ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের শর্ত মেনে তৃতীয় দেশে আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব UNHCR. ৷আশ্রয়প্রার্থীদের নিজেদের সীমানার বাইরে অর্থাৎ তৃতীয় নিরাপদ দেশে রেখে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (ইউএনএইচসিআর)। বুধবার (৮ নভেম্বর) জার্মানিস্থ UNHCR এক বিবৃতিতে তাদের এই নিজের মতামত ব্যক্ত করেছে। তবে এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শর্তগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে বলেও জানিয়েছে তারা৷ উল্লেখ্য যে,বর্তমানে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আর নিজেদের দেশে রাখতে চাইছে না।ইউরোপের বাইরে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব কিনা তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ জার্মানির সরকার৷ রাজধানী বার্লিনে সোমবার (৬ নভেম্বর) দেশটির ১৬টি রাজ্যের রাজ্যপ্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস৷ সেই বৈঠক থেকেই এই ইস্যুতে একমত হয়েছেন সবাই৷
স্টেট প্রিমিয়ার কনফারেন্সের এক নোটে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘‘জেনেভা শরণার্থী কনভেনশন এবং মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশন মেনে ভবিষ্যতে ট্রানজিট বা তৃতীয় দেশেও শরণার্থীদের সুরক্ষা প্রক্রিয়া নির্ধারণ করা যায় কিনা তা খতিয়ে দেখবে ফেডারেল সরকার৷’’ঠিক তার দুদিনের মধ্যেই জার্মানিস্থ ইউএনএইচসিআর এই বিবৃতি দিয়েছে৷ এতে বলা হয়েছে, তৃতীয় নিরাপদ দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের স্থানান্তর তখনই গ্রহণযোগ্য হবে, যদি এই দেশগুলো জেনেভা শরণার্থী কনভেনশন এবং মানবাধিকারের বাধ্যবাধকতা ও অধিকারকে পুরোপুরি মেনে চলে৷
জার্মানিতে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ক্যাটারিনা লুম্প জোরের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইন অনুসারে, আশ্রয় আবেদনের যাচাই বাছাই এবং আন্তর্জাতিক সুরক্ষা দেয়ার ‘প্রাথমিক দায়িত্ব’ সেই রাষ্ট্রের উপর বর্তায় যে দেশটিতে একজন আশ্রয়প্রার্থী আসেন এবং সুরক্ষার আবেদন করেন৷তৃতীয় নিরাপদ দেশে রেখে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন যাচাই বাছাই করলেও আশ্রয়প্রার্থী যে দেশে আশ্রয় চেয়েছেন, সেই দেশের দায়িত্ব কোনো অংশে কমবে না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি৷
জার্মানির ব্রেমেন, লোয়ার স্যাক্সনি এবং থুরিঙ্গিয়া রাজ্যের বামপন্থি রাজ্যপ্রধানেরা, আশ্রয়প্রার্থীদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন৷ তারা বলেছেন, তৃতীয় কোনো দেশের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণে অবশ্যই তাদের মতামত থাকতে হবে৷এদিকে, গ্রিন পার্টির নেতা রিকার্ডা লাং সংবাদমাধ্যম আরটিএলকে জানিয়েছেন, তিনি কল্পনাও করতে পারছেন না যে এই ধারণাটি বাস্তবায়নে অন্য একটি দেশকে খুঁজে বের করতে চায় জার্মানি৷ তিনি মনে করেন, এই প্রক্রিয়াটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে৷
মঙ্গলবার জার্মানির টেলিভিশনের এক অনুষ্ঠানে লেফট পার্টির সাবেক রাজনীতিবিদ জারা ভাগেনক্নেশট বলেন, ‘‘যারা সত্যিকার অর্থে আশ্রয় পাওয়ার যোগ্য, তাদের ইউরোপে আসার নিরাপদ ও আইনি পথ থাকা উচিত৷ যারা আশ্রয়ের অধিকারী নয় তাদের উচিত নয়৷’’ তৃতীয় একটি দেশে আশ্রয়প্রার্থীদের রেখে আবেদন যাচাই বাছাইয়ের পরিকল্পনা অবশ্য জার্মানি ছাড়া আরো কয়েকটি দেশও করছে৷
আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ার রেখে আবেদন প্রক্রিয়াকরণে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তিতে সই করেছে ইতালি ৷ ৬ নভেম্বর চুক্তিতে সই করেন ইতালির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনি এবং আলবেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী এডি রামা৷ এই চুক্তির অধীনে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের জন্য আলবেনিয়ায় দুটি কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা করছে ইতালি৷ সেই কেন্দ্র দুটিতে রাখা আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে যাদের আবেদন মঞ্জুর হবে, তাদের ইতালিতে ফিরিয়ে আনা হবে৷অন্যদিকে, আশ্রয়প্রার্থীদের আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় পাঠাতে একটি চুক্তি সই করেছে যুক্তরাজ্য৷ কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞায় সেই চুক্তি বাস্তবায়ন এখনও করতে পারেনি দেশটি৷
bdnewseu/10thNovember/ZI/German