তেহরানে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রাইসির জানাজা পড়ালেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা ইমাম খামেনি।হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার জানাজার নামাজ পড়িয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।বুধবার (২২ মে) ইরানের রাজধানী তেহরানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার নিহত দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের জানাজার এ নামাজের একটি ভিডিও খামেনির এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, বৃদ্ধ খামেনি লাঠিতে ভর করে হাসিমুখে মরদেহগুলোর কাছে এগিয়ে আসছেন। এরপর তিনি সমবেত সকলকে নিয়ে জানাজার নামাজ পড়েন।
উল্লেখ্য যে,গত রবিবার (১৯ মে) রাতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ইরানের প্রেসিডেন্ট। ওই সময় তার সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাব্দুল্লাহিয়ানসহ আরও আটজন।প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ যে মোট ৯ জন এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তাদের সবার জানাজাই আজ বুধবার পড়িয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আল খামেনি।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই নামাজে জানাজার সরাসরি সম্প্রচার করেছে। ইরানেরবিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে,রাইসির জানাজার নামাজে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। যার মধ্যে অসংখ্য নারীও ছিলেন। নারী ও পুরুষ উভয়ই কালো কাপড় পড়ে এসেছিলেন। এই জানাজার নামাজে লাখ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। জানাজার নামাজ শেষে নিহতদের প্রতি লাখো মানুষ শ্রদ্ধা জানান।
৬৩ বছর বয়সী রাইসি ২০২১ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ধার্মিক হিসেবে পরিচিত রাইসি ইরানের পরবর্তী ধর্মীয় নেতা হবেন বলেও ধারণা করেছিলেন অনেকে। তবে তার আগেই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি।
রাইসির চিফ অব স্টাফ জানিয়েছেন, হেলিকপ্টারটি মাটিতে আছড়ে পড়ার সাথে সাথেই প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমিরাব্দুল্লাহিনসহ মোট সাতজন প্রাণ হারান। এই সময় শুধু বেঁচে ছিলেন একজন। কিন্তু দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়া ওই ব্যক্তি তিন ঘণ্টা পর মারা যান। তিনি মারা যাওয়ার আগে দুর্ঘটনা সম্পর্কে অন্যদের অবহিত করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
জানাজার নামাজের পর তেহরানে শেষযাত্রা অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে মরদেহগুলো তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাড়িতে করে আজাদি স্কয়ারে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় মানুষের ঢল নামে। শোকার্ত জনতার হাতে ছিল রাইসির ছবিসহ নানা বক্তব্য লেখা প্ল্যাকার্ড। এর আগে তাবরিজ ও কোম শহরেও শেষযাত্রায় মানুষের ঢল নামে। প্রেসিডেন্ট ও সফরসঙ্গীদের শেষযাত্রার কারণে আজ তেহরানে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
তেহরান থেকে আজ মরদেহগুলো আরেক শহর বিরজান্দে নেওয়া হবে। বিরজান্দ থেকে মরদেহগুলো মাশহাদে গেলে সেখানেও জনগণ তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। সেখানে মানুষের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ মাশহাদ হচ্ছে প্রেসিডেন্ট রাইসির জন্মশহর। শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠান শেষে মাশহাদে ইমাম রেজা (আ.)’র মাজার কমপ্লেক্সে প্রেসিডেন্টকে বৃহস্পতিবার দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত, ইরানে যারা বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তাদের সবার ক্ষেত্রে শেষযাত্রার অনুষ্ঠান হলেও কিছু ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রে তা জনসমাবেশে রূপ নেয়। এসব অনুষ্ঠানে শোকের মাতম হয়। সাধারণত মরদেহ গাড়িতে রাখা হয়। গাড়ি সামনে যেতে থাকে। মানুষ সেই গাড়ির চারপাশে ভিড় জমায়, দোয়া পড়ে। এভাবে প্রিয় ব্যক্তিত্বকে বিদায় জানায় এবং তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
bdnewseu/22May/ZI/Iran