সৌদি আরবের নোংরা কূটনৈতিক পররাষ্ট্র নীতির কারণে ইয়ামেনের অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও ইয়ামেনের জনগণের অবস্থা খুবই খারাপ। এক কথায় জনগণ বিশেষ করে শিশুরা খাবারের অভাবে ও বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে। দেখার কেহ নেই। বিশ্ব মানবতা মিউজিয়ামে চলে গিয়েছে। তাই ইয়ামেনের শিশু কিশোরদের আর্তনাদে আকাশভারী হয়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইয়ামেনে একটি সেবা সংস্থা সামান্য ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়েছিল। সেই ত্রাণকর্তাদের সাথে একজন কিশোরীর পরিচয় হয়েছিল। সেই সেবা সংস্থার প্রতিনিধি একজনের পক্ষ থেকে দিয়ে আসা একটি ই মেইলে পাঠানো একটি অনুদিত ইয়ামেনের কিশোরী সিদরাতুল মুনতাহার আকুতি ভরা লিখাটি নিচে তোলে ধরা হলো ——
মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি আ’ল্লাহ আকাশ থেকে কোন খাবার পাঠাতো!
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ইয়েমেনের ১৯ বছরের মেয়ে সিদরাতুল মুনতাহা এভাবেই নিজের আকুতি জানিয়েছেন। দেশটির মানুষ অনেক
আগে থেকেই তীব্র কষ্টে জী’বনযাপন করছে। বর্তমান বিশ্ব যে লকডাউন ভোগ করছে এটার সঙ্গে তারা পরিচিত অনেক আগ থেকেই। গত দুদিন ধরে
সামাজিক মাধ্যমে মুনতাহার একটি মেইলের বঙ্গানুবাদ ঘোরাঘুরি করছে। পাঠকদের জন্য সেটা তুলে ধরা হলো। ই’য়েমেনের রুমাহ শহরের আ’কাদি গ্রাম থেকে ১৯ বছর
বয়সী মুনতাহা নামের একটি মেয়ে আমাকে মেইল পাঠিয়েছে। মে’ইলটি এসেছে গত তিন দিন আগে, হ’ঠাৎ আজকে মে’ইলটা চোখে পড়েছে। মেইলে কি লিখেছে সেটা পরে বলি। আগে সিদরাতুল মুনতাহার পরিচয় দেই।
রুমাহ শহরটি ইয়েমেনের রাজধানী সানা থেকে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব ওমান-সৌদি আরব সী’মান্তে অবস্থিত। আর আ’কাদি গ্রামটি রুমাহ শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ী অঞ্চল অবস্থিত। সেই গ্রামে বাস করে মুনতাহা। এই আ’কাদি গ্রামেই আমাদের ডিউটি ছিল
ই’য়েমেন সফরের সময়। মুনতাহাকে আমি প্রথম দেখি ওই গ্রামে যাওয়ার পর। দ্বিতীয় দিনে ক্যাম্প এসেছিল ওষুধ নিতে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা মে’য়েটার চেহারা আর চাঁদের মাঝে কোন ত’ফাৎ করতে পারবেন না। আমার মনে হয় চাঁদের চেয়েও মুনতাহা বেশি সুন্দরী। কিন্তু, দীর্ঘদিন খাদ্যের অভাব আর
নিজের যত্ন না নেওয়ায় সেই চেহারায় একটা দুঃখের ছাপ পড়ে গেছে। প্রথম দেখে আমার খুব মায়া লেগেছিল। কাছে টেনে নিয়ে কথা বললাম। সব জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু ইংরেজি অল্প বােঝে কিন্তু। একটুও বলতে পারে না। আমাদের গাইড এর সা’হায্য নিয়ে ওর কথাগুলো শুনলাম। ও আরবিতে বলছিল আর গাইড আমাকে ইংলিশে ট্রান্সলেট করে বলছিল। ওর ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিল ভালো পড়াশোনা করছিল হ’ঠাৎ দেশে যু’দ্ধ নেমে এলো।
পরিস্থিতি এখন পুরোটাই উ’ল্টো। ডাক্তারের কথা ভুলে গিয়ে দু’মুঠো খাবারের জন্য এখন সং’গ্রাম করতে হয়। মা বাবার একমাত্র মেয়ে। ৯দিন ছিলাম ৯দিনই আমাদের ক্যাম্পে আমাদের সাথে রেখে দিয়েছিলাম। আসার সময় সে কি কান্না! এবার আসি মেইলে কি লিখেছে। ভালোবাসার হিমাদ্রি আপু, অনেকগুলাে ক্ষু’ধার্ত মানুষের ভালোবাসা নিবেন। গত ১৮ ঘণ্টায় এখানে খাবার পানি আসেনি। আমি গত ১দিন আগে শেষ রুটি খেয়েছি।
আজ সকালে দু’টো খেজুর, দুপুরে এখন পর্যন্ত কিছু খাইনি। অনেক ক’ষ্ট করে এখানে হেঁটে এসে একজন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকের অনেক হাত পা ধরে আপনাকে এই মেইল পাঠাচ্ছি। বাবা-মা দাঁড়াতে পারে না। গত এক সপ্তাহ ধরে চার পায়ের জন্তুর মত মাটিতে হাটে, এত ক্ষু’ধা তাদের। গত কয়েক সপ্তাহ টক গাছের পাতা সি’দ্ধ করে ভর্তা করে খেয়েছিলাম। এখন সে পাহাড়ের গাছগুলোর পাতা ও শেষ হয়ে গেছে। সামনে রমাদান আসছে! জানিনা কিভাবে সাহরি করব কি দিয়ে ইফতার করব৷
আপনারা যারা এসেছিলেন যদি দ’য়া করে রমাদানের আগে আরেকবার আসেন! অন্তত একটু খাবার পানি নিয়ে আসেন! অথবা, ৫ কেজি আটা দেন যাতে আমি, আমার মা আর বাবা রমাদানের রোজাগুলো রাখতে পারি।
মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি, যদি আ’ল্লাহ আকাশ থেকে কোন খাবার পাঠাতো! আমাদের দুঃখ গুলাে শুধু আমাদের আশপাশের পাহাড় ছাড়া কেউ দেখেনা। আপনার সাথের সকল সঙ্গীদের সালাম দেবেন। আপনাদের ফেরার অ’পেক্ষায়।
সূত্র – আরাবিয়ান বাংলা ডটকম
বিডিনিউজ ইউরোপ /৮ ডিসেম্বর / জই