সুইডেন ন্যাটোর ৩২তম সদস্যসু সুইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী এব্বা বুশ এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছেন।বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ ) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে ডিসিতে এক অনুষ্ঠানে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রোম এর মাধ্যমে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের অন্তর্ভুক্তির নথি হস্তান্তর করা হয়েছে এবং আনুষ্ঠানিক ভাবে নথিপত্র জমা দেওয়ার সাথে সাথে সুইডেন ন্যাটোর ৩২তম সদস্য হিসাবে তার নাম নিবন্ধন সম্পন্ন করেছে।
গতকাল বুধবার (৬ মার্চ) সুইডেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পল জনসন ন্যাটোতে সুইডেনের আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের খবর ঘোষণা করে বলেছেন, ওয়াশিংটনে ‘সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হওয়ার আগে এটি শেষ পদক্ষেপ।’
ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য সুইডেন ভালোভাবেই প্রস্তুত। ২০২২ সালে সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকে সশস্ত্র বাহিনী এবং অন্যান্য সরকারি কর্তৃপক্ষ দেশটিকে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য প্রস্তুত করতে ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।
এদিকে লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরভিদাস আনুসসকাস বলেছেন, ন্যাটো এই বছর লিথুয়ানিয়ায় একটি বিমান প্রতিরক্ষা মিশন শুরু করবে যার মধ্যে একটি প্যাট্রিয়ট বিমান-বিধ্বংসী ব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে।
এর আগে খবরে বলা হয়েছিল ন্যাটোর সদস্য হতে সুইডেনের সামনে সবশেষ বাধা ছিল হাঙ্গেরির আপত্তি। তবে সকল বাধা অতিক্রম করে সুইডেন এখন ন্যাটোর ৩২তম সদস্য। সুইডেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি পরিকল্পনার সাথে যুক্ত দুজন কর্মকর্তা সংবাদ সংস্থা পলিটিকোকে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সোমবার দুপুরে ব্রাসেলসে জোটের সদর দফতরে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদান উপলক্ষ্যে একটি পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এদিকে সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী টোবিয়াস বিলস্ট্রোম
বর্তমানে ওয়াশিংটন সফরে আছেন। সুইডেনের ন্যাটো অন্তর্ভুক্তির কাগজাদি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টে জমা দেওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রক্রিয়াটি শেষ হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, হাঙ্গেরি সুইডেনের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য গত সোমবার একটি সংসদীয় ভোটের আয়োজন করে। হাঙ্গেরির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট তামাস সুলিওক মঙ্গলবার তাৎক্ষণিকভাবে আইনটির অনুমোদনে স্বাক্ষর করেছেন। এটি ন্যাটোতে সুইডেনের যোগদানের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে।
নতুন সদস্য করার ক্ষেত্রে ন্যাটোর নিয়মটি হলো, সব সদস্যদেশের অনুমোদন না পেলে কোনো দেশ জোটের সদস্য হতে পারবে না। তাই হাঙ্গেরি কর্তৃক সুইডেনের প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়ার পরই সমস্ত ন্যাটো সদস্য দেশ সুইডেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে একমত হয়।
পশ্চিমা চাপ থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ৬০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রস্তাবের অনুমোদন আটকে রাখেন। কুর্দি সংখ্যালঘুদের প্রতি সুইডেনের আচরণ নিয়ে উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে তুরস্কও সুইডেনকে ন্যাটোতে যোগদানের অনুমোদন দিতে গড়িমসি করে।
তবে সুইডেনের অন্তর্ভুক্তি মস্কোর জন্য একটি কৌশলগত আঘাত হবে। এটি বাল্টিক সাগরকে কার্যকরভাবে ন্যাটো নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে পরিণত করবে। ফলে রাশিয়ার নৌ গতিবিধির ওপর নজরদারি রাখাও অনেকটা সহজ হয়ে যাবে ন্যাটোর।
ন্যাটো (NATO) কি ?
ন্যাটো হলো “উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট (North Atlantic Treaty Organisation সংক্ষেপে NATO)। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত একটি সামরিক সহযোগিতার জোট। ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোর পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতা প্রদানে অঙ্গীকারবদ্ধ।
আটলান্টিক মহাসাগরের দুই পাড়ে অবস্থিত উত্তর আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এবং ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এই জোটের সদস্য। এছাড়া তুরস্কও এই জোটের সদস্য। প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ১২টি। ন্যাটোর বর্তমান সদর দপ্তর যদিও বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে, পূর্বে এর সদর দপ্তর ছিলো ফ্রান্সের প্যারিসে। এই সামরিক জোটের এস্যোসিয়েট সদস্য দেশ রাশিয়া সদস্য নয়। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে তুরস্ক ও আলবেনিয়াই কেবল মুসলিম দেশ। জেসন স্টলবারবার্গ বর্তমানে ন্যাটো মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ন্যাটো একটি সম্মিলিত প্রতিরক্ষা গোষ্ঠী। এর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে অবস্থিত। ন্যাটোর বর্তমান সদস্য-দেশের সংখ্যা ৩১। এদের মধ্যে ২৯ টি দেশ ইউরোপের, আর বাকি ২ টি দেশ উত্তর আমেরিকার৷ ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল আলবেনিয়া এবং ক্রোয়েশিয়া ন্যাটোতে যোগ দেয়। উত্তর মেসিডোনিয়া ২৭ মার্চ ২০২০ তারিখে যোগ দেয়। সর্বশেষ ফিনল্যান্ড ৪ এপ্রিল ২০২৩ তারিখে ন্যাটোতে যোগ দেয়। ন্যাটোর সম্মিলিত সামরিক বাহিনীর খরচ পৃথিবীর সকল দেশের সামরিক খরচের প্রায় ৭০ ভাগ।
আসলে ন্যাটো একটি যৌথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা যার মাধ্যমে এর স্বাধীন সদস্য রাষ্ট্রগুলো কোনো বহিরাগত পক্ষের আক্রমণের জবাবে পারস্পরিক প্রতিরক্ষার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়। ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের হুমকির জবাব দেয়ার জন্য। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিলুপ্তি হওয়ার পরও এই জোটটি এখনো টিকে আছে। বর্তমানে এই জোট বলকান, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকাতে সামরিক অভিযানে জড়িত রয়েছে। এই সংগঠনের মূলমন্ত্র হল “animus in consulendo liber” (ল্যাটিন এর জন্য “A mind unfettered in deliberation”)।
bdnewseu/9March/ZI/Sweden