বিএনপির কালো পতাকা মিছিল অবৈধ – ওবায়দুল কাদের। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল অবৈধ। আর, অনুমতি ছাড়া রাজপথে ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি সরকার মেনে নেবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।বুধবার (৩১ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে, আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।তিনি আরও বলেন, “পুলিশ অনুমতি দেয়নি। অনুমতি ছাড়া ফ্রি স্টাইল কর্মসূচির সুযোগ নেই। অনুমতি নেবে না, রাস্তায় ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি করবে, আর আমরা তা মেনে নেবো; এটা মনে করার কোনো কারণ নেই।”
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেউ ত্রুটিপূর্ণ বলেনি বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। “নির্বাচনের ফলাফলের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন;” বলেন তিনি।
সর্বশেষ সংসদ অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, “সংসদের প্রথম অধিবেশনেও যুক্তরাষ্ট্রের উপস্থিতি লক্ষ্য করি। এর মানে কি দাঁড়ায়? আমাদের নির্বাচনকে ত্রুটিপূর্ণ বলেনি। সবাই একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে।”
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার শুধু কথা নয়, কাজও করে যাচ্ছে। “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার;” জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।.তিনি আরো জানান, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। সে অনুসারে কাজ শুরু হয়েছে।
তবে রাতারাতি পন্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হয়ে যাবে না বলে জানান ওবায়দুল কাদের। বলেন, যারা আইন ভঙ্গ করবে তারা যেই হোক না কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংরক্ষিত নারী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পরীক্ষিত ও ত্যাগীদের গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেবে আওয়ামী লীগ। সংসদের কার্যকারিতা নিয়ে জিএম কাদেরের দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “পার্লামেন্ট ফাংশনাল না হলে তিনি কেন এলেন?”
ঢাকায় কালো পতাকা মিছিল করতে পারেনি বিএনপি:
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর সাতটি পয়েন্টে কালো পতাকা মিছিল করার প্রস্তুতি নিয়েছিলো। রাজপথে কর্মসূচি পালনের অনুমোদন নেই উল্লেখ করে বিএনপিকে মিছিল বের করতে দেয়নি পুলিশ।
বিএনপির নেতাকর্মীরা কালো পতাকা নিয়ে সাতটি স্পটে সববেত হতে শুরু করলে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই কর্মসূচির অনুমতি না থাকায় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে যোগ দিতে দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-১২ নম্বর সেকশনের কবরস্থানের কাছে গেলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খানকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে মঈন খানকে ছেড়ে দিয়ে গাড়িতে চড়ে গুলশানের বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ শাহজাহান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, “মঈন খানকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। আমরা তাকে থামিয়েছি।” “আমরা তাকে কালো পতাকা মিছিলে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকতে বলেছি;” যোগ করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা জোনের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাহউদ্দিন বলেন, “কোনো অনুমতি ছাড়া কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করেছিলো দলটি।” তিনি আরো বলেন, বিএনপি কর্মসূচি পালনের জন্য ডিএমপির কাছে অনুমতি চেয়েছিলো। কিন্তু নগরীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অনুমতি দেয়া হয়নি। “এ কারণে আমরা তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেইনি;” বলেন অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) মির্জা সালাহউদ্দিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মতিঝিলের পীরজঙ্গি মাজার যান, তবে মিছিল করতে পারেননি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, সভা-সমাবেশ করা রাজনৈতিক দলগুলোর গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরো জানান, “রাজধানীর ৭টি স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আমরা ডিএমপির পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু, পুলিশ সব জায়গায় আমাদের বাধা দিয়েছে। আমরা পুলিশের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”
“সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে এবং কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়া তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না;” যোগ করেন এই বিএনপি নেতা। মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “বিএনপি কর্মসূচি পালনের অনুমতি পায়নি।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায়: ‘জনগণের নিন্দার মধ্যে যাত্রা শুরু করলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন যে গত ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ। আর এর প্রথম অধিবেশনে কেবল ‘নির্লজ্জরা’ যোগ দিতে পারে।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশে সম্মিলিত পেশাজীবী সংগঠনের এক মানববন্ধনে তিনি এ কথা বলেন। “জনগণের প্রতিবাদ, ক্ষোভ ও নিন্দার মধ্যে আজ (৩০ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এর প্রতিবাদে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ সকাল থেকে লাল ও কালো পতাকা নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় উল্লেখ করেন, সংসদের উদ্বোধনীতে জনগণ আনন্দ উদযাপন করছে না; তারা নিন্দা জানাচ্ছে এবং তাদের ক্ষোভ ও ঘৃণা প্রকাশ করছে।
“এমতাবস্থায় যাদের কোনো লজ্জা ও আত্মসম্মানবোধ নেই, তারাই এ ধরনের সংসদের অধিবেশনে যোগ দিতে পারেন;” যোগ করেন তিনি।
গয়েশ্বর রায় জানান, বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে এবং নতুন নির্বাচন দিতে তাদের দল শান্তিপূর্ণভাবে তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবে।তিনি বলেন, “আমাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। আমরা আমাদের সংগ্রাম থেকে পিছু হটিনি। কিন্তু বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমাদের আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে।”
তিনি আরো জানান যে অনেকে পরামর্শ দিয়েছেন আজ (৩০ জানুয়ারি), দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনের দিন, হরতাল পালন করা হোক। কিন্তু, বিএনপি এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান গয়েশ্বর রায়।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য সুদৃঢ় করে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
bdnewseu/31thJanuary/ZI/bd