ আমরা ধরবো। প্রায় ৩২ কিলোমিটারের কাজ। এমজিএসপির ১৩৭ কোটি ২১ লক্ষ টাকার কাজ এখন মাঠে চলছে। পৌরসভার তহবিল থেকে আমরা প্রায় দুই কোটি টাকার কাজ করি। বস্তি উন্নয়নে প্রায় ১২ কোটি টাকার কাজ চলমান। এখন জাইকা আমাদের আশ্বস্ত করেছে আমাদের ৩৪০ কোটি টাকা দেবে। ওই অর্থ দিয়ে আমরা কস্তুরাঘাট বাঁকখালী নদীর পাড় দিয়ে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত রাস্তা সৃষ্টি করবো। আমাদের লাবণী থেকে শুরু করে সায়মন রোড পর্যন্ত দৃষ্টিনন্দন একটা রাস্তা আমরা করবো। সেখানে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ থাকবে। তারপর কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পাশে যে রাস্তাটা আমরা করেছি সেখানে নান্দনিক একটা ওয়াকওয়ে থাকবে। সেখানে পর্যটকরা সার্বক্ষনিক ঘুরে বেড়াবেন। আগামী এক দেড় মাসের মধ্যেই সেটা আমরা উদ্বোধন করতে যাবো। এভাবে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হবে চলতি অর্থবছরে। সড়ক যদি হয়ে যায় যত্রতত্র টমটমও আর চলবে না। পর্যটনের আদলে দৃষ্টিনন্দন গাড়ি চলবে। অনেক বছর আমরা কষ্ট পেয়েছি। কষ্ট লাঘব হবে আগামী ৬ মাসের মধ্যে।

দৈনিক কক্সবাজার : শহরের অধিকাংশ নালা-নর্দমা দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এ ক্ষেত্রে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেই কেন?

 

মেয়র : কক্সবাজার পৌরসভার নিজস্ব জায়গা আছে ১৭৬ একর। নালা-নর্দমা অনেকে দখল করে আছে। দখলমুক্ত করার জন্য আমরা একটা টিম গঠন করেছি। কাউন্সিলর সালাহ উদ্দিন সেতুকে আহ্বায়ক করে ও পৌরসভার সচিব রাশেল চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে এ টিম গঠন করা হয়েছে। অন্তত ৩০ বছর আগে এই জায়গাগুলো বেহাত হয়ে গেছে। একদিনে এগুলো দখলমুক্ত করা যাবে না, তবে আমাদের চেস্টা চলমান থাকবে।

দৈনিক কক্সবাজার : শহরজুড়ে নালাগুলোর সংস্কার ও নির্মাণ কাজ চলছে। নালার আয়তন বাড়ানো হচ্ছে কিনা? এই কাজ কবে শেষ হবে?

 

মেয়র : পল্লাইন্যাকাটা থেকে শুরু করে, সমিতি বাজার থেকে শুরু করে বাঁকখালী নদী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৪ কিলোমিটার ড্রেন ১০ ফুট করে, চার ইঞ্চি ঢালাই করে নির্মাণ করেছি। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থেকে শুরু করে ডলফিন মোড় পর্যন্ত ড্রেন আমরা করেছি। প্রত্যেকটায় রাস্তার সাথে ড্রেন আছে, প্রায় ৩২ কিলোমিটার ড্রেন। আমরা আশা করছি, আগামী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাইপ লাইনের মাধ্যমে সবাইকে বিশুদ্ধ পানি দিতে পারবো। ফলে এখানে আর গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হবে না। বাঁকখালী নদীর পানি রিফাইন করে পাইপলাইন দিয়ে আমরা ঘরে ঘরে পৌঁছে দেবো।

দৈনিক কক্সবাজার : পৌরসভার অনেক জায়গায় রাতে সড়কবাতি জ্বলে না। অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে অনেক সময় ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটে। সড়কবাতি রক্ষণাবেক্ষনে পদক্ষেপ কি?

