পর্তুগালের নতুন অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তনএখন থেকে পর্তুগালে ভ্রমণ ভিসা কিংবা শেনজেন ভিসার সুযোগ নিয়ে এসে অভিবাসন সুবিধা নেয়া যাবে না।সোমবার (০৩ জুন) দেশটির প্রেসিডেন্ট মারসেলো রবার্টো ডে সুজা (Marcelo Rebelo de Sousa)পর্তুগালের নতুন অভিবাসন ইস্যুতে ৪১টি প্রস্তাব কাউন্সিলর মিনিস্টাররা পাশ করার পর তিনি তাতে স্বাক্ষর করেছেন। এরফলে দেশটির অভিবাসন নীতি বেশ কঠোর হয়ে পড়েছে।নতুন অভিবাসন আইন পাশের পর দেশটির সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, পর্তুগালের দরজা বিদেশী দের জন্য একেবারে বন্ধ হচ্ছে না। তবে এতোদিন যেরকম অরক্ষিত ছিলো এখন আর সেরকম থাকবে না। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পর্তুগাল আসা যাবে,তবে থাকতে হবে কাজের কন্ট্রাক্ট ও আবাসনের নিশ্চয়তা দিয়ে। চাকরি বা নিয়োগ দেয়া কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কড়া নির্দেশনা দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী।
উল্লেখ্য যে, এতোদিন ভ্রমণ ভিসায় কিংবা অন্য যেকোনো ভাবে পর্তুগালে এসে কাজের চুক্তি করলে তুলনামূলকভাবে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজে মিলতো বৈধ হবার সুযোগ। এ কারণে ইউরোপের অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভীড় পর্তুগালে সব সময়ই লেগে থাকতো । এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে পর্তুগালে বর্তমানে প্রায় পঞ্চাশ হাজারের ওপরে প্রবাসী বাংলাদেশীদের বসবাস।তাছাড়াও বাংলাদেশ ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে এখনও হাজার হাজার বাংলাদেশি নাগরিকরা পর্তুগালে আসার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। তবে ইতিমধ্যেই যারা বৈধ হওয়ার জন্য অভিবাসন ও ইমিগ্রেশন সংস্থায় সেফ এন্টি করে ফেলেছেন তাদের আতংকিত বা চিন্তার কোনো কারন নেই বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বাংলাদেশী সংবাদ মাধ্যমকে পর্তুগালে বাংলাদেশ ফেন্ডসশিপ এসোসিয়েশনের সভাপতি রানা তসলিম উদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, যারা সেফ এন্টি করেছেন তাদের কার্যক্রম পূর্বের নিয়মেই চলমান থাকবে। বর্তমানে পর্তুগালে অতিরোক্ত অভিবাসি প্রত্যাশী হওয়ায় বাসস্থান ও কর্মসংস্থান সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও অভিবাসন বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু চাপও রয়েছে দেশটিতে। বেশ কিছু কারণে দেশটির নতুন সরকার অভিবাসন নীতিমালায় এই পরিবর্তন আনছে।
নতুন এ প্রস্তাবে অদক্ষ কর্মীর পরিবর্তে মেধাবী শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন খাতে দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভোগান্তি কমবে পর্তুগালে বসবাসরত নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের পর্তুগাল আসাসহ অন্যান্য ইস্যুতেও। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে থাকা পর্তুগালের কনস্যুলেটগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করার বিষয়টিও উঠে এসেছে নতুন প্রস্তাবে।
ইউরোপের অন্য দেশের ভিসা নিয়ে পর্তুগাল এসে রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন করতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। তবে নিজ দেশে পর্তুগীজ কনস্যুলেট থেকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসা যাবে। নতুন এ প্রস্তাবে- সুযোগ বাড়বে পর্তুগিজ ভাষাভাষী বা সিপিএলপি দেশের অভিবাসীদের। সিপিএলপি দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হচ্ছে বৃত্তির ব্যবস্থাও। পড়াশোনা শেষ না করে কোন শিক্ষার্থী রেসিডেন্স স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে পারবে না এমন বিষয়ও রয়েছে নতুন প্রস্তাব।
এদিকে, এরইমধ্যে বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের কাছ থেকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করেছে পর্তুগালের অভিবাসন সংস্থা আইমা। এখনো ৪ লাখের বেশি আবেদনের নিষ্পত্তি করতে কাজ করছে সংস্থাটি। দ্রুত এসব আবেদনের নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী।
তবে পর্তুগালে কেউ অমানবিকতার শিকার হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছে প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আসার পরপরই নতুন করে আবেদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা করছে অভিবাসন প্রত্যাশীরা।
bdnewseu/5June/ZI/Portugal