২০২৩ সালে পদার্থবিজ্ঞানে অবদান রাখায় নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী।মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) র‌য়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি পদার্থের নোবেল বিজয়ী হিসেবে তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করেছে। সুইডেনের র‌য়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি পদার্থের নোবেল বিজয়ী হিসেবে যে তিন বিজ্ঞানীর নাম ঘোষণা করেছেন, তারা হলেন যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের পিয়া অগোস্টিনি, অস্ট্রিয় হাঙ্গেরিয়ান ফেরেঙ্ক ক্রুসজ এবং ফ্রান্সের অ্যান ল’হুইলার।রাজধানী স্টকহ্যামের রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্স বিশ্বের বিখ্যাত সব বিজ্ঞানীদের মধ্যে থেকে সেরা পদার্থবিজ্ঞানীকে এই পুরস্কারে ভূষিত করে থাকে।
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সালে। এরপর থেকে ১১৬ বার এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২২২ জন সম্মানজনক এ পুরস্কার জিতেছেন। এরমধ্যে মার্কিন পদার্থবিদ জন বার্ডেন একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে দুইবার এই পুরস্কার জেতার বিরল কীর্তি গড়েছিলেন।

অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছে,
পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেলেন অস্ট্রিয়ান গবেষক ফেরেঙ্ক ক্রাউস। এই বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারটি অন্যদের মধ্যে, অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান পদার্থবিদ ফেরেঙ্ক ক্রাউস,যিনি জার্মানির মিউনিখে কোয়ান্টাম অপটিক্সের জন্য ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটে কর্মরত আছেন। সম্মিলিতভাবে অন্যান্য নোবেল বিজয়ীরা হলেন মার্কিন বিজ্ঞানী পিয়ের অ্যাগোস্টিনি এবং ফরাসি বিজ্ঞানী অ্যান লিয়ের।

“আমরা এখন ইলেকট্রনের জগতের দরজা খুলতে পারি,” রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর
সাথে এক সাক্ষাৎকারে বললেন অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান পদার্থবিজ্ঞানী ফেরেঙ্ক ক্রাউস। তিনি তার সহকর্মী পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি এবং পদার্থবিজ্ঞানী অ্যান এলকে
হুইলিয়ারকে সাথে নিয়ে এই বছরের পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার জিতে তাদের সাফল্যের প্রমাণ করেছেন। তারা পদার্থের ইলেক্ট্রন গতিবিদ্যা অধ্যয়ন করতে অ্যাটোসেকেন্ড হালকা ডাল তৈরি করে এমন পরীক্ষামূলক পদ্ধতির উদ্ভাবনের জন্য সম্মানিত হয়েছেন।

তাদের গবেষণার মাধ্যমে, তারা মানবতাকে “পরমাণু এবং অণুতে ইলেকট্রনের বিশ্ব” আবিষ্কার করার জন্য নতুন সরঞ্জাম দিয়েছেন। অ্যাটোসেকেন্ড পদার্থবিদ্যা, যা বাস্তব সময়ে ইলেকট্রনের অতি দ্রুত গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে এবং অধ্যয়ন করে, এটি এখন “ইলেকট্রন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সেই প্রক্রিয়াগুলি বোঝায়” সম্ভব করে তোলে, পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরস্কার কমিটির চেয়ারম্যান ইভা ওলসন বলেছেন৷ এটি পরবর্তী ধাপে ব্যবহার করা হবে।

তাদের কাজের মাধ্যমে, ক্রাউস, অ্যাগোস্টিনি এবং ল’হুইলিয়ার সেই প্রক্রিয়াগুলির তদন্তের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করেছিলেন যা আগে তাদের গতির কারণে কোনও পর্যবেক্ষণ এড়িয়ে গিয়েছিল। তাদের গবেষণায় খুব সংক্ষিপ্ত আলোর ডাল তৈরি করার একটি উপায় দেখানো হয়েছে যা দ্রুত প্রক্রিয়াগুলি পরিমাপ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে যেখানে ইলেকট্রন চলে বা শক্তি বিনিময় করে। ইলেকট্রনের জগতে, এই পরিবর্তনগুলি অ্যাটোসেকেন্ডে ঘটে। একটি অ্যাটোসেকেন্ড হল এক সেকেন্ডের এক বিলিয়ন ভাগের এক বিলিয়ন ভাগ।

পদার্থবিজ্ঞানে অনবদ্য অবদান রাখায় গতবছর যৌথভাবে এ পুরস্কার পেয়েছিলেন ফ্রান্সের অ্যালাইন অ্যাসপেক্ট, যুক্তরাষ্ট্রের জন এফ ক্লজার ও অস্ট্রিয়ার অ্যান্টন জেলিঙ্গার।

এদিকে প্রথা অনুযায়ী এ বছরও নোবেল পুরস্কার দেওয়া শুরু হয় চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদান রাখাদের নাম ঘোষণার মাধ্যমে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের অত্যাধুনক এমআরএনের করোনার টিকা আবিষ্কারে বিশেষ অবদান রাখায় এবার মর্যাদাপূর্ণ এ পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ক্যাথলিন কারিকো এবং ড্রিউ ওইসম্যান।

বুধবার (৪ অক্টোবর) রসায়নে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এরপর বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সাহিত্যে এবং শুক্রবার (৬ অক্টোবর) শান্তিতে নোবেলজয়ীর নাম জানা যাবে। দুদিন বিরতি দিয়ে ৯ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ীর নাম।

মূলত মোট ছয়টি বিভাগে ছয় দিনে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার ঘোষণা হয় নরওয়ে থেকে। সাহিত্য ও অর্থনীতির মতো অন্য পুরস্কারগুলো সুইডেন থেকে ঘোষণা করা হয়। নোবেল পুরস্কার ঘোষণার ক্ষেত্রে খুবই গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়। যে বা যারা এ পুরস্কার পান— আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাত্র কয়েক মিনিট আগে তাদের এ ব্যাপারে অবহিত করা হয়।

বিডিনিউজ ইউরোপ/৪অক্টোবর/জই/নোবেল