 

মেয়র: ছিনতাই প্রতিরোধ করার দায়িত্ব প্রশাসনের। কক্সবাজার শহরে প্রায় ৩ হাজার বাতি জ্বলে। প্রত্যেক কাউন্সিলরের এলাকায় এবং আমাদের বিদ্যুৎ বিভাগের যারা কর্মী আছে তারা প্রতিদিন সন্ধ্যায় মোটর সাইকেল নিয়ে একবার করে পরিদর্শন করে। তারপরও কোন জায়গায় বাতি জ্বলছে না তা মানুষ আমাদের জানাতে পারে। আমাদের নিয়ন্ত্রন কক্ষ আছে। নিয়ন্ত্রন কক্ষের নাম্বারটা পত্রিকায়ও দেওয়া থাকে। কেউ যদি বাতির সমস্যার কথা জানায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে তা অবশ্যই সমাধান করা হবে।

 

দৈনিক কক্সবাজার : পৌর শহরে আড়াই হাজার বৈধ টমটম, এর বাইরে প্রচুর অবৈধ টমটম চলাচল করছে। এতে যানজট নিত্যদিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৌর কর্তৃপক্ষ কি কোন পদক্ষেপ নেবে?

 

মেয়র : কক্সবাজার পৌরসভা, জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন সকলেই জানে আমরা ২ হাজার ৫৫০টি টমটমের লাইসেন্স আমরা দেয়েছিলাম। এখানে প্রতিদিন প্রতিনিয়ত টমটমের লাইসেন্সের জন্য ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিরা আমাদের কাছে আসেন। কিন্তু নতুন করে একটাও লাইসেন্স কাউকে দেওয়া হয়নি। অবৈধ টমটম খুঁজে বের করার দায়িত্ব আমাদের যেমন তেমন দায়িত্ব প্রশাসনেরও। আমাদের সড়কগুলো দৃষ্টিনন্দন হলে এখানে পর্যটনবান্ধব, ভালো মানের গাড়ি চলাচল করবে।

দৈনিক কক্সবাজার: শহরের অধিকাংশ এলাকায় বর্জ্য পরিস্কার করা হয় দিনের বেলায়। এতে মানুষ দুর্ভোগে পড়ে। দুর্ভোগ লাঘবে রাতে অথবা ভোরে বর্জ্য পরিস্কারের কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা?

মেয়র : আমি যখন দায়িত্ব নিচ্ছি তখন মাত্র দুটি ডাম্পার ছিল। তাও অকেজো অবস্থায় ছিল। আমি মেরামত করালাম। এরপর আমি এসে দুইটা কিনেছি। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকেও নিয়েছি। এখন ১২/১৪ টি ডাম্পার আছে। অল্প সময়ের এস্কেভেটরও আসবে। সঠিকভাবে ময়লা পরিস্কার করা যাবে। এরফলে ময়লা নিয়ে মানুষের আর অভিযোগ থাকবে না।

 

দৈনিক কক্সবাজার: উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা স্বত্বেও প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের বর্জ্য বাঁকখালী নদীর তীরে ফেলার অভিযোগ আছে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। আপনার বক্তব্য কি?

 

মেয়র : বর্জ্য কোন সময় বাঁকখালী নদীতে ফেলা হয় না। আমরা যেখানে ডাম্পিং স্টেশন করেছি, সেখান থেকে অন্তত এক হাজার ফুট দূরে বাঁকখালী নদী। বর্তমানে যেখানে অস্থায়ীভাবে ফেলা হচ্ছে। আমরা বর্জ্যগুলো শহরের বাইরে মিঠাছড়ি অথবা এসএমপাড়া ঘাটের কাছাকাছি নিয়ে যাবো। এখানে শহরের ভেতর রাখবো না। সেখানে আমরা বার্ণ করার ব্যবস্থা করছি। বর্জ্য বার্ণ করে সার, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়া চলছে।

দৈনিক কক্সবাজার: স্থানীয় সরকারগুলো যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠে সেধরণের নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর আছে। এই ক্ষেত্রে কক্সবাজার পৌরসভাকে স্বনির্ভর করতে আয়বর্ধক প্রকল্প দৃশ্যমান নয়। আগামীতে পৌরসভায় এরধণের প্রকল্প নেয়া হবে কিনা?

মেয়র : বড়বাজারে যে মার্কেটগুলো আছে সেখানে ইউজিপ-৩ এর মাধ্যমে ১৫ তলা বিশিষ্ট মার্কেট করার পরিকল্পনা করছি। পৌরসভার যে জমিগুলো সেখানে মার্কেট করা যেতে পারে। বর্তমানে পৌরসভার ৫ শতাধিক দোকান আছে। এর বাইরে বাসটার্মিনালে আছে ৫০/৬০ টি। সবমিলিয়ে বর্তমানে আয় হয় সর্বোচ্চ ৫ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা। পৌরসভার বর্তমান ভবনও ১০ তলা বিশিষ্ট বাণিজ্যিক ভবন হবে। ব্যাংক থাকবে, শপিং মল থাকবে, দোকান হবে। এগুলো হয়ে গেলে ২ থেকে ৩ কোটি টাকা আয় আসবে প্রতিমাসে।

দৈনিক কক্সবাজার: কানাঘুষা রয়েছে কাউন্সিলরদের সাথে আপনার সম্পর্কের টানাপোড়েন আছে। অনেক ক্ষেত্রে কাউন্সিরদের মতামতকে আপনি অগ্রাহ্য করেন এমন প্রচারণাও আছে বিষয়টি সত্য কিনা?

