এমপি আনারের মরদেহের ব্যাপারে লোমহর্ষক তথ্য দিলেন ডিবি প্রধান হারুন:প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় (Kolkata) ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনারকে হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো টুকরো করে ‘কিমা’ বানিয়ে টয়লেটে ফেলে ফ্ল্যাশ করা হয় বলে জানিয়েছেন কলকাতায় তদন্তে থাকা বাংলাদেশের ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদ।সোমবার (২৭ মে) কলকাতায় সারাদিন তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন শেষে সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ডিবি হারুন।তিনি বলেন, শনিবার (২৫ মে) বিমানবন্দর থেকে বেরিয়েই আমরা নিউ টাউন থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাই। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করার পর আমরা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য পুলিশের সিআইডি প্রধানের সঙ্গে কথা বলেছি। কলকাতা পুলিশ যে ঘাতককে গ্রেপ্তার করেছে, তাকে নিয়ে আমরা আজও পুরো ঘটনাস্থল ঘুরে দেখলাম ও প্রতিটি জায়গায় কোথায় কি করেছে, সবটাই আমরা পাই টু পাই তার কাছে কাছ থেকে শুনেছি।’
উল্লেখ্য যে,গত ১২ মে চিকিৎসার জন্য ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনার গেদে সীমান্ত দিয়ে ভারতে যান এমপি আনার। তারপর ওঠেন পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাস নামে এক বন্ধুর বাড়িতে। পরদিন ডাক্তার দেখানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এরপর থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার।নিখোঁজের বিষয়ে একটি জিডি করেন বন্ধু গোপাল বিশ্বাস। এরপরও খোঁজ মেলে না তিনবারের এই সংসদ সদস্যের। বুধবার (২২ মে) হঠাৎ খবর আসে কলকাতার পার্শ্ববর্তী নিউটাউন এলাকায় বহুতল সঞ্জীবা গার্ডেনস নামে একটি আবাসিক ভবনের বিইউ ৫৬ নম্বর রুমে আনোয়ারুল আজীম খুন হয়েছেন। ঘরের ভেতর পাওয়া যায় রক্তের ছাপ। তবে ঘরে মেলেনি মরদেহ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কলকাতায় একজন ও বাংলাদেশে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হত্যাকাণ্ড বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। তবে এখনো হত্যাকাণ্ড ও মরদেহ পাওয়ার জট খোলেনি।
এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশ পাওয়া না গেলে কী হবে? ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদই বা কবে মিলবে? এক্ষেত্রে ভারতের আইন কী বলে? ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম নর্থইস্ট নিউজ তাদের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়গুলোই তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতায় ‘খুন হওয়া’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের লাশ হয়তো আর কখনোই খুঁজে পাওয়া যাবে না। গত ১৩ মে থেকে ১৫ মের মধ্যে তাকে হত্যার পর তার লাশ টুকরো টুকরো করে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।আর এটি পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ গোয়েন্দা শাখা উভয়ের জন্যই অবিলম্বে সমস্যা তৈরি করবে। আর তা হচ্ছে: আনারের মৃত্যুতে কোনও ধরনের ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ জারি করা যাবে না। আর তেমনটি হলে ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ) আসনে উপনির্বাচন অন্তত সাত বছরের জন্য অসম্ভব হয়ে যাবে।
নর্থইস্ট নিউজ আরও বলছে, এমপি আনারের লাশ বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া না গেলে ময়নাতদন্ত করা যাবে না, যার অর্থ হলো— তার আত্মীয়দের কাছেও মৃত্যু সনদ হস্তান্তর করা যাবে না। উপরন্তু, ডেথ সার্টিফিকেট বা মৃত্যু সনদ জারি করার আগে পশ্চিমবঙ্গ সিআইডিকে কমপক্ষে সাত বছর অপেক্ষা করতে হবে।
নর্থইস্ট নিউজের সাথে কথা বলার সময় কলকাতার প্রবীণ অ্যাডভোকেট নবকুমার ঘোষ বলেছেন, ‘মৃত কোনও ব্যক্তির লাশ পাওয়া না গেলে মৃত্যু সনদ জারি করতে সাত বছর সময় লাগতে পারে। এটাই প্রতিষ্ঠিত আইন। সাত বছরের অপেক্ষা বাধ্যতামূলক। লাশ নেই, মৃত্যু সনদও নেই।’সাত বছর পার হওয়ার পর সিআইডির কাছে খোলা একমাত্র যে পথটি থাকবে তা হলো—ভারতীয় সংবিধানের ২২৬ ধারার অধীনে কলকাতা হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করা।
অ্যাডভোকেট নবকুমার ঘোষ আরও বলেন, এরপর উচ্চ আদালত প্রশাসনের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে। সেই তদন্ত শেষ হলে, উচ্চ আদালত আদেশ জারি করতে পারেন যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু সনদের সমতুল্য হবে।প্রবীণ এই আইনজীবী বলেন, এই পদক্ষেপটির পর ভারতের জাতীয় সংবাদপত্র এবং দূরদর্শন চ্যানেল গুলোতে বিজ্ঞাপন জারি করতে হবে। সেখানে ঘোষণা করা হবে, আনারকে আর কখনোই পাওয়া যাবে না।
আর এটি এমন কিছু যা আনার হত্যার কথিত মাস্টারমাইন্ড এবং তার তথাকথিত ‘ব্যবসায়িক’ অংশীদার ও বন্ধু, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত আখতারুজ্জামান শাহীন এবং কথিত বাংলাদেশি খুনি শিমুল ভূঁইয়া ও তানভীর ছাড়াও ২৪ বছর বয়সী কসাই জিহাদ হাওলাদাররা হত্যার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের আগে বিবেচনা করেননি।
নর্থইস্ট নিউজের দাবি, তাদের প্রতিবেদনটিতে সিআইডি-বাংলাদেশ ডিবির মামলায় অনেক ত্রুটি এবং অসঙ্গতি প্রকাশ করা হয়েছে। হত্যাকারীদের বর্ণনায় বেশ কিছু ফাঁক রয়েছে এবং স্পষ্ট এসব ফাঁক থেকে উদ্ভূত প্রশ্নের উত্তর পেতে উভয় দেশের তদন্তকারীদের যথেষ্ট মাথা ঘামাতে হবে।তথ্যসূত্র: পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম
bdnewseu/28May/ZI/Anar