অবৈধ অভিবাসন অনুপ্রবেশ বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরো এক মাস বৃদ্ধি।অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা চলমান সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরো এক মাস বাড়িয়েছে ফিনল্যান্ড৷ইউরোপের অভিবাসন বিষয়ক অনলাইন পোর্টাল ইনফোমাইগ্র্যান্টস জানায়, বৃহস্পতিবার(১১ জানুয়ারি) হেলসিংকি জানিয়েছে, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মস্কো দুর্বল ভাবছে বলে সন্দেহ হচ্ছে নর্ডিক দেশটির৷ আর তাই, ফিনল্যান্ড সীমান্তের দিকে অনিয়মিত অভিবাসীদের ঠেলে দেয়া অব্যাহত রেখেছে রাশিয়া৷ সে কারণেই, দেশটির সঙ্গে থাকা সীমান্ত পয়েন্ট বন্ধের মেয়াদ আরো এক মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছে৷
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ফিনল্যান্ড সীমান্তে ভিড় করতে শুরু করেন অনিয়মিত অভিবাসীরা৷ কোনো ধরনের নথিপত্র এবং ভিসা ছাড়াই তারা ফিনল্যান্ডে ঢোকেন৷ অন্তত এক হাজার ৩০০ অনিয়মিত অভিবাসী ফিনল্যান্ডে ঢোকার পর, সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি৷ ২০২৩ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা সীমান্ত বন্ধ করা শুরু করে ফিনল্যান্ড৷ সেদিন রাশিয়ার সঙ্গে থাকা দীর্ঘ সীমান্তের চারটি সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে দেয় নর্ডিক দেশটি৷ মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের ঠেকাতেই এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানায় ফিনিশ সরকার৷
রাশিয়ার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের সীমান্তের দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার৷ এর বেশিরভাগ দেশটির দক্ষিণের ঘন জঙ্গলের ভেতরে৷ বর্তমানে দুই দেশের নয়টি ক্রসিং পয়েন্ট রয়েছে৷ এগুলোর মধ্যে শুধু একটি দিয়ে রেল যোগাযোগ হয়৷ আর আগস্ট থেকে এসব সীমান্ত দিয়ে কোনো নথিপত্র ছাড়াই হাজারেরও বেশি অভিবাসী ফিনল্যান্ডে ঢুকেছেন৷
ফিনিশ সীমান্তে অভিবাসীদের এই বাড়তি চাপের জন্য রাশিয়াকে দোষারোপ করে আসছে ফিনল্যান্ড৷ হেলসিংকি বলছে, তারা সামরিক জোট ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার জের ধরে প্রতিশোধ নিতেই এমন আচরণ করছে মস্কো৷ কিন্তু ফিনল্যান্ডের অভিযোগ অস্বীকার করেছে রাশিয়া৷ গত নভেম্বরে ক্রেমলিন ‘হাইব্রিড যুদ্ধের’ অংশ হিসেবে অভিবাসীদের ব্যবহার করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন ফিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেত্তেরি অরপো৷
বৃহস্পতিবার হেলসিংকিতে এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মারি রান্তানেন জানান, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে থাকা সীমান্তগুলো বন্ধ থাকবে৷ কারণ, অনিয়মিত অভিবাসীদের ফিনল্যান্ড সীমান্তে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা থেকে এখনও সরে আসেনি রাশিয়া৷ রান্তানেন জানান, ‘‘সীমান্ত এলাকায় এখনও অনেক মানুষ (অনিয়মিত অভিবাসী) অপেক্ষা করছেন সীমান্ত খোলার আশায়৷’’
গত বছরে ফিনল্যান্ডে আসা অনিয়মিত অভিবাসীদের বেশিরভাগই মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিক৷ এদের মধ্যে সিরিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেন থেকেই বেশিসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী এসেছেন৷ এসব আশ্রয়প্রার্থীদের দেশটির বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে রেখে আবেদন যাচাই বাছাই করছেন ফিনিশ কর্তৃপক্ষ৷
গত বছরের এপ্রিলে ন্যাটোতে যুক্ত হওয়ার কারণে রাশিয়া এমন আচরণ করছে বলে ফিনল্যান্ডের বেশিরভাগ মানুষ মনে করলেও, দেশটির নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা অবশ্য তা বলতে নারাজ৷ তারা বলছেন, অভিবাসী নিয়ে রাশিয়ার এই কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্য ঠিক পরিষ্কার নয়৷
গত নভেম্বরে নিরাপত্তা ইস্যু এবং রাশিয়ার ‘হাইব্রিড আক্রমণ’ ঠেকানো এবং অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা এক হাজার ৩৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নেন প্রধানমন্ত্রী পেত্তেরি অরপো৷ পরে পরীক্ষামূলকভাবে দুটি সীমান্ত খুলে দেয়া হয়৷ কিন্তু অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন আবারো দেখা যাওয়ায়, আবারও সবকটি সীমান্ত বন্ধ করে দেয়া হয়৷
গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে রাশিয়ার সঙ্গে থাকা আটটি সীমান্ত পারাপারের সবকটি বন্ধ রয়েছে৷ শুধু খোলা রাখা হয়েছে ভাইনিকালা সীমান্তটি৷ কারণ এই সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের দক্ষিণ-পূর্বপ্রান্তে রেল চলাচল করে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহিঃসীমান্তের দেশ ফিনল্যান্ডের জনসংখ্যা ৫৬ লাখ৷ রাশিয়া ইউক্রেনের আক্রমণের পর ফিনল্যান্ডের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দশকের সামরিক নিরপেক্ষতা ছেড়ে গত এপ্রিলে পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগ দেয় ফিনল্যান্ড৷
bdnewseu/17thJanuary/ZI/Finland