মাসব্যাপী ড্রিমল্যান্ড শিশু মেলায় সেলিনা আক্তারের গ্ল্যামার জোন নকশি কাঁথার স্টোল।ভোলায় মাসব্যাপী ড্রিমল্যান্ড শিশু মেলা ও শিল্পপণ্য প্রদর্শনী ২০২৩ বহু-বছর পর মেলার আয়োজন করেন জেলা পরিষদ গত ২৪ নভেম্বর জেলা প্রশাসক মোঃ আরিফুজ্জামান মেলা উদ্বোধন করেন। তারপর থেকে নিয়মিত চলে মানুষের সঙ্গে তালমিলিয়ে অন্যতম নারী উদ্যোক্তা মোসাঃ সেলিনা আক্তার ও তার ছোট্ট এই নকশি কাঁথার ব্যবসা নিয়ে ব্যস্থসময় কাটাতে দেখা গিয়েছে ভোলার মাসব্যাপী ড্রিমল্যান্ড শিশু মেলা প্রাঙ্গণে।ভোলায় শহর জুরে নকশি কাঁথা তৈরি করে সেলিনা আক্তার নামের এক নারী উদ্যোক্তা স্বনির্ভরতা অর্জন করেছেন। এক সময়ে স্বল্প আয়ের স্মামীর সংসারে বাড়তি আয়ের জন্য কিছু একটা করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন বলে জানান সেলিনা আক্তার। দিরে দিরে ইন্টারনেট এর ভিডিওতে মনোযোগী হয়ে নকশি কাঁথা তৈরি করা শুরু করেন তিনি বলে জানান তার ছোট্র কণ্যা মোসাঃ ইসরাত জাহান মিম। প্রথমে এলাকার লোকজন নানা রকম মন্তব্য করলেও এখন গর্ব অনুভব করেন ওইসব শ্রেণীর লোকজন বলে জানান পরিবার সূত্র।
তবে ব্যক্তিগত নানান জটিলতা থাকলেও এখন বেশ জমে উঠেছে সেলিনার ব্যবসা, নিজের প্রচন্ড ইচ্ছাশক্তি ও একগ্রতায় নকশি কাঁথা তৈরি করে আত্বনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন এ নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে অনলাইন ও অফলাইন দুইভাবেই কাঁথা বিক্রি করছেন। চাহিদাও রয়েছে বেশ। তার এখানে কর্মসংস্থান হয়েছে বেশ কজন নারী শ্রমিকের। ইতোমধ্যে সেলিনা মনোনীত হয়েছেন জেলা পর্যায়ে জয়িতা হিসেবে।
মেলা প্রাঙ্গণে আলাপের সময় সেলিনা আক্তার জানান, পৌর শহরের ৮নং ওয়ার্ডের পৌর কাঠালী এলাকার নিজ বাড়ির সামনে গড়ে তুলেছেন ‘গ্ল্যামার জোন নকশি কাঁথা’ নামের ছোট্র ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ছোট্র বেলা থেকেই সেলাই-আঁকা-ঝোকার উপর বেশ আগ্র ছিলো সেলিনা আক্তারের। তিনি ২০১৮ সালের দিকে নকশি কাঁথা তৈরিতে মন দেন।এবং পরবর্তীতে সফলতা দেখা দিলে বড় পরিসরে কাজ শুরু করেন এই নারী উদ্যোক্তা। বর্তমানে ০৩ জন নারী শ্রমিক সার্বক্ষণিক তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান সেলিনা আক্তার।
সেলিনা আক্তার আমাদের সঙ্গে মেলা বিতর জীবনের গল্প করতে করতে জানান, এর বাইরেও প্রায় ৩০ জন নারী শ্রমিক চুক্তিতে তার প্রতিষ্ঠানে কাঁথা তৈরিতে কাজ করতেছেন। নানান ডিজাইনের কাজ চলোমান এক পর্যায়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান প্রতিমাসে ২৫ থেকে ৩০টি কাঁথা তৈরি করতে পারেন তারা। ও ছোটদের কাঁথা বিক্রি করছেন ৩শ’ থেকে হাজার টাকায়। আর বড়দের নকশি কাঁথা ৬ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার, ১০ হাজার, সেলিনা আক্তারের কাছে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে এই হাতে কাজ করা নকশি কাঁথা। সেলিনা আক্তারের প্রতিমাসে তার এই ব্যবসা থেকে ৩০-৪০ হাজার টাকা লাভ হয়।
সোনিয়া আক্তার আরও জানান, বিভিন্ন ডিজাইনের উপর সুই-সুতা দিয়ে নিপুণভাবে হাতে নকশি কাঁথা তৈরি করা হয়। আবার অনেক সময় ক্রেতাদের দেয়া নকশার উপারও কাঁথা প্রস্তুত করি আমরা। সেলিনা আক্তার বলেন বর্তমানে আমার স্বামী অসুস্থ থাকার কারনে আমার আয়ের টাকাই পরিবার চলে। আগামীতে আরো বৃহৎ পরিসরে নকশি কাঁথা তৈরির পরিকল্পনার আছে বলে জানান নারী উদ্যোক্তা।
সেলিনার পরিবারে রয়েছে অসুস্থ স্বামী ও একমাত্র কলেজে পড়ুয়া মেয়ে কিছুদিন আগে অন্য মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন নিজের সঞ্চিত অর্থে। সাম্প্রতিক সময়ে জেলায় শুরু হওয়া মাসব্যাপী শিশু মেলা ও শিল্প প্রদর্শনী মেলায় তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্টানের স্টল রয়েছে। সব মিলিয়ে এ নারী উদ্যোক্তা বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন মেলা প্রাঙ্গণে।
সেলিনা আক্তারের মেয়ে ইসরাত জাহান মিম বলেন, তিনি ভোলা সরকারি মহিলা কলেজে অনার্সে পড়ছেন। লেখা পড়ার পাশাপাশি তিনি মায়ের কাজে সহয়াতা করেন। এখন তাদের পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে, এবং তারা আগের তুলনায় অনেক ভালো আছেন। বিভিন্ন প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে তিনি আজ ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তার নকশি কাঁথা তৈরির সফলতা দেখে অনেক নারীই এখন এই কাজে সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে চান।
জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, সেলিনা আক্তার একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। তার নকশি কাঁথার নকশা ও মান অনেক উন্নত। তার অধীনে কাজ করে অনেক নারীর কর্ম সংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়েছে। সেলিনা আক্তারকে এ বছর অর্থনৈতিক ভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারীর ক্যাটাগরিতে জেলা পর্যায়ে জয়িতা হিসাবে মনোনীত করা হয়েছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর তাকে সব ধরনের পরামর্শের আশাস দেন তিনি।
সেলিনা আক্তার বলেন, যদি জেলা প্রশাসক মোঃ আরিফুজ্জামান স্যার মহোদয় আমার এই ক্ষুদ্র ব্যবসার পাশে সার্বিক সহযোগিতা করেন। অর্থাত আমার নকশি কাঁথা বাজার জাত করার সু-ব্যবস্থার সুযোগ করে দেন, তাহলে আমি এই ব্যবসায় আরও সমাজে জর্জরিত নারীদের কর্মস্থানের পরিবেশ করতে সক্ষম হব।
bdnewseu/13thDecember/ZI/bhola