রাশিয়াকে সামরিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত করার ছক পশ্চিমা বিশ্বের জোটের! কৌশলগত অবস্থানে দাঁড়িয়ে পাল্টা হুমকি দিল আমেরিকার ‘বন্ধু’সৌদি আরব নাকি জানিয়েছে, ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য যদি জি৭ দেশগুলি ৩০ হাজার কোটি ডলারের রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে, তা হলে সৌদিও তাদের হাতে থাকা ইউরোপীয় দেশগুলির সম্পদ বিক্রি করে দেবে।রাশিয়ার পরম বন্ধু হয়ে দাঁড়াল সৌদি আরব! আমেরিকার নিয়ন্ত্রিত জি৭ দেশগুলিকে পরোক্ষ ভাবে কঠিন বার্তা ও দিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার এই ধনকুবের দেশ সৌদি। তেমনটাই জানাচ্ছে ব্লুমবার্গের একটি প্রতিবেদন।

অজ্ঞাত সূত্রকে উদ্ধৃত করে ব্লুমবার্গের প্রতিবেদনে সোমবার বিষয়টি উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ব্যক্তিগত ভাবে জি৭ দেশগুলিকে সতর্ক করেছে সৌদি আরব।

সৌদি আরব নাকি জানিয়েছে, ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের জোট জি৭ যদি ৩০ হাজার কোটি ডলারের রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে, তা হলে সৌদিও তার হাতে থাকা ইউরোপীয় দেশগুলির সম্পদ বিক্রি করে দেবে। বিশেষ করে এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ফ্রান্সকে। ফ্রান্সের ব্যাপক সম্পদ সৌদি আরবে রয়েছে।

একটি সূত্র সৌদি আরবের এই হুঁশিয়ারিকে ‘পরোক্ষ হুমকি’ হিসাবে বর্ণনা করেছে। পাশাপাশি ওই সূত্রের দাবি, সৌদির অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, ফ্রান্সের কোষাগারের যে সব সম্পত্তি সৌদির কাছে বন্ধক রয়েছে, তা তারা বিক্রি করে দেবে।

কিন্তু কেন পশ্চিমা বিশ্বের জোটকে এমন ‘হুমকি’ দিল সৌদি?

২০২১ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকেই সৌদির যুবরাজ মহম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে ক্রেমলিনের সম্পর্কের উন্নতি হয়। কাছাকাছি আসে সৌদি আরব এবং রাশিয়া।

এদিকে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পরে পশ্চিমা বিশ্বের হাতে থাকা রাশিয়ার অনেক সম্পত্তি ফ্রিজ় করে ওই দেশগুলি।

রাশিয়ার বিদেশি মুদ্রাভান্ডারও ফ্রিজ় করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যা সে সময় সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। অনেক অর্থনীতিবিদই বিষয়টিকে অবৈধ বলে ব্যাখ্যা করেছিলেন।

এর পর সম্প্রতি ইতালিতে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে জি৭ দেশগুলি সিদ্ধান্ত নেয়, পশ্চিমা বিশ্বের হাতে থাকা রাশিয়ার প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের সম্পত্তি বিক্রি করে দেবে তারা। সেই টাকা প্রথমে জমা পড়বে ব্যাঙ্কে। এর পর সেই টাকা ধাপে ধাপে ইউক্রেনের হাতে তুলে দেওয়া হবে। রাশিয়ার সম্পত্তির পরিমাণও কমবে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, জি৭-এর এই সিদ্ধান্তেরই বিরোধিতা করে রাশিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে সৌদি। সৌদি নাকি দাবি করেছে, রাশিয়ার সঙ্গে যা হচ্ছে তা অন্যায় এবং পরবর্তী কালে তা অন্য দেশের সঙ্গেও হতে পারে। তাই যদি রুশ সম্পদ বিক্রি করা হয়, তা হলে তারাও ফ্রান্স-সহ বাকিদের সম্পত্তি বিক্রি করে দেবে।