 

মেয়র : আমি সুন্দরটাকে পছন্দ করি, অসুন্দরকে বর্জন করি। মাঝেমধ্যে আমাদের দলের সিনিয়র নেতারা আসে, সিনিয়র কর্মকর্তারা আসে এতে অনেক সময় তাদেরকে (কাউন্সিলরদের) ডাকতে পারি না। অথবা আসলে দ্রুত কাজ সারিয়ে চলে যেতে হয়। অনেক সময় তাদের মনক্ষুন্ন হয়। তারা মনে করে, আমাদের নেতা, মেয়র মহোদয় আমাদেরকে নিতে পারতো। আসলে আমি যদি একবেলা ভাত খাই তাহলে ১৬ জনকে নিয়ে খাই। আমাদের পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। এক সময় মন খারাপ করে আমি ১১ দিন অফিসে আসি নাই। তখন তারাও বুঝতে পেরেছে, আমিও বুঝতে পেরেছি। তারা আমাকে আবার আনতে গিয়েছিল, আমি আসলাম। এখন আমাদের মধ্যে পিতা-পুত্রের সম্পর্ক।

দৈনিক কক্সবাজার: ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সম্প্রতি আপনার, আপনার পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

মেয়র : দুদক একটা স্বাধীন সরকারি সংস্থা। দুদককে আমার ভালো চাননা এমন লোকেরাই ভুল তথ্য দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছে। বাজারের মধ্যে অনেক কথা এসেছে। আমি মানুষকে দান করি। আমার বাবা ছিদ্দিক কোম্পানীর নাম আপনারা শুনেছেন। আমার বাবা কক্সবাজারের প্রথম কোম্পানী। আমার বাবার অনেক ব্যবসা আছে। আমার চাচারা, জেঠারা সবাই কিন্তু আমরা ব্যবসায়ী। আমার মাছ নিয়ে ট্রলিং, ফিশিং, ক্যারিং, চিংড়ি প্রজেক্ট, লবণের মাঠ, ব্রিকফিল্ড, ট্রান্সপোর্ট, হাউজিং ব্যবসা আছে। সবগুলো মিলিয়ে আমার পয়সার কোন অভাব নেই। অতীতেও অভাব ছিল না। আমার বাবা বেঁচে থাকতে আমি ডানহাতে-বামহাতে টাকা খরচ করেছি। কিন্তু একটি মহল বলছে আমি হাজার কোটি টাকার মালিক। দুবাইতে আমার তিনটি স্বর্ণের দোকান আছে। ৫০০ কোটি টাকার মালিক। এগুলো আমার বিরুদ্ধে একটি মহল অপপ্রচার করছে। অপপ্রচারকারীরা দরখাস্ত করেছে, দুদক আমার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। আমি দুদককে স্বাগত জানিয়েছি। আমি চাই দুদক আরও তদন্ত করুক। মানুষ আমাকে জানুক। আমি পরিস্কার ছিলাম, এখনো পরিস্কার। সামনেও পরিস্কার থাকবো ইনশাআল্লাহ। কারণ এখানে আমি পয়সা কামাতে আসি নাই। এই চেয়ারে আমি এসেছি মর্যাদার জন্য। আমার পৈত্রিক যে বিষয়গুলো আছে তা মানুষ জানে, তারপরও আমি ওই তালিকাটা থেকে সরে যেতে চাই। চোর, মাস্তান এ সমস্ত শব্দ থেকে আমি অনেক দূরে থাকতে চাই। আমি চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করলাম, কারো কাছ থেকে লুট করে টাকা নিয়েছি, কারো জমি দখল করেছি, কারো হোটেল দখল করেছি এমন একটা লোকও পাবেন না। আমি আবারও চ্যালেঞ্জ করে বললাম, আগামীকাল যদি আমার দ্বারা বিন্দু পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন একজন মানুষ আনতে পারেন তাহলে সাদা কাগজে লিখে দিয়ে আমি রাজনীতি থেকে বিদায় নেবো। এই কোভিড-১৯ এ আমি গোপনে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছি।

দৈনিক কক্সবাজার: জাতির পিতার ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী একটি গোষ্ঠি যে অপতৎপরতা চলছে, জেলা আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন? কক্সবাজার পৌরসভার উদ্যোগে জাতির পিতার ভাস্কর্য নির্মাণের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

 

মেয়র : পৌরসভার উদ্যোগে ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা আছে। পৌরসভা কার্যালয়ের আঙ্গিনায় একটি ভাস্কর্য হবে। এর জন্য আমি অনুমতি নিয়ে আসবো। কক্সবাজার শহরের প্রবেশ পথে একটা বঙ্গবন্ধু গেইট হবে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকবে। কলাতলীর ডলফিন মোড়ে জেলা প্রশাসন এবং পৌরসভা যৌথ উদ্যোগে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য করা হবে। সৈকতপাড়ে ঝাউবাগান সৃজন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ঝাউবাগানের পাশে বড় করে বঙ্গবন্ধুৃর ভাস্কর্য হবে। কক্সবাজার পৌরসভা ভবনে একটা বঙ্গবন্ধু কর্ণার হবে।

দৈনিক কক্সবাজার: জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৩ বছর পার হয়েছে। নতুন করে সম্মেলন ও কাউন্সিল আয়োজনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে কোন নির্দেশনা আছে কিনা?

মেয়র : বিষয়টি নির্ভর করছে আমার দলের সভানেত্রী, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহোদয়ের উপর। সম্মেলন ও কাউন্সিলের বিষয়ে তাঁরা কিছু বলার আগে আমি কিছুই বলতে পারবোনা ।

দৈনিক কক্সবাজার: জেলার তৃণমূলে আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করতে কি পদক্ষেপ নিয়েছেন?

মেয়র: কোভিডের কারণে আমাদের দলীয় কার্যক্রম অনেকদিন কিছুটা স্থবির ছিল। এখন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মহোদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন দলকে সুসংগঠিত করার জন্য। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত কার্যক্রম চালাতে। গত ৫ দিন আগে তিনি (ওবায়দুল কাদের) একথাটা বলেছেন। ইতোমধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের মূলতবি সভা শেষ করেছি। আগামী ১৬ ডিসেম্বরের পর থেকে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাবো।

দৈনিক কক্সবাজার: জেলা আওয়ামী লীগের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হিসেবে আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কি?

মেয়র : আমার ভাবনা হচ্ছে প্রত্যেকটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান যারা জনগণের সাথে সম্পৃক্ত, জনবান্ধব নেতা, যারা মানুষের দুয়ারে-দুয়ারে গিয়ে নির্বাচিত হতে পারে সেরকম প্রার্থীকে আমার নমিনেশন দেব। পৌরসভার প্রার্থীদেরকেও আমরা সেরকম করব। জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও যে’কজন নির্বাচন করবে তাদের চেহারা দেখাব, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন কাকে দিয়ে ভোট করাবেন।

দৈনিক কক্সবাজার: পৌরবাসীর উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কি?

মেয়র : আমাদের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সবকিছু যখন সুন্দর হয়ে যাবে, পরিস্কার করে ফেলবো, তখন মানুষের আদব-কায়দা, কথাবার্তা থেকে শুরু করে সব পর্যটনের আদলে হতে হবে। সবাইকে আমি মহল্লায় -গিয়ে বলবো যে, আপনারা আদব-কায়দার সাথে চলবেন। এখানে প্রতিনিয়ত যারা আসে পর্যটক তারা আপনাদের মেহমান। মেহমানকে মেহমানদারী করলে আল্লাহও খুশি হবে, আপনিও সন্তুষ্ট হবেন। এই বার্তা আমি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেব। আমার ইচ্ছা, আমি এখানে শুধু মেয়রগিরি করার জন্য আসিনি। এই শহরের মানুষগুলোকে আমূল পরিবর্তনে আনার জন্য যা যা করণীয় সবকিছু করবো।

দৈনিক কক্সবাজার : দৈনিক কক্সবাজারকে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

মেয়র : দৈনিক কক্সবাজার পরিবারকেও ধন্যবাদ। সবার প্রতি অশেষ শুভেচ্ছা।

সূত্র -দৈনিক কক্সবাজার অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সন

বিডিনিউজ ইউরোপ /১৩ ডিসেম্বর / জই


আরো বিভন্ন ধরণের নিউজ