যদিও সৌদি সরকারি ভাবে এমন কোনও হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। এদিকে এথেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈদেশিক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মিস্টার ইয়ানিস এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সৌদি কৌশল গত কারণে এজেন্ডা টি অস্বীকার করেছেন । প্রেক্ষাপট থেকে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে এমন কিছু নিশ্চয়ই সৌদি সরকারের বলার যথেষ্ট যুক্তি ও রয়েছে। সৌদি নাগরিক খাগোসি হত্যা কান্ডে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান কে যথেষ্ট চাপে রেখেছিল আমেরিকা।হয়ত রাশিয়ার উত্থানে সৌদি আরব নিজেদের অবস্থান মজবুত করে থাকতেও পারে এমন টি জানালেন এই কূটনৈতিক বিশ্লেষক।

ব্লুমবার্গে পাঠানো এক বিবৃতিতে সৌদির অর্থ মন্ত্রণালয় দাবি করেছে যে, এ ধরনের কোনও হুমকি দেওয়া হয়নি।

সৌদির এক সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ব্লুমবার্গকে এ-ও জানিয়েছেন, কোনও দেশকে এই ধরনের হুমকি দেওয়া রিয়াদের স্বভাববিরুদ্ধ। তবে কোনও কিছু বাজেয়াপ্ত করলে তার পরিণতি সম্পর্কে জি৭ সদস্যদের সঙ্গে সৌদির ‘কথা’ হয়ে থাকতে পারে বলে ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

আমেরিকা এবং ব্রিটেন তহবিল বাজেয়াপ্ত করা এবং ইউক্রেনের পুনর্গঠনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করার পক্ষে বলে জানা গেছে, যখন ইইউ আরও অনিচ্ছুক ছিল।

তবে সৌদি হুমকি দিক বা না দিক, ইতিমধ্যেই নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে জি৭ দেশগুলি।

সৌদি আরবের হাতে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার বিশাল। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী, জি৭ দেশগুলির আশঙ্কা, সৌদি যদি তাদের হাতে থাকা ইউরোপীয় সম্পত্তি বিক্রি করে, তা হলে অন্য দেশও তাদের অনুসরণ করতে পারে। আর সেই কারণেই নাকি নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে জি৭।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়েছে, ফ্রিজ় হওয়া রুশ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার পরিবর্তে ওই সম্পত্তি থেকে যে মুনাফা হবে, তা দিয়ে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা করবে তারা। এ ভাবে ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা তহবিলে ৫০০০ কোটি ডলার তুলে দেওয়া যাবে।

জুন মাসে বসেছিল জি৭-এর বৈঠক। আয়োজক দেশ ছিল ইটালি। ইটালির আপুলিয়ার একটি রিসর্টে এই বৈঠক হয়েছিল।

জি৭ গোষ্ঠীতে রয়েছে আমেরিকার নিয়ন্ত্রিত উন্নত বিশ্বের সাত দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডা, জার্মানি, ইটালি, জাপান। সেই সঙ্গে রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। ভারত এই গোষ্ঠীর সদস্য না হলেও আয়োজক দেশ ইটালি বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। অতীতেও একাধিক বার ভারত ‘আউটরিচ কান্ট্রি’ হিসাবে এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছে।

অতিথি হিসাবে যোগ দিয়েছিল আরও বেশ কয়েকটি দেশ। তবে জল্পনা তৈরি হয়েছিল সৌদি আরবকে নিয়ে। আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও সেই বৈঠকে যোগ দেননি সৌদি আরবের যুবরাজ সলমন। তখন থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে জি৭ দেশগুলির সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক খারাপ হওয়ার গুঞ্জন ছড়িয়েছিল। এর মধ্যেই আবার নতুন করে জল্পনা শুরু হল। সূত্র-আনন্দ বাজার পত্রিকা

bdnewseu/13July/ZI/